নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ জানুয়ারি, ২০২২

কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার ৩২ শতাংশের ওপরে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আগেই জারি করা হয়েছে ১১ দফা বিধিনিষেধ। কিন্তু তা কোথাও মানছে না কেউ; মানাতেও তৎপরতা নেই মাঠ প্রশাসনের।

বাজার, শপিংমল, গণপরিবহন বা রাজপথ। রাজধানীর বর্তমান চিত্র দেখে বোঝার উপায় নেই দেশে আবারও বেড়ে চলেছে করোনার সংক্রমণ। স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও উদাসীন সবাই। সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। গণপরিবহনে চলাচল কিংবা হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু নিয়মনীতি বেঁধে দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দফা নিষেধাজ্ঞার এক সপ্তাহের বেশি সময় পরও বাস, ট্রেন বা লঞ্চে চোখে পড়েনি বিধিনিষেধের বালাই। হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসছে পানাহারের আড্ডা। মার্কেট-শপিংমলে হরদম বিকিকিনি চলছে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই। এমন পরিস্থিতিতে দেশে ওমিক্রনের কারণে বেড়ে যাওয়া করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে স্বাস্থ্যবিধিই একমাত্র পথ বলে মনে করেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর।

ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ বেড়ে যাবে এবং হাসপাতালগুলো রোগীর চাপ নিতে পারবে না। আগে সপ্তাহে রোগী ছিল ৩০০, এখন ৫০ হাজার। এদের যদি ২ শতাংশ রোগীও হাসপাতালে ভর্তি হয়, তাহলেই তো চাপ অনেক। আইসিইউগুলোয় এখন যেসব রোগী আছে, ওমিক্রন আরো বাড়লে আইসিইউতেও চাপ বাড়বে। তখন আইসিইউ না পেলে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়বে। এ ছাড়া ভাইরাস এত বেশি সার্কুলেশনে থাকলে যেকোনো সময় নতুন ভ্যারিয়েন্ট চলে আসতে পারে। তাই স্বাস্থ্যবিধি কঠিনভাবে মানতে হবে। শুধু সরকারি কর্মসূচির ওপর নির্ভর করলে হবে না, ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেক মানুষকে সচেতন হতে হবে।

বাসেই বেশি উদাসীনতা : বৃৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ২টায় বনশ্রী থেকে যাত্রী তুলছিল আসমানী পরিবহন। এ বাসটিতে সব আসন পূর্ণ হওয়ার পরে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীর সংখ্যাও কম ছিল না। আবার বেশিরভাগ যাত্রীর মুখেই ছিল না মাস্ক। একজন আরেকজনের গাঘেঁসে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে বাসটির চালক ও তার সহকারীর মাস্ক ছিল। ওই বাসের এক যাত্রী বলেন, বাসটিতে পা ফেলার জায়গা ছিল না। তবুও বিভিন্ন স্থান থেকে গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা হয়েছে। বেশিরভাগ যাত্রীর মুখে মাস্ক নেই।

এসব বিষয়ে কথা বলতে একাধিক পরিবহন মালিককে ফোন দিয়ে সাড়া মেলেনি। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদেরও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রেলস্টেশনেও উদাসীনতা : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে ট্রেনের অর্ধেক টিকিট বিক্রি করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ ছাড়া আসন ছাড়া স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রিও বন্ধ রয়েছে। তবে আন্তঃনগর ট্রেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে টিকিট বিক্রি করলেও কমিউটার ট্রেন যাত্রী বোঝাই করে যাচ্ছে।

দেখা যায়, আন্তঃনগর ট্রেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে। তবে তিতাস কমিউটার ট্রেনে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে গাদাগাদি করে যাত্রী উঠেছে ট্রেনটিতে। অধিকাংশ যাত্রীকে মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধিও।

কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারোয়ার বলেন, ‘যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কমিউটারগুলোতে লোকাল যাত্রী যাতায়াত করে। ফলে অনেক সময় যাত্রীর চাপ বেড়ে যায়। ঢাকা থেকে কম যাত্রী নিয়ে ট্রেনগুলো ছাড়লেও পরের স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের মানানো সম্ভব হয় না। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যাতে এখানেও শৃঙ্খলা আসে।’

হোটেল-রেস্তোরাঁয় স্বাস্থ্যবিধিতে অনীহা : হোটেল-রেস্তোরাঁয় টিকার সনদ দেখানো বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। সেই মতো হোটেলগুলোর সামনে টিকার সনদ বাধ্যতামূলক লেখা থাকলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না; বরং গাদাগাদি করে বসে খাওয়ানো হচ্ছে।

কারওয়ান বাজার রুচিতা হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, ৩০-৩৫ জন বসে রেস্তোরাঁটিতে খাবার খাচ্ছেন। অনেকেই খাবারের জন্য অপেক্ষা করছেন। প্রবেশের সময় কারো টিকা সনদ যাচাই করা হয়নি। বসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধিও মানা হয়নি।

জানতে চাইলে হোটেলের এক কর্মচারী বলেন, ‘প্রথম দিকে টিকার সনদ চাইলে অনেক কাস্টমার খ্যাপে যেত। কারণ আমাদের সব কাস্টমার আশপাশের অফিসের বা ব্যবসায়ী। তাই কাস্টমার ধরে রাখতে টিকা সনদ চাওয়া হয় না।’

একই অবস্থা দেখা গেছে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোড, গুলিস্তান, পল্টন, বাংলামোটর, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকার রেস্তোরাঁয়। এসব এলাকার রেস্তোরাঁগুলোয় শ্রমিকদেরও স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গনি বলেন, ‘সরকারি নিয়ম পুরো মেনে চললে আমরা ৮০ শতাংশ কাস্টমার হারাব। করোনায় অনেক হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আবার বিধিনিষেধের কারণে নতুন করে ক্ষতির মুখে পড়েছে এ খাত। তাই আমাদের মৌখিক নির্দেশনা- যতটুকু পারা যায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দিতে হবে।’

শপিংমলে ভিড় : বিধিনিষেধের শর্তে শপিংমলে প্রবেশে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরা এবং প্রবেশদ্বারে ক্রেতাদের স্যানিটাইজ করার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবাজার ঘুরে দেখা যায়, মার্কেটের ভেতরে, ফুটপাতে ও সড়কে হকারদের দোকানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। মার্কেটের কোনো প্রবেশদ্বারে নেই জীবাণুনাশক টানেল। প্রবেশের সময় ক্রেতাদের মুখে মাস্ক থাকলেও ভেতরে গিয়ে অনেকেই তা খুলে ফেলছেন। বিক্রেতাদেরও একই অবস্থা। বেশিরভাগ বিক্রেতার গলায় ঝুলছিল মাস্ক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close