সংসদ প্রতিবেদক

  ২৮ জানুয়ারি, ২০২২

ইসি গঠনে আইন পাস

স্বাধীনতার ৫০ বছর পর জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে বহুল আলোচিত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’। পাসের আগে ওই বিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) নিয়োগের জন্য গঠিত সার্চ কমিটিতে রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুই বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন নারী রাখার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সার্চ কমিটির কাজ ১০ দিনের স্থলে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করার বিধান রাখা হয়েছে। এ দুটিসহ বিলে সংসদ সদস্যদের মোট ২২টি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে বিলটি সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। এরপর তিন ঘণ্টার আলোচনা শেষে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা। তবে তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে বিলের ওপর সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন জাতীয় পার্টি, বিএনপি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্যরা। যার মধ্য থেকে ২২টি প্রস্তাব গৃহীত হয়।

অধিবেশনে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সার্চ কমিটিতে দুজন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন নারী রাখার প্রস্তাব দেন। আইনমন্ত্রী সে প্রস্তাব গ্রহণে সায় দিলে, সংসদ তা ভোটে গ্রহণ করে। অর্থাৎ, ইসি গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নাম সুপারিশের জন্য যে সার্চ কমিটি থাকবে সেখানে একজন নারী থাকবেন।

সংসদে উত্থাপিত বিলে বলা হয়েছিল, রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন, যার সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক। সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক। এখন রাষ্ট্রপতির মনোনীত ওই দুজন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন নারী রাখার বিধান যুক্ত হয়েছে।

বিলে সার্চ কমিটির কাজ ১০ কার্যদিবস করার বিধান রাখা হয়েছিল। সেটি এখন ১৫ কার্যদিবস করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির মো. ফখরুল ইমামের এ সংক্রান্ত সংশোধনী সংসদ গ্রহণ করেছে। ফখরুল ইমামের মোট ৭টি সংশোধনী গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান, মুজিবুল হক চুন্নু ও পীর ফজলুর রহমান এবং বিএনপির রুমিন ফারহানার ৩টি করে সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এছাড়া জাপার কাজী ফিরোজ রশিদ ও জাসদের হাসানুল হক ইনুর একটি করে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ শেষে আইনমন্ত্রী বলেন, এই বিলে যতগুলো সংশোধনী গ্রহণ করেছেন, এর আগে কখনো এত বেশি সংশোধনী কোনো বিলে গ্রহণ করা হয়নি।

পাস হওয়া বিলটি সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে। রাষ্ট্রপতি সই করার পর গেজেট আকারে প্রকাশ হলেই প্রথমবারের মতো সিইসি ও ইসি নিয়োগে আইন পাবে বাংলাদেশ। এর আগে গত রবিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর তা অধিকতর পরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বিলের দুটি ধারায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনসহ পাসের সুপারিশ করে গত বুধবার সংসদে প্রতিবেদন জমা দেয় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

বিল পাস নিয়ে বিরোধী দলের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী :

পাস হওয়া ইসি গঠন আইনে কাউকে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটির ওই পথে হাঁটে না। ইনডেমনিটি কথা শুনলেই আওয়ামী লীগের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। বিএনপি ইনডেমনিটি দিয়ে আমাদের রক্তক্ষরণ করিয়েছে। এই আইনে লিগ্যাল কাভারেজ দেওয়া হয়েছে। এই আইনের মধ্যে কেউ অন্যায় করে থাকলে তাকে প্রটেকশন দেওয়া হয়নি।

এর আগে বিলের উপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দল জাপা ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা বিলে ইনডেমনিটির বিধান রাখার অভিযোগ করেন। এছাড়া খসড়া আইনটি ‘তড়িঘড়ি করে’ আনা হয়েছে বলেও দাবি করেন তারা।

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, এটা তড়িঘড়ি করে করা আইন নয়। বর্তমান কমিশনের মেয়াদের মধ্যে আইন করা সম্ভব নয়, এটাও বলেছি। কারণ আমি বলেছিলাম করোনাকালে সীমিত সময়ের জন্য সংসদ বসে, এর মধ্যে এই আইন পাস করা কঠিন হবে। সংসদকে শ্রদ্ধা জানিয়েই এটা বলেছিলাম।

তিনি বলেন, ‘সুজনের একটি প্রতিনিধি দল আমার কাছে গিয়ে আইনের একটি খসড়া দিয়ে পাসের প্রস্তাব করেন। আমি আইনটি পাস করার জন্য সময় লাগবে বলে তাদের জানাই। তারা অর্ডিন্যান্স করে এটা করার প্রস্তাব দেন। আমি বললাম সংসদকে পাস কাটিয়ে এই আইন করব না। সংসদে নেওয়া ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এই আইন আমরা করব না।’

আইনমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যেসব দল সংলাপ করেছে এবং যারা যাননি তারা সবাই নতুন আইনের মাধ্যমে ইসি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। গত ১৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ করে। রাষ্ট্রপতি আইনের বিষয়ে তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। এরপর বিলটি আনা হয়েছে। এ আইনের কথা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ হয়, তখনই এই আইনের বিষয়ে কথা হয়েছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী এই আইনটি করার জন্য বলেছিলেন।

তিনি আরো বলেন, এই আইন করার প্রক্রিয়া শুরুর পর যারা বাইরে কথা বলেন, তাদের আন্দোলন সৃষ্টির চেষ্টার যে টুলস বা মসল্লা সেটা আর থাকেনি। সেজন্যই তারা উঠেপড়ে লেগেছেন, এটা তড়িঘড়ি করে কেন করছেন। তারা বলছেন, এটা ইসি করার আইন হয়নি। সার্চ কমিটি গঠন করার আইন হয়েছে।

আইনে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ইসি গঠনে সার্চ কমিটি গঠনের বিষয়ে ২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলো সম্মত হয়েছিল। তখন থেকেই এই সার্চ কমিটির ধারণা এসেছে। এটা কল্পনা থেকেও আসেনি। সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত দুই কমিশন হয়েছে। যার কারণে এটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ফলে জনমত যাচাই তো দশ বছর ধরে হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, দুজন বিশিষ্ট নাগরিক কারা হবে, সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে। আমরা তো আইনে কোথাও বলিনি, সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে তাদের নিয়োগ দেওয়া যাবে না। বিশিষ্ট নাগরিকের ক্রাইটেরিয়া তো বলে দেওয়া হয়নি। আমরা শুধু রাষ্ট্রপতিকে এই সুযোগটি দিয়েছি।

বিএনপির এমপিদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির জবাবে মন্ত্রী বলেন, উনারা তো তালগাছ চান। উনারা কিছুই মানেন না যতক্ষণ তালগাছটা উনাদের না হয়। এই সংসদই বলেছিল তত্ত্ববধায়ক সরকার হবে তিন টার্মের জন্য। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে মামলা হলে কোর্ট দুটি বিধানকেই অবৈধ ঘোষণা করে। তারপরও উনারা এটার কথা বলবেন। উনারা আদালতের রায়ও মানেন না। উনাদের কথা হলো যেটা কায়দে আজম মোহাম্মদ আলী করেছেন সেটা ভালো। কিন্তু যুদ্ধ করে জাতির পিতা যেটা করে দিয়েছেন সেটা ভালো না।

বিএনপির এমপিদের ঐকমত্যের দাবির প্রসঙ্গে আনিসুল হক বলেন, ঐকমত্য করতে হলে উনাদের সত্যকে স্বীকার করতে হবে। আর সত্যটি হচ্ছে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সত্য হচ্ছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট উনারা মানে বিএনপি বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। সত্য হলো- উনারা ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে দেননি। খুনিদের পুনর্বাসিত করেছেন। এসব সত্য মেনে জনগণের কাছে মাফ চাইলে আমরা ঐকমত্যে আসব।

সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত আগের দুই কমিশনকে হেফাজতের প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ইনডেমনিটি আর লিগ্যাল কাভারেজ এক কথা নয়। ইনডেমনিটি হচ্ছে অন্যায় করার পরে তাকে প্রটেকশন দেওয়ার জন্য আইন করা। লিগ্যাল কাভারেজ হচ্ছে যেকোনো বৈধ কাজ যেটার লিগ্যাল কাভারেজ ছিল না সেটা তার আওতায় আনা।

বিলের ওপর আলোচনায় বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা :

বিএনপির সংসদীয় দলের নেতা মো. হারুনুর রশীদ আইনটি পাসকে সরকারের কূটকৌশল আখ্যা দিয়ে বলেন, ২০১৪ সালে বিনা ভোটের নির্বাচন হয়েছে, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে আগামীতে দিনের বেলা নতুন কৌশলে নির্বাচন করবে কি না, তা নিয়ে মানুষের প্রশ্ন আছে।

তিনি বলেন, সংবিধানে বলা আছে নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব ইসিকে সহায়তা করা। কিন্তু না করলে কী হবে তা বলা নেই। এসব নিয়ে একটি পুরো আইন হওয়া উচিত। জনগণ মনে করে সরকার আইন করার নামে তাদের সঙ্গে প্রহসন করছে। এই আইনটির সঙ্গে ২০১৭ সালের সার্চ কমিটির প্রজ্ঞাপনে খুব একটা অমিল নেই। কোনো আইন মানুষের অকল্যাণে হলে তা করার থেকে না করাই ভালো। সার্চ কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির যোগ্যতা একটি তা হচ্ছে সরকারের অনুগত হওয়া। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সার্চ কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হলে তাদেরও বিতর্কিত করা হবে। তাছাড়া এখন যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তাতে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে আলোচনার দাবি জানান তিনি।

বিএনপির আরেক সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য। স্বাধীনভাবে রাষ্ট্রপতি কোনো কাজ করতে পারেন না। কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে একটি ইল্যুশন হিসেবে সামনে আনা হয়। আওয়ামী লীগও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করেছিল। তখন রজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থার ঘাটতি ছিল। এখন সে ঘাটতি আরো বেড়েছে। জাতীয় থেকে স্থানীয় সব নির্বাচন মাগুরার নির্বাচনের চেয়ে খারাপ হয়। সুতরাং ৯৬ সালের চেয়ে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আরো বেশি দরকার। তিনি আরো বলেন, আদালত বলেছিল সংসদ চাইলে আরো দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। সংবিধান সংশোধন কমিটিতে সব দল এই ব্যবস্থা রাখার পক্ষে মত দিয়েছিল। পরে অজানা কারণে এটি বাতিল করা হয়। এখন যে পরিস্থিতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনই সম্ভব না।

রুমিন ফারহানা বলেন, ইসি গঠনে সংবিধানে আইন করার কথা বলা আছে কিন্তু অংশীজনের সঙ্গে কথা না বলে তাড়াহুড়ো করে আইন করা আইওয়াশ ছাড়া কিছুই নয়। এই আইনটি শুধু বিএনপি নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা কঠোর সমালোচনা করেছেন। এটাকে ইসি গঠনের আইন না বলে অনুসন্ধান কমিটি গঠনের আইন বলা যেতে পারে।

তিনি আরো বলেন, সার্চ কমিটিতে সরকারি দল, সংসদের প্রধান বিরোধী দল ও তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন করে প্রতিনিধি থাকলে স্বচ্ছতা থাকত। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে শুধু সরকারের ইচ্ছায় ইসি গঠন হবে। ওই কমিশন স্বাধীন হবে না, হবে সরকারের নির্বাচন বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন না করে এই আইন করা হলে তা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। এই আইনে প্রস্তাবিত সার্চ কমিটির সদস্য নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের ভূমিকা রাখার বিধান যুক্ত করার দাবি করেন তিনি।

জাপার শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে শ্যাল শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়েই কাজ করতে হবে। আইনে না থাকলেও যেটা হবে তা হলো, অনুসন্ধান কমিটি ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। সে প্যানেল যাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি পাঁচজন নির্বাচন করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দেবেন। তবে এটা যে অসাংবিধানিক তা নয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারণে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়েছে জাপাকে। এটি একটি অসাংবিধানিক ফর্মুলা বলে উল্লেখ করেন জাপার কাজী ফিরোজ রশীদ। আইনটি প্রণয়ন ভালো উদ্যোগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেরিতে হলেও আইনটি হচ্ছে। অনেকে আইনটিকে তড়িঘড়ির কথা বলেছেন। তবে এর আগে তো বলা হয়েছিল ১৫ দিনে এই আইন করা সম্ভব। তাহলে তড়িঘড়ির প্রশ্ন আসছে কেন? সার্চ কমিটির সদস্য সংসদ থেকে এলে বিতর্ক হতো না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বর্তমান নির্বাচন কমিশন শতভাগ আমলানির্ভর উল্লেখ করে জাপার মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বাংলাদেশে কী বিচারপতি ও আমলা ছাড়া বিশ্বাস করার মতো কেউ নেই? রাজনীতিবিদ বা সংসদ সদস্যদের কী বিশ্বাস করা যায় না? আওয়ামী লীগ এত বড় রাজনৈতিক দল, বলেন আপনাদের জন্ম ক্যান্টনমেন্টে হয়নি তাহলে আপনারাও কেন বিচারপতি ও আমলার ওপর নির্ভর করবেন? সাবেক সিইসি এ টি এম শামসুল হুদার বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যে আমলা এরশাদ, বিএনপি, আওয়ামী লীগ সব সরকারের আমলে আরামে চাকরি করেছেন, পরে চাকরি শেষে আবার পাঁচ বছরের জন্য সিইসি হয়েছেন। তারা ওপরেরটা খান নিচেরটাও খান। স্পিকারের মাধ্যমে মনোনয়নে ?দুজন সংসদ সদস্যকে সার্চ কমিটির সদস্য হিসেবে রাখার প্রস্তাব করেন তিনি।

জাপার রওশন আরা মান্নান বলেন, আলোচনা ছাড়া তাড়াহুড়ো করে আইনটি পাস করলে দেশে আবারও অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। আশ করব স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বজায় রেখে সরকার সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে ইসি গঠন করবে। তাহলে দেশটি শান্ত থাকবে।

পীর ফজলুর রহমান বলেন, আইনটি নিয়ে সংসদের ভেতরে ও বাইরে যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করলে আরো সমৃদ্ধ হতো। এই আইনে বিগত দুটি কমিশনকে যে হেফাজত দেওয়া হয়েছে এটার দরকার ছিল না।

গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা নেই। এই ইসির সুবিধাভোগী ছাড়া সবাই বলবে তারা ব্যর্থ। সরকারের আকাক্সক্ষার বাইরে কিছু করতে পারে না কমিশন। তিনি বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে গিয়ে যে আইন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি, এই আইনে তার প্রতিফলন ঘটেনি। আইনটিতে বঙ্গবন্ধুর আকাক্সক্ষার সঙ্গে মিল নেই।

সরকারের শরিক দলের সদস্যরা যা বললেন :

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বিএনপি আইন নয় সরকারের উৎখাত চায়। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে লাভ নেই। তিনি বলেন, এর আগে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, আইনটি করার জন্য সময় প্রয়োজন। এই আইনটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন উত্থাপন হয়েছে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। তিনি নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করেন। অনুসন্ধান কমিটি যে নামগুলো দেবে সেগুলো জাতীয় সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, এটা হলে তা অনেক ইনক্লুসিভ হবে। এছাড়া অনুসন্ধান কমিটি যে নামগুলো প্রস্তাব করবে সেগুলো অন্তত প্রকাশ করতে হবে। এরপর জনমত বিবেচনা করে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন। এমন ব্যবস্থা রাখার দাবি জানান তিনি।

সংশোধনী প্রস্তাব দিয়ে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তারা একটি অস্বাভাবিক সরকার আনতে চায়। তাদের এমপিরা এখানে সংশোধনী প্রস্তাব দিলেও বিএনপি নেতারা এরই মধ্যে নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচনের আগেই ক্ষমতা নিশ্চিত করা তাদের উদ্দেশ্য।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অনেক ফাঁক-ফোকর ছিল, এর মধ্য দিয়ে ইয়াজউদ্দীনকে ক্ষমতায় এনে নির্বাচন করতে চেয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ছুতোয় বিএনপি একটি অস্বাভাবিক সরকার গঠন করতে চায়। অনুসন্ধান কমিটি যে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে তাদের নাম ঠিক করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি অনুসন্ধান কমিটিকে কোনো পরামর্শ দিতে পারবেন না, এমনটি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।

ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, যারা দ্রুত আইন দাবি জানিয়েছিলেন আইনটি করার উদ্যোগ নেওয়ার পর তারাই আবার উল্টে গেলেন। তিনি অনুসন্ধান কমিটি যেসব নাম প্রস্তাব করবে সেগুলো জাতীয় সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটিতে পাঠানোর বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব দেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close