হাসান ইমন

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২২

ডিএনসিসির নতুন ১৮ ওয়ার্ড

সেবা পাবে ২০ লাখ বাসিন্দা

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) যুক্ত হওয়া সমস্যায় থাকা ১৮ ওয়ার্ডের ২০ লাখ বাসিন্দা অবশেষে সেবা পেতে যাচ্ছে। আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন এই প্রকল্প। তবে এর আগে এসব ওয়ার্ডের কাজ শুরু হবে বলে জানান কর্মকর্তারা। সাড়ে তিন বছরমেয়াদি এ প্রকল্পে থাকছে ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকা। তবে পরিকল্পিতভাবে তৈরি করতে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা লাগবে বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা।

কর্মকর্তারা জানান, ডিএনসিসির নতুন ১৮ ওয়ার্ডকে নিয়ে অ্যাকশনপ্ল্যান করেছে সংস্থাটি। পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করতে এই উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি। এই প্ল্যানে রাস্তা, ড্রেনেজ ও সুয়ারেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসাকেন্দ্র, শরীরচর্চা কেন্দ্র, গ্রন্থাগার, কমিউনিটি সেন্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জাদুঘর ও নাট্যমঞ্চ, খেলার মাঠ, পার্ক, পশু জবাইখানা, গণশৌচাগারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই প্ল্যান অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু হচ্ছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছুটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে জমি অধিগ্রহণ ও ভবন উচ্ছেদ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছে তারা।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় নতুন ওয়ার্ডে ১৮২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ও ফুটপাত উন্নয়ন করা হবে। এরই মধ্যে প্রধান সড়কগুলো চার লেনের সড়ক হবে ১০টি। সবগুলো রাস্তা পূর্ব-পশ্চিমমুখী হবে। যার দূরত্ব হবে ৩৩ কিলোমিটার। দুই লেনের সড়ক হবে ৪০ কিলোমিটার। বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ইন্টারনেট, কেবলসহ অন্যান্য তার মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।

এজন্য নির্মাণ করা হবে ৯৭ কিলোমিটার ইউটিলিটি ডাক্ট (টানেল)। এই খাতে ব্যয় হবে ৭৪৩ কোটি ৬৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া ২৩৩ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হবে। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৫১ কোটি ২২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ওয়ার্ডগুলোতে ১৩টি খাল রয়েছে। খালগুলো হলো- স্মৃতিভোলা খাল, গজারিয়া, বাগারপুল, বাঙলাবান্ধা, জিয়া, সমুদ্র, ডুমনি, বেরাইদ, সেনতি, বগুরখালি ও শত বেরাইদ খাল। এসব খালের দৈর্ঘ্য ২৮ দশমিক ৫১ কিলোমিটার। এই খালগুলোর উভয় পাশে ৫৮ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার সাইকেল লেন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২ কোটি ৫৬ লাখ ছয় হাজার টাকা। এ ছাড়া ১২ হাজার ২১৮টি এলইডি বাতি স্থাপন করা হবে। এতে ব্যয় হবে ১২০ কোটি ২৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। আর জমি অধিগ্রহণ করা হবে ৬৯ দশমিক ৪৮ একর। যার পেছনে ব্যয় হবে ১ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা, যা প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক। আর এসব উন্নয়নকাজ হবে ১১৪ বর্গকিলোমিটার এলাকার নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে। নতুন ১৮ ওয়ার্ডকে পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে।

ডিএনসিসি জানিয়েছে, মাস্টারপ্ল্যানে রাজউকের ডিটেইল এরিয়াপ্ল্যান (ড্যাপ), ড্রাফট স্ট্রকচারপ্ল্যান (২০১৬-৩৫), ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ, সুয়ারেজ ও ওয়াটার মাস্টারপ্ল্যান, ঢাকা যানবাহন কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনাগুলো (আরএসটিপি) পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে যেন কোনো কিছু সাংঘর্ষিক না হয় সে বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

ডিএনসিসি জানিয়েছে, পুরো মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নতুন এলাকা গড়ে তুলতে হলে ২৬ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। প্রাথমিকভাবে ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে প্রায় ৮০ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। ডিএনসিসির তহবিল থেকে আরো ২০০ কোটি টাকা দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে।

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ‘নতুন ওয়ার্ডের কাজ খুব দ্রুত শুরু হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই মাসে সময় চেয়েছি। তিনি সময় দিলে উদ্বোধন হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে নতুন ওয়ার্ডগুলোতে আধুনিক সুযোগণ্ডসুবিধা নিশ্চিত করা যাবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করবে।’

প্রকল্পটির চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আসলে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব এলাকার রাস্তাগুলো অনেক সরু। সরকারি খাসজমির মালিকানার রেকর্ড ব্যক্তিনামেও উঠে গেছে। এজন্য অনেক আইনি ঝামেলাও মোকাবিলা করতে হতে পারে। তবে যতই চ্যালেঞ্জ আসুক আমরা প্রকল্প বাস্তবায়ন করবই। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যেসব এলাকা অধিগ্রহণ করতে হবে তার জন্য জেলা প্রশাসককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাবেন। সুতরাং কেউ সংক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close