reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৫ জানুয়ারি, ২০২২

রাজনীতি এখন নির্বাচনমুখী

প্রস্তুতি আওয়ামী লীগে

চলছে স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচন ঘিরে সরগরম রাজনীতি, তৃণমূলে উৎসবের সঙ্গে ঘটছে সংঘাতও। এরই মধ্যে রাজনীতির পাল উড়তে শুরু করেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়ায়। প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে। দলগুলোতে এখন নির্বাচনের পথে হাঁটার চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে চলছে রাষ্ট্রপতির সংলাপ। এসব নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন বদরুল আলম মজুমদার ও জিয়াউদ্দিন রাজু

করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি ও সরকারের বিধিনিষেধ বিবেচনায় রেখেই সাংগঠনিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে কাজ করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট সংকট কাটিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন করাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে ক্ষমতাসীন এই দল। তাছাড়া দুদিন বাদে হতে যাওয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের পর সাংগঠনিক আটটি টিমও এ বিষয়ে কাজ শুরু করবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চলমান ইউপি নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে বিভিন্ন সংকট তৈরি হয়, যা সংগঠনের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। দল মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতা করে বিদ্রোহী প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে অনেক জায়গায় দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। এর পেছনে দলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা এমনকি এমপি, মন্ত্রীরাও রয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। তাছাড়া ইউপি নির্বাচন ঘিরে এই বিভক্তির কারণে বিভিন্ন স্থানে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষেরও ঘটনা ঘটে। এতে হতাহত হন প্রার্থীসহ অনেকেই। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এসব ঘটনা দলের শৃঙ্খলা ও ঐক্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে নীতিনির্ধারকদের আশঙ্কা। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে আগে এ সমস্যা সমাধান করে ঐক্য ফিরিয়ে এনে সংগঠনকে আরো সুসংহত করা জরুরি মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক প্রার্থীর পরাজয়ের পেছনে বিদ্রোহী প্রার্থী ছাড়া আর যেসব কারণ রয়েছে সেগুলোও অনুসন্ধান ও বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে দলের নীতিনির্ধারকরা জানান।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দলের তৃণমূলকে নির্বাচনের আগে চাঙ্গা করে তুলতে হবে। নির্বাচনের আগে মহামারি করোনার কারণে থেমে থাকা জেলা-উপজেলার সম্মেলনের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। নতুন বছরে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরালো করার ব্যাপারে দলে আলোচনা চলছে।

তাছাড়া চলমান নির্বাচন শেষ হলে আমাদের সাংগঠনিক টিম সারা দেশে সাংগঠনিক সফর করবে। এ সফরে জেলা-উপজেলার সম্মেলন ও তৃণমূলে যে সব সমস্যা রয়েছে সেসব বিষয় উঠে আসবে। সাংগঠনিক নেতাদের সফরের প্রতিবেদন দেখে নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে আলাচনা করে উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর ফলে জাতীয় নির্বাচনে তৃণমূলের কোন্দলের কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ, সাংগঠনিক সফর শুরু হলে কোন্দল থাকবে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানেন কখন ঐক্যবদ্ধ হতে হয়।

দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, চলতি বছরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত তিন বছর অন্তর সম্মেলনের সাংগঠনিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও ওই সম্মেলনের আগে মাত্র তিনটি জেলা সম্মেলন হয়। তখন অধিকাংশ জেলারই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। এরপর ২০২০ সালের শুরুতে সব পর্যায়ে সম্মেলনের কাজ শুরু করলেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে গত প্রায় দুই বছর রাজনৈতিক কার্যক্রম অধিকাংশ সময়ই বন্ধ এবং কখনো সীমিত পরিসরে চলে। যার ফলে সম্মেলন কার্যক্রম পুরোপুরি এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এর মধ্যেও কয়েকটি জেলা-উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ে কয়েকটি সম্মেলন হয়েছে। আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অধিকাংশ জেলা সম্মেলনই বাকি রয়েছে। উপজেলা, থানা ও পৌরসভা কমিটি রয়েছে ৬৫০টি। এর মধ্যে ৪৫০টি কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির মধ্যে কোনো কোনোটির ৮, ১০ বছর বা এক যুগও পার হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বছর ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের তিন বছরের মেয়াদ শেষ হবে। এই সময়ের আগেই তৃণমূল থেকে শুরু করে দলের উপজেলা, জেলা পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন শেষ করা হবে। দ্রুতই এ কার্যক্রম শুরু হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বছরের মধ্যেই তৃণমূল পর্যায় থেকে দল গোছানো, সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করা হবে। দলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে ঐক্যকে আরো সুদৃঢ় করা হবে। যেসব জায়গায় নেতাকর্মীর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে, দ্বিমত, দ্বিধা-বিভক্তি আছে সেগুলো মিটিয়ে ফেলা হবে। মতপার্থক্য, বিরোধ মিটিয়ে দলীয় শৃঙ্খলাকে আরো সুসংহত করা হবে। করোনার কারণে সাংগঠনিক কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেসব জায়গায় কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে সেসব জায়গায় সম্মেলনগুলো জাতীয় সম্মেলনের আগেই শেষ করা হবে। সরকারের ধারাবাহিকতা যাতে থাকে সে জন্য এ সব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দলকে আরও শক্তিশালী করা এবং মানুষের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করে নির্বাচনে বিজয়কে নিশ্চিত করা হবে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে সবাই ঐক্যবদ্ধ হবে বলে আশাও প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। তিনি বলেন, সারা দেশে সমাবেশের নামে বিএনপির নেতাকর্মীরা যে তান্ডব চলিয়ে যাচ্ছে এতে করে দেশে তারা আবারও আগুন সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চায়। সামাবেশে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে তারা তাই প্রমাণ করেছে। কিন্তু তাদের আর সুযোগ দেওয়া হবে না। আগেও আমাদের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ ছিল, এখনো আছে। যা বিএনপির মধ্যে নেই। ফলে তাদের আন্দোলন সফল হয় না। তাই তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close