নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ নভেম্বর, ২০২১

বাসে ধর্ষণের হুমকি

আলটিমেটাম দিয়ে সড়ক ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা

হাফ ভাড়া দিতে চাওয়ায় এক শিক্ষার্থীকের ধর্ষণের হুমকি দেওয়ায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা বাসচালকের সহকারীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আলটিমেটাম দিয়ে সড়ক অবরোধ তুলে নিয়েছেন। গতকাল রবিবার দুপুর ১২টার দিকে তিন দফা দাবির কথা জানিয়ে তারা আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।

গত শনিবার রাজধানীর শনির আখড়ায় ঠিকানা পরিবহনের একটি বাসে বদরুন্নেসা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী অর্ধেক ভাড়া দিতে চান। কিন্তু চালকের সহকারী হাফ ভাড়া নিতে অস্বীকৃতি জানায়। একপর্যায়ে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দেয় বাসচালকের সহকারী। এর প্রতিবাদে গতকাল সকাল ৯টার দিকে কলেজ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করতে থাকেন বদরুন্নেসার শিক্ষার্থীরা। ঘণ্টাখানেক সময় ভেতরে বিক্ষোভ করার পর তারা বকশীবাজার মোড় অবরোধ করেন। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলে স্লোগান দেন তারা। ‘হাফ পাস আমাদের অধিকার’, ‘এই হলো দেশের কঠোর বাস্তবতা, নিজের অধিকার চাইতে মেলে ধর্ষণের বার্তা’ প্রভৃতি লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল তাদের হাতে। শিক্ষার্থীদের দাবি- ধর্ষণের হুমকিদাতা হেলপারকে গ্রেপ্তার করে বিচার করতে হবে, সব গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিশ্চিত করতে হবে, কলেজের সামনে যাত্রী ছাউনি দিতে হবে, সাইনবোর্ড পর্যন্ত বাস সার্ভিস দিয়ে দিতে হবে বেগম বদরুন্নেসা কলেজের সামনে বাসের সংখ্যা, রোড সংখ্যা ও টিপ সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে এবং বাসে নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন হয়রানি বন্ধ করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে নিরাপত্তা।

আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘একটা মেয়ে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হলো, মাঝেমধ্যেই লাঞ্ছিত করে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। আমরা কেন এটা মানব? কোনো শিক্ষার্থীর ক্ষতি হলে কে দায় নেবে?’ তিনি আরো জানান, দাবি আদায় না হলে তারা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াবেন না।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বাসের হেলপাররা ভাড়াও বেশি রাখে, আবার নানাভাবে হেনস্তাও করে প্রতিনিয়ত। আমাদের কলেজের সামনে থেকে বাসে ওঠাতে চায় না। গেট বন্ধ করে রাখে। এসব কারণেই আমরা আন্দোলনে নেমেছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিকুন নাহার বলেন, ‘কলেজের একজন শিক্ষক ফোনে আমাকে ছাত্রী হেনস্তার বিষয়টি জানিয়েছেন। তারা কলেজ প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। আমরা চাই না তারা ঝামেলা করুক। আমরা ঠিকানা বাসের মালিককে আসতে বলেছি। এটা কলেজের কোনো ঝামেলা না। বাইরের বিষয়। আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। বাইরে থেকে কেউ আমাদের কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করছে বলে ধারণা করছি।’

চকবাজার থানার ওসি মো. আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘ছাত্রী হেনস্তার বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলে বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও হোসেনি দালানসংলগ্ন সড়কগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরাতে চেষ্টা চালাতে থাকে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত তিন দফা দাবির কথা জানিয়ে দুই ঘণ্টা পর সড়ক থেকে সরে যান শিক্ষার্থীরা।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতারা বলেন, গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস (অর্ধেক ভাড়া) নিশ্চিত করতে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়া আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার্থী-নির্যাতন ও হাফ পাসের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি।

সমাবেশ থেকে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের হাফ পাসের আন্দোলনে ছাত্র অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও লাঞ্ছনার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস নিশ্চিত করতে হবে। এটি না করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর আবার হামলা হলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা রাজপথে নামব।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close