নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ নভেম্বর, ২০২১

৮৭ শতাংশ বাস মিনিবাসে নৈরাজ্য

শৃঙ্খলা ফেরাতে উদ্যোগ

রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আসছে না কিছুতেই। সড়কজুড়ে এখনো বিশৃঙ্খলার চিত্র। ৮৭ শতাংশ বাস-মিনিবাসেই চলছে নৈরাজ্য। অদক্ষ চালকের সড়ক আইন বা ট্রাফিক ব্যবস্থা সম্পর্কে নেই স্বচ্ছ ধারণা। এতে মাঝরাস্তায় গতি কমিয়ে চলন্ত অবস্থায় যাত্রী ওঠানামা এবং কার আগে কে যাবে, চলছে তার প্রতিযোগিতা। থেমে নেই রেষারেষিও। এতে দেশকে দিতে হচ্ছে বিরাট মূল্য। বিশ্বব্যাংকের জরিপ প্রতিবেদন বলছে, ঢাকায় যানজটে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে এবং বছরে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার।

রাজধানীর প্রগতি সরণির বসুন্ধরা গেট থেকে মালিবাগের আবুল হোটেল মোড় পর্যন্ত দীর্ঘপথে বাস স্টপেজের সংখ্যা তিনটি। অথচ এ পথে চলাচলকারী বাসগুলো যাত্রী ওঠানামা করছে আট থেকে ১১টি স্থানে। এর বাইরে ইচ্ছামতো যেকোনো জায়গায় থামিয়ে যাত্রী তুলতে দেখা যায় বাসগুলোকে। অন্যদিকে একই সড়কে ‘ওয়ে বিলের’ নামেও চলেছে স্টপেজের বাইরে বাস থামানো। প্রগতি সরণিতে এ তালিকায় আছে রাইদা, আলিফ, ইকবাল, ইউনিক, ভিক্টর, আকাশসহ আরও কয়েকটি পরিবহন।

এই দৃশ্য শুধু প্রগতি সরণির নয়, রাজধানীর গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর থেকে রামপুরা, এয়ারপোর্ট রোড থেকে মহাখালী-মগবাজার-মৌচাকসহ ২৯১টি রুটে এ চিত্র নিত্যদিনের।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে চলা বাস-মিনিবাসের ৮৭ শতাংশ এ ধরনের নৈরাজ্যের শামিল। সারা দেশে ৭০ লাখ চালকের মধ্যে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) লাইসেন্স আছে মাত্র ১৬ লাখ চালকের। বাকিরা অদক্ষ। এদের সড়ক আইন বা ট্রাফিক ব্যবস্থা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নেই।

বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৩১ লাখ।

বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির তথ্য বলছে, শুধু রাজধানী ছাড়া সারা দেশে এক লাখের বেশি বাস চলাচল করে। আর রাজধানীতে চলাচল করে আড়াই হাজার কোম্পানির প্রায় ৩০ হাজার বাস।

রাজধানীর বাস সার্ভিস সিস্টেমে বিশৃঙ্খলার জন্য দুটি বিষয়কে দায়ী করেন বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। তিনি বলেন, ‘একটি হচ্ছে রাজধানীর বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশনের কাজটি এখনও সম্পন্ন না হওয়া। অন্যটি দক্ষ চালকের অভাব। তবে এসব বিষয়ে কাজ চলছে। বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশনের কাজটি শেষ হলে সড়কে সৃষ্ট এ ধরনের বিশৃঙ্খলা আর থাকবে না।’

খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, রাজধানীতে যেসব চালক গাড়ি চালান, তারা বেশিরভাগই দক্ষ না। সমিতির পক্ষ থেকে তাদের বিআরটিএর মাধ্যমে একটা সময় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বছরখানেক এ ব্যবস্থা ছিল। এখন সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। এটি আবার চালু করতে তারা উদ্যোগ নিয়েছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘সড়কে শৃঙ্খলা আনার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশ, বিআরটিএ, সিটি করপোরেশন এবং বাস মালিক সংগঠনের, তবে সড়কে গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে প্রকৃত অর্থে তাদের কারোরই তেমন কোনো এনফোর্সমেন্ট ব্যবস্থা নেই। ফলে সড়কে প্রায়ই যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হয় বা ট্রাফিক পুলিশের নিয়মিত মামলা-জরিমানার যে উদ্যোগ আছে, তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক উত্তর) আবু রায়হান মোহাম্মদ সালেহ বলেন, ‘আমরা ট্রাফিক সিস্টেমকে নিয়মের মধ্যে রাখতে যেখানে যেখানে আইন প্রয়োগ করা উচিত, যেখানে আইন ভাঙা হয় সেখানে আইন প্রয়োগ করি। প্রতি মাসে ঢাকার পুলিশ কত টাকার মামলা দেয়, কতগুলো মামলা হয়, তার সংখ্যা ও পরিমাণ দেখলেই বুঝবেন, সেখানে আমাদের তৎপরতা কতটুকু। আমাদের সার্বিক তৎপরতা ও বিবেচনার লক্ষ্যই থাকে রাজধানীর ট্রাফিকব্যবস্থাকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা। এ লক্ষ্যে প্রতিটি জায়গাতেই আমাদের লোক থাকে; আমরা মাঠে আছি, কিন্তু আইন প্রয়োগ, মামলা, জরিমানাই সড়কে শৃঙ্খলার জন্য যথেষ্ট নয়। এর জন্য চালক ও মালিকদের সচেতনতাও জরুরি।’

রাজধানীর গণপরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে সিটি করপোরেশন, বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ ও বাস মালিকদের সংগঠনের একটি সমন্বিত উদ্যোগ চলমান রয়েছে। এর আওতায় বাস রুট নতুন করে বিন্যাস করা হচ্ছে। এতে ২৯১টি রুটের পরিবর্তে ৪২টি রুট করা হবে। এছাড়া বর্তমানে চলাচলরত আড়াই হাজার কোম্পানির প্রায় ৩০ হাজার বাসকে কমিয়ে কোম্পানির সংখ্যা ২২টিতে এবং বাসের সংখ্যা ৯ হাজার ২৭টিতে নামিয়ে আনা হবে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সড়কে বাস চলাচলের প্রক্রিয়াটি র‌্যাশনালাইজেশনের চেষ্টা চলছে। এটা অনেক দূর এগিয়েছে, তবে বাস্তবায়ন পর্যায়ে যেতে আরও কিছু সময় লাগবে। এখানে অনেক কিছু সমন্বয়ের বিষয় আছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close