ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি

  ১০ অক্টোবর, ২০২১

আজ রূপপুরে বসছে পরমাণু চুল্লি

উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল বা পরমাণু চুল্লিপাত্র বসছে আজ। একে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের হৃৎপি-ও বলা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অনুষ্ঠানে প্রকল্পের ঠিকাদার রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি রোসাটমের অন্যতম প্রধান নির্বাহী এলেক্সে লিখাচেভ উপস্থিত থাকবেন।

রূপপুর প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর জানান, রূপপুর কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেলটি রাশিয়া থেকে জলপথে ১৪ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে গত বছরের অক্টোবরে দেশে পৌঁছে। সেটি স্থাপনের জন্য ১ বছর প্রয়োজনীয় বিভিন্ন অবকাঠামো প্রস্তুত করা হয়।

রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যেখানে মূল জ্বালানি থাকে। পারমাণবিক চুল্লির পাত্রটির ওজন ৩৩৩ দশমিক ৬ টন। এই চুল্লি কৃষ্ণ সাগর এবং সুয়েজ ক্যানেল হয়ে মোংলায় এসে পৌঁছেছে। সেখান থেকে নৌপথে ঈশ্বরদীর রূপপুরে নেওয়া হয়।

পাকিস্তান আমলে এ প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি ছিল না। দেশ স্বাধীনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে সময়ের প্রেক্ষাপটে এখানে ২০০ মেগাওয়াটের একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পর এ প্রকল্প আর এগোয়নি।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনি ইশতেহারে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে। ২০১০ সালে রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিয়ে ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট হয়। একই বছর জাতীয় সংসদে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ২০১২ সালে বাংলাদেশ অ্যাটমিক এনার্জি রেগুলেটরি অ্যাক্ট পাস করা হয়। ২০১৩ সালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ধাপে ধাপে প্রকল্পটি এখন আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয় (পাবনা-৪) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাসের শহরের বাসভবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ড. ইয়াফেস ওসমান সাংবাদিকদের জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে বাঙালি নিউক্লিয়ার জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির (ক্লিন এনার্জি) মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে, যা থেকে দীর্ঘমেয়াদে পাওয়া যাবে সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য ও মানসম্মত বিদ্যুৎ।

রিঅ্যাক্টরগুলোর কার্যকাল ৬০ বছর, যা প্রয়োজনে আরও ২০ বছর চালানো যাবে। ভিভিইআর টাইপ রিঅ্যাক্টরে পাঁচস্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকবে। মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন- শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা ইত্যাদি মোকাবিলায় সক্ষম এই রিঅ্যাক্টর।

এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প এটি। ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। ঋণ হিসেবে রাশিয়া দিচ্ছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। বাকিটা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

রূপপুরের দুটি ইউনিট থেকে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে সমপরিমাণ বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close