অনিরুদ্ধ বিশ্বাস, খুবি

  ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

খুলনায় ভেজাল ওষুধ কিনে ঠকছেন শিক্ষার্থীরা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রেজওয়ান আহমেদ। কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ইসলামনগর রোডের বিসমিল্লাহ স্টোর থেকে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির সেকলো ২০ মিলিগ্রামের এক পাতা ক্যাপসুল ক্রয় করেন। ওই ওষুধ কিনে বাড়ি ফেরার পর তিনি খেয়াল করেন তাকে হুবহু স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সেকলো ২০ মিলিগ্রামের প্যাকেজিংয়ের আদলে তৈরি অখ্যাত এক কোম্পানির ‘সেলোকটিল’ ক্যাপসুল দেওয়া হয়েছে, তাকে ঠকানো হয়েছে। দেখতে একই রকম হওয়ায় তখন বিষয়টি তার নজরে পড়েনি। বিশেষজ্ঞরা জানান, এসব অখ্যাত কোম্পানির ভেজাল ওষুধ অনেক সময় নিম্নমানের ও কম কার্যকর হয়ে থাকে। এসব মানহীন ওষুধে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

খুবিসংলগ্ন ইসলামনগর রোডে লাকি ফার্মেসি, বিসমিল্লাহ স্টোর, লিকা মেডিকেল হল, সুফিয়ান স্টোর ছাড়াও ছয়টি দোকানে ওষুধ বিক্রি করা হয়। এদের মধ্যে বিসমিল্লাহ স্টোর, সুফিয়ান স্টোরসহ অনেক দোকানেরই ড্রাগ লাইসেন্স নেই। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি থাকায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী ওষুধের জন্য এসব দোকানের ওপর নির্ভরশীল। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফা লাভের আশায় অখ্যাত কোম্পানির ওষুধ বিক্রি করছেন। এমনকি লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে এমন কোম্পানির ওষধও এসব দোকানে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদিত কোনো ডিগ্রি ছাড়াই লিকা মেডিকেল হলের মালিক বীরেন্দ্র নাথ মন্ডল ও কেয়া ফার্মেসির মালিক লুৎফুর রহমান দোকানের সাইনবোর্ডে বড় বড় অক্ষরে নামের পাশে ডাক্তার পদবি বসিয়ে রেখেছেন। ফার্মেসিতে বসে রোগীদের চিকিৎসা করছেন তারা। আবার রোগী দেখে নিজেরা বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধও দিয়ে দিচ্ছেন। আরো দেখা গেছে, লিকা মেডিকেল হল- ফার্মেসিটিতে মেসার্স ইউনাইটেড কেমিস্ট কোম্পানির ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে এই কোম্পানিটির উৎপাদন লাইসেন্স বাতিল করেছে। এদিকে খুলনার বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ দমনে কয়েকবার অভিযান চালালেও খুবির আশেপাশের এলাকায় কখনো এ ধরনের অভিযান পরিচালিত হয়নি। ফলে দোকানগুলোও নির্ভয়ে এসব ওষধের রমরমা বাজার গড়ে উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মহসীন হাবিব বলেন, ‘ইসলামনগর রোডের ফার্মেসিগুলোতে অধিকাংশ ওষধ অখ্যাত কোম্পানির তৈরি। এগুলো খেয়ে বেশির ভাগ সময়ই আমার রোগ উপশম হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে এই রোডের ফার্মসিগুলো থেকে ওষুধ কেনা বাদ দিতে হয়েছে।’

কেন নামের পাশে ডা. ডিগ্রি ব্যবহার করে চিকিৎসা দিচ্ছেন, কেন অননুমোদিত ওষুধ বিক্রি করছেন জানতে চাইলে লিকা মেডিকেল হলের বীরেন্দ্র নাথ মন্ডল বলেন, ‘বাজারে মেসার্স ইউনাইটেড কোম্পানির ওষুধ পেয়েছি তাই নিয়ে এসেছি। এই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স যে বাতিল করা হয়েছে এ ব্যাপারে আমার ধারণা ছিল না। আর নামের পাশে ডাক্তার ডিগ্রি ব্যবহার করাটা আমার ভুল হয়েছে। আমি সাইনবোর্ড থেকে দ্রুতই এটা মুছে ফেলব।’

রেজিস্টার্ড ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ব্যতীত অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. সৈয়দ আফতাব বলেন, ‘ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধই খাওয়া উচিত নয়, অ্যান্টিবায়োটিক তো একেবারেই নয়। এতে করে অ্যান্টিবায়োটিকের বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে; রোগীর শরীরে অ্যান্টিবডি বিরোধী উপাদান জন্ম নিতে পারে, এমন হলে পরবর্তী সময়ে রোগীর কোনো অসুস্থতা দেখা দিলে অ্যান্টিবাইয়োটিকে আর কাজ হয় না। এ রোগীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close