নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২১

কাগুজে হাসপাতালে নিয়োগ-পদোন্নতি

১৩ বছরে ২৫ চিকিৎসক নিয়োগ

কাগজে-পত্রে থাকলেও বাস্তবে নেই এমন হাসপাতালেই গত বৃহস্পতিবার নিয়োগ পেয়েছেন আরো একজন চিকিৎসক। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে অদৃশ্য দুই হাসপাতালে এ নিয়ে প্রায় ২৫ জন চিকিৎসক নিয়োগ পেলেন। এ সময়ের মধ্যে বদলি বা পদোন্নতিও হয়েছে ২০ জনের। কাগজে থাকা হাসপাতাল দুটির বর্তমান চিকিৎসক রয়েছেন পাঁচজন।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় ২০ শয্যাবিশিষ্ট দুটি হাসপাতাল ১৩ বছর আগে অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তিন একর জমিতে ২০ শয্যাবিশিষ্ট একেকটি হাসপাতাল গড়তে হবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠিতে বলা হয়েছিল। তবে জায়গা না পাওয়ায় হাসপাতাল দুটি ১৩ বছর ধরে কাগজে-পত্রেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। বাস্তবে দৃশ্যমান হয়নি। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকায় নাম থাকায় অদৃশ্য দুই হাসপাতালের নামে এখনো চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা ওই অদৃশ্য হাসপাতালের নামে নিয়োগ পেলেও রোগী দেখছেন অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে। আর বেতনসহ অন্য সব সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন অদৃশ্য হাসপাতালের নামে।

১৩ বছর ধরে হাসপাতাল দুটির জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে বলে দাবি করা হলেও বিভিন্ন স্থানে সরকারি খাসজমি ইজারা নিয়ে দখলে রেখেছেন প্রভাবশালী লোকজন।

জানা গেছে, ২০ শয্যাবিশিষ্ট দুটি হাসপাতালের মধ্যে একটি হওয়ার কথা ফতুল্লা অঞ্চলে, অপরটি সিদ্ধিরগঞ্জে। উভয় থানা এলাকায় সরকারি কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। ফলে দুটি অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনে যেতে হয় শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা ও ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। বর্তমানে ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল কোভিডের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত থাকায় অন্য সব চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে কেবল ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি।

শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের বিপুল সংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা। রোগীদের ব্যাপক চাপের কারণে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ারও অভিযোগ ওঠে প্রায় সময়ই। তাই বিশিষ্টজনের মতে, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে দুটি সরকারি হাসপাতাল দৃশ্যমান হলে একদিকে যেমন স্থানীয় রোগীরা পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পেতেন, অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে রোগীদের চাপও কমে আসত বহুগুণে।

সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আমি দায়িত্বে আসার পর জায়গার বিষয়ে জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জনসহ স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে চিঠি দিয়েছি। সাবেক জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন স্যার সিদ্ধিরগঞ্জে একটি জায়গা দেখেছিলেন। ওই জায়গার বিষয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু ফতুল্লায় জায়গা মিলছে না। এক একর জায়গা পেলেও বহুতল ভবনের মাধ্যমে হাসপাতালটি করা যেত। তাও পাচ্ছি না।’ তিনি বলেন, হাসপাতাল দুটি দৃশ্যমান না হলেও চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার একজন চিকিৎসক ফতুল্লার ২০ শয্যা হাসপাতালের নামে নিয়োগ পেলেন। তারা সবাই বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু ওই ২০ শয্যা হাসপাতালের নামেই তাদের বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। কারণ হাসপাতাল তৈরি হলে যেন চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করতে না হয়। চিকিৎসকের জন্য কার্যক্রম বন্ধ থাকলে তো নতুন করে সমালোচনা হবে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু জায়গা না থাকায় হাসপাতাল করা যাচ্ছে না। বর্তমানে দুই হাসপাতালের নামে চার থেকে সাতজনের মতো চিকিৎসক আছেন। যারা বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। আরো বেশ কিছু চিকিৎসক নিয়োগ পেয়েছিলেন। আপাতত এভাবেই চলছে, জায়গা পেলে হাসপাতাল তৈরি হবে।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সিভিল সার্জনের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলব। বিষয়টি জেনে তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।’

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই সদর উপজেলায় সাত ইউনিয়নে মশক নিধনে ফগার মেশিন ও ওষুধ বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামীম ওসমান বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে দুটি সরকারি হাসপাতাল আছে। একটা ফতুল্লায় আরেকটা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায়। এই দুই হাসপাতালের ওপর ২৪ জন ডাক্তার টাকা নেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, হাসপাতালই নেই। এ কথা আমি সংসদে তুলব।’ তবে সংসদ সদস্যের ওই বক্তব্যের পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি সংসদে এই বিষয়টি উত্থাপন করেননি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close