নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ জুলাই, ২০২০

স্বামীর ওপর দোষ চাপাচ্ছেন সাবরিনা, মামলা ডিবিতে

করোনা টেস্টের ভুল রিপোর্ট সরবরাহের অভিযোগে গ্রেফতার জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী সব অপকর্মের দায় তার স্বামী আরিফ চৌধুরীর ওপর চাপাচ্ছেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ডা. সাবরিনা জানিয়েছেন, স্বামী আরিফ চৌধুরীই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। তার নির্দেশেই এসব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে ডা. সাবরিনার জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য আলোচিত এই মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।

তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (অপারেশন) হাসনাত খন্দকার জানান, গ্রেফতারের পর থেকেই সাবরিনা নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন। প্রতারণার কিছু হয়ে থাকলে তা তার স্বামী আরিফ চৌধুরী করেছেন। আরিফই এটি দেখাশোনা করতেন। তবে ডা. সাবরিনা প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান। তাই এর দায় তিনি এড়াতে পারেন না। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব কীভাবে হয়েছে সবকিছুর ডকুমেন্ট পুলিশের হাতে রয়েছে। করোনা টেস্টের ভুল রিপোর্ট সরবরাহের অভিযোগে গত ২২ জুন বেসরকারি জেকেজি হেলথ কেয়ারে অভিযান চালায় র‌্যাব। এতে ওই প্রতিষ্ঠান ও তার কর্ণধারদের প্রতারণার সব তথ্য বেরিয়ে আসে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে বহিষ্কৃত চিকিৎসক সাবরিনার বিরুদ্ধে হাসপাতালে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে। সেখানে রেজিস্ট্রারের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে তিনি খেয়ালখুশিমতো অফিসে যাতায়াত করতেন। ঠিকমতো সিটে থাকতেন না। অফিসের বিভিন্ন স্টাফের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। তবে ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতেন না। কারণ হাসপাতালের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল।

করোনার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে গত ১২ জুলাই দুপুরে ডা. সাবরিনাকে তেজগাঁও বিভাগীয় উপপুলিশ (ডিসি) কার্যালয়ে আনা হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। গত সোমবার তাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনুর রহমানের আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার এসআই দেওয়ান মো. সবুর চার দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

জানা গেছে, জেকেজি হেলথ কেয়ার করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে যে প্রজেক্ট নিয়েছিল, তা বাস্তবায়নে সব টেকনিক্যাল সাপোর্ট ও টেকনিশিয়ান দিয়ে কাজ করানোর দায়িত্ব পালন করে সদ্য বরখাস্ত হওয়া চিকিৎসক সাবরিনা আরিফ চৌধুরী (সাবরিনা শারমিন হুসাইন)। এমনকি তিতুমীর কলেজে তাদের অস্থায়ী ক্যাম্পে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারাও সাবরিনার ডাকে সেখানে যান। গত সোমবার জেকেজিকে এসব সহযোগিতা করার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন ডা. সাবরিনা। তবে এই প্রতিষ্ঠান থেকে লাভবান হওয়ার কথা এখনো স্বীকার করেননি তিনি। ডিবির ডিসি গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘জেকেজির মাধ্যমে কারা নমুনা পরীক্ষার সার্টিফিকেট নিয়েছে, আমরা এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখব। এই প্রতিষ্ঠান থেকে কারা লাভবান হয়েছে, তাও খতিয়ে দেখা হবে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই মামলাটি তদন্ত করবে ডিবি।’

তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা শুরুর বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন জানতে পেরেছে, তখন থেকেই অভিযুক্তরা বিভিন্নভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, এসব তাদের চাকরিচ্যুত কর্মচারীরা করেছেন। জেকেজি হেলথ কেয়ারে যেসব কর্মী কাজ করতেন, তাদের অনেকেই টেকনিকালি দক্ষ ছিলেন না। কিন্তু তাদের নামেমাত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে অবৈধভাবে টাকা আত্মসাৎ করতে মাঠে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর এই প্রশিক্ষণ ও লোক সরবরাহ কাজে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন ডা. সাবরিনা জড়িত ছিলেন। গ্রুপটির চেয়ারম্যান হিসেবে সে নিজেকে দাবি করে বক্তব্যও দিয়েছেন। কিন্তু এখন সবকিছু অস্বীকার করছেন। প্রয়োজনে জেকেজির আরিফুল ও সাবরিনাকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ‘জেকেজির করোনার নমুনা পরীক্ষার ফলাফল যে ভুয়া, সেটি আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেরে সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি। তারা জালিয়াতি করে ভুয়া পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে। তাদের অফিস থেকে উদ্ধারকৃত ল্যাপটপে সেই প্রমাণ মিলেছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close