নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ এপ্রিল, ২০২০

করোনায় মৃত্যু আরো ৩ নতুন শনাক্ত ৩৫

সংক্রমণ ভয়াবহ হওয়ার শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

দেশে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত আরো তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১২ জনে। আর নতুন করে ৩৫ জন এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১২৩ জনে। গত ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর এটিই আক্রান্তের সর্বোচ্চ সংখ্যা। গতকাল সোমবার করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস আর এক স্থানে সীমাবদ্ধ নেই। এটি বেড়েই চলেছে। নতুন করে ৩৫ জন শনাক্ত ও তিনজন মারা গেছেন। সারা দেশ থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৬৮টি। আর এখন (গতকাল) পর্যন্ত ৪ হাজার ১১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

একই সময়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত (গতকাল) মারা গেছেন ১২ জন, আক্রান্ত ১২৩ জন। আর এ সময় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার খবর নেই। আক্রান্তদের ৬৪ জন ঢাকার, নারায়ণগঞ্জের ২৩ জন। যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ১২ জন নারায়ণগঞ্জের। মৃত তিনজনের একজন এক সপ্তাহ আগে শনাক্ত হন। বাকি দুজন হাসপাতালে আসার পর মারা গেছেন। তারা নারায়ণগঞ্জের। আক্রান্তদের ৩৫ জনের বয়স ছিল ৪১ থেকে ৫০ বছর, তাদের মধ্যে ৩০ জনই পুরুষ। এর বাইরে ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সি ২১ জন আক্রান্ত হন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, ৭৩৯ জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭০৯ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে এবং ৩০ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এর বাইরে ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে ২৩ জনকে।

এ অবস্থায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে দেশে প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। গণসংক্রমণের প্রথম পর্যায় থেকে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এবং এই সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার লেলিন চৌধুরী বলেন, দুই সপ্তাহ আগেও আমরা করোনাভাইরাস সংক্রমণের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে ছিলাম। কিন্তু বর্তমানে সংক্রমণ বিস্ফোরণ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে মনে হচ্ছে।

‘লকডাউনের জন্য ছুটি ঘোষণার পর সবাই যেভাবে গাদাগাদি করে বাসে, লঞ্চে, ট্রেনে রাজধানী থেকে গ্রামে গ্রামে চলে গেল, তারপর গার্মেন্ট শ্রমিকদের বাড়িতে যাওয়া এবং দল বেঁধে হেঁটে, ট্রাকে-পিকাপে করে ফিরে আসা?, এসব কারণে দ্রুতগতিতে এ ভাইরাস সামাজিক সংক্রমণের পর্যায়ে চলে গেছে। এছাড়া নানা ধর্মীয় সমাবেশ, লকডাউন ঠিকমতো পালন না করা, এসবও কারণ। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি আমাদের জন্য সত্যিকার অর্থেই অনেক আশঙ্কাজনক মনে হচ্ছে।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার মনিরা পারভিন বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে সেটাকে সাংঘাতিক বলা যায়। করোনাভাইরাস আক্রান্তদের যদি দ্রুত শনাক্ত করে আইসোলেটেড না করা যায়, তাহলে এই ভাইরাসটি আরো দ্রুত অনেক বেশি লোককে সংক্রমিত করবে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত ভীতিকর হবে। দেশব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। সেইসঙ্গে বেশি বেশি করে করোনার টেস্ট করতে হবে। আইডেন্টিফাইড রোগীদের যত দ্রুত সম্ভব অন্যদের থেকে আলাদা করে চিকিৎসা দিতে হবে।

করোনাভাইরাসে প্রতিরোধের উপায় প্রসঙ্গে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, যেহেতু এ ভাইরাসের এখনো কোনো ভ্যাকসিন বা ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি, তাই নিজেদের সুরক্ষা নিজেদেরই দিতে হবে। আমাদের সবাইকে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার মাধ্যমে ভাইরাসের আক্রমণ থেকে নিজেকে ও পরিবারকে রক্ষা করতে হবে। লকডাউন মানতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবর আসে। আর ১০ দিনের মাথায় প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। গত ১৮ মার্চ রাজধানীর একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭০ বছর বয়সি ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনি বিদেশ থেকে আসা এক ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন। করোনা সংক্রমণ ছাড়াও বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন তিনি।

এদিকে, ওই সময়েই দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছিলেন, দেশের জেলা পর্যায়ের হাসপাতালও পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত আছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close