নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ এপ্রিল, ২০১৯

পানি দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

পানি যেন আশীর্বাদ হয় দরকার সেই পরিকল্পনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পানি যেন মানুষের ক্ষতির কারণ না হতে পারে সেভাবে সব পরিকল্পনা নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। তিনি বলেন, পানি আমাদের যেমন অধিকার, পানির অপর নাম জীবন। আবার পানি অনেক সময় আমাদের সর্বনাশের পথে নিয়ে যায়। যেটা আমাদের দেশে আমরা দেখি নদীভাঙনে। বহু মানুষ নিঃস্ব হয়ে যায়, ঘরবাড়ি সব কিছু শেষ হয়ে যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ব পানি দিবস ২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানি আমাদের যেমন অধিকার, পানির অপর নাম জীবন। আবার পানি অনেক সময় আমাদের সর্বনাশের পথে নিয়ে যায়। যেটা আমাদের দেশে আমরা দেখি নদীভাঙনে। বহু মানুষ নিঃস্ব হয়ে যায়, ঘরবাড়ি সব কিছু শেষ হয়ে যায়। পানি আমাদের যেন ক্ষতি করতে না পারে, পানি যেন আমাদের আশীর্বাদ হয়। সেভাবে আমাদের সব পরিকল্পনা নেওয়া একান্ত প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নদী রক্ষায় সবাইকে যার যার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের আহ্বানও জানান। নদী দখল এবং দূষণরোধে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা বলেন শেখ হাসিনা।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পানিসম্পদ দূষণের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপীই এটি একটি সমস্যা। এই সমসাটি নদীতেই কেবল নয়, সাগরেও দেখা দিচ্ছে, সমুদ্রগামী জাহাজের মাধ্যমে বর্জ্য ফেলা। আমি সবাইকে বলব যে, নদীতে বর্জ্য ফেলা সবাইকে বন্ধ করতে হবে। কারণ এটি একটি সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। কাজেই প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠান যারা গড়ে তুলবেন তারা যেন নদীদূষণ না করেন। সেজন্য তাদের আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নির্মাণ করতে হবে, পানি শোধনাগার করতে হবে, যোগ করেন তিনি। সেই সঙ্গে রাস্তা-ঘাটে চলাচল করার সময়ও এদিক সেদিকে বর্জ্য না ফেলার প্রতি লক্ষ্য রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

নদীগুলোকে বাংলাদেশের সম্পদ মন্তব্য করে তিনি বলেন, নদীগুলোর পানি পচে এমন দুর্গন্ধ। আমি বেশি দূর যাব না। বুড়িগঙ্গার কথাই বলিÑ এমন দুর্গন্ধ। কিন্তু এটা কেন হবে। এটা নিয়ে আমরা একটা কমিটি করে দিয়েছি। নদীগুলো উদ্ধার করা, পাড়গুলো উদ্ধার করা এবং সেই সঙ্গে কেউ যেন বর্জ্য ফেলতে না পারে। সেইভাবে স্যুয়ারেজ সিস্টেমগুলোকে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে পরিশোধিত করে দেওয়া। সেটাও আমরা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে বলব, শুধু নদীর ড্রেজিং করলেই হবে না সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সেখানে বৃক্ষরোপণের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কিছু গাছ আছে, লাগালে মাটিটা শক্ত করে ধরে রাখে। আর নদী ড্রেজিং করে পলিটা যেন নদীতেই না ফেলা হয়। ছোট ছোট পকেট সৃষ্টি করে সেখানে ফেলে আস্তে আস্তে ওটাই ব্যবহার করে আমরা অনেক ভূমিও উত্তোলন করতে পারব। এখানে আমাদের শিল্পায়ন হতে পারে। কৃষি হতে পারে, বসতি হতে পারে। ভাঙন থেকে রক্ষায় এক জায়গায় দীর্ঘদিন বালু মহাল না রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জনান প্রধানমন্ত্রী। আমাদের নদীতে বিভিন্ন জায়গায় বালু মহাল আছে। দুর্ভাগ্য হলো আমি একটা হিসাব নিয়ে দেখলাম যে, সেই হয়ত ৩০, ৪০, ৫০ বছর আগে যেখানে বালু মহাল গড়া হয়েছিল সেখানে এখনো বালু মহাল। এতে আস্তে আস্তে মাটির শক্তিটা কমে যাচ্ছে। পাড় ভাঙছে, ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে। ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এক জায়গায় বেশি দিন করা যাবে না। বালু মহালগুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে করতে হবে। যাতে করে ওই অঞ্চলটা ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পায়।

নদী রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহার করা ও ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার না করার দিকেও সরকার বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে শতবর্ষের ব-দ্বীপ সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। এছাড়া ডেল্টা প্ল্যানের ওপর একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শন করা হয়। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেন, প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close