নয়া পল্টনে সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগে জড়িত অধিকাংশকেই শনাক্ত করা হয়েছে জানিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, তারা সবাই বিএনপি ও দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। আগের দিনের ওই সংঘর্ষের জন্য পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিএনপি বলছে, তাদের সহযোগিতা নিয়ে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ‘ক্যাডাররা’ সহিংস কর্মকান্ড করে তার দায় তাদের ওপর চাপাতে চাইছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচন বানচালের ‘ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে’ বিনা উসকানিতে এই হামলা চালিয়েছে বিএনপি। এই প্রেক্ষাপটে গতকাল বৃহস্পতিবার ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে সাংবাদিকদের জানান ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে আমরা অনেকের পরিচয় পেয়েছি এবং তাদের শনাক্ত করতে পেরেছি। তারা সবাই বিএনপি এবং তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।’ তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, নাশকতায় জড়িত অন্তত ৩০ জনকে শনাক্ত করেছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার মিশু বিশ্বাস বলেন, ‘হেলমেট ছাড়া যে দেশলাই দিয়ে পুলিশের গাড়িতে আগুন দিচ্ছে তার পরিচয় মিললেও হেলমেট পরা যে গাড়িতে লাফাচ্ছে তার পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। তবে গাড়ি ঘিরে যারা উল্লাস করছে তাদের অধিকাংশের পরিচয় মিলেছে।’

ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও ছবিতে যে যুবককে দেশলাই নিয়ে গাড়িতে আগুন জ্বালাতে দেখা যাচ্ছে তিনি ছাত্রদলের পল্টন এলাকার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাহজালাল খন্দকার কবীর বলে জানান তিনি। ‘তাকে ধরতে পল্টন এলাকায় তার বাসায় অভিযান চালানো হলেও পাওয়া যায়নি’ বলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘অন্তত ১০ জনের পরিচয় সম্পর্কে আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছি। গোয়েন্দা পুলিশ ছাড়াও থানা পুলিশ তাদের গ্রেফতারে কাজ করছে।’ ঘটনার সময় এবং পরে প্রায় ৬৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে মিশু বিশ্বাস বলেন, এরা প্রত্যেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

এই ঘটনায় পল্টন থানায় দায়ের করা তিনটি মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ প্রায় পৌনে ২০০ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনীতির মাঠ সরগরম হয়ে ওঠার মধ্যে গত বুধবার দুপুরে ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রির সময় পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ওই সময় কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর এবং পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘যিনি আগুন দিয়েছেন তাকে ফুটেজে পরিষ্কার দেখা গেছে, গাড়ির উপরে দাঁড়িয়ে তান্ডব যারা করেছে তাদের দেখা যাচ্ছে। বুকের কাপড় খুলে লম্বা লাঠি দিয়ে যে তান্ডব নৃত্য আমরা দেখেছি, সেটাও মিডিয়ার সুবাদে দেশবাসী দেখেছে।’ এই হামলা পূর্ব পরিকল্পিত বলে মনে করছেন পুলিশ কমিশনার।

তিনি বলেন, ‘হামলায় পাঁচজন কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। যারা এই মুহূর্তে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। লাঠি ও বাঁশ দিয়ে মারধর হয়েছে। ইট-পাটকেল ছুড়ে মারধর হয়েছে। এটিএন নিউজে পরিষ্কারভাবে এসেছে, একজন পুলিশকে পেছন থেকে কীভাবে মারতে মারতে ধাওয়া করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

‘পুলিশকে শুধু মারা না, হামলা বড় ধরনের অঘটন ঘটানোর একট পূর্ব পরিকল্পনা ছিল বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। ৬০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি যারা আছে তাদের শনাক্ত করার কাজ অব্যাহত রেখেছি।’ ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমরা বল প্রয়োগে যাইনি। বল প্রয়োগে গেলে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হবে।’

"