কক্সবাজার প্রতিনিধি

  ১৪ নভেম্বর, ২০১৮

বৃদ্ধকে কান ধরে টানলেন এসি ল্যান্ড, ভিডিও ভাইরাল

আপনারা কারা? এটা বলায় ঝাঁপিয়ে পড়েন বৃদ্ধের ওপর। মারতে মারতে ওই বৃদ্ধকে মাটিতে ফেলে দেন। এতে হাঁটুতে আঘাত পান বৃদ্ধ। এক পর্যায়ে অশ্রাব্য ভাষায় (যা প্রকাশযোগ্য নয়) গালাগাল করতে করতে কান ধরে টেনে-হিঁছড়ে তুলে নিয়ে যান। পরে তুলে নেন টমটম (ইজিবাইক) গাড়িতে। নিয়ে যাওয়া হয় কক্সবাজার সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে। যিনি বৃদ্ধের ওপর এভাবে নির্যাতন করেন, তিনি কোনো সন্ত্রাসী নন, তিনি হলেন কক্সবাজার থেকে সদ্য শাস্তিমূলক বদলি হওয়া কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজিম উদ্দিন। আর যার ওপর হামলে পড়েছেন সেই বৃদ্ধ হলেন কক্সবাজার শহরের কলাতলীর মৃত কবির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আলী ওরফে নফু মাঝি। ঘটনাটি গত মে মাসের শেষ দিকে হলেও গত রোববার রাতে প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি বিভিন্ন পেইজে হাজার হাজার শেয়ার ও লাইক হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ ওই কর্মকর্তার শাস্তি দাবি করেছেন।

এদিকে, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর কক্সবাজারে তোলপাড় শুরু হয়। বিশেষ করে প্রশাসনে ওই কর্মকর্তাকে নিয়ে চলে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেন, এমনিতেই নানা অভিযোগ রয়েছে এসিল্যান্ড নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তার বিভিন্ন কর্মকান্ডের কৈফিয়ত দিতে দিতে আমরা এক প্রকার পেরেশান।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘এসিল্যান্ড নাজিম উদ্দিনের আচরণের বিষয়ে আমরা বিব্রত। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি নিয়ে তিনি ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি আর আমার এখতিয়ারে নেই। ইতোমধ্যেই তিনি বদলি হয়ে অন্য জেলায় চলে গেছেন।’

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘এসিল্যান্ড নাজিমের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। নানা অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে রাঙ্গামাটির লংগদু’র মতো উপজেলায় বদলি করা হয়েছে। এটি এক প্রকার শাস্তিমূলক বদলি। প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলেও তার বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এখন আবার নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এসব অভিযোগ আসলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সদ্য বদলি হওয়া অভিযুক্ত কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজিম উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতার সময় তাকে নিরাপদে সরিয়ে নিতেই টেনে আনা হয়েছিল। তাকে নির্যাতন করা হয়নি।’

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দৃশ্যমান এসিল্যান্ড নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে সহকারী হিসেবে থাকা ভূমি অফিসের ঝাড়–দার সাহাব উদ্দিন গতকাল রাতে বলেন, ‘ওই দিন ঘূর্ণিঝড়ের কোনো সংকেত ছিল না। মূলত, ওই বৃদ্ধ লোককে বাড়িঘর নিয়ে চলে যেতে বলেছিলেন এসিল্যান্ড স্যার। কিন্তু তিনি যেতে না চাওয়ায় তাকে ধরে আনা হয়েছিল। এতে আমার কোনো দোষ নেই, স্যার আমাকে যা নির্দেশ দিত তাই আমি করতাম।’

ঘটনাটি নিয়ে গত সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে অন্তত ১০ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারা সবাই ওই বৃদ্ধের ওপর নির্মম নির্যাতনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।

নির্যাতনের শিকার মোহাম্মদ আলী ওরফে নফু মাঝি সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত রোববার রাত ১১টার দিকে হঠাৎ করেই তিনজন লোক আমার কাছে আসেন। তারা এ সময় আমাকে এসিল্যান্ড অফিসে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তারা বলেন, আমি এসিল্যান্ড অফিসে গিয়ে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি বলে সাক্ষ্য দিলে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু আমি এতে রাজি হয়নি। কারণ তিনি আমার সঙ্গে যা করেছেন, তা টাকার বিনিময়ে বিক্রির মতো নয়। তার মারধরে আমি এখনো বাম পায়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে হাঁটি। আমার ৬০০ টাকা দামের শার্টও তিনি সেদিন ছিড়ে ফেলেছিলেন। যা ভুলবার নয়। আমি তার শাস্তি চাই।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন হঠাৎ করেই সেখানে কয়েকজন লোক গিয়ে জমি পরিমাপ করা শুরু করেন। এ সময় আপনারা কারা জিজ্ঞেস করতেই এসিল্যান্ড নাজিম আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। আমাকে মারধর করে মাটিতে ফেলে দেন। পরে তাকে সেখান থেকে তুলে কান ও শার্টের কলার ধরে টানতে টানতে গাড়িতে তুলে এসিল্যান্ড সদরের অফিসে নিয়ে যায়।’ তিনি আকুতি প্রকাশ করে বলেন, ‘ঘটনার সময়টি পবিত্র রমজান মাস ছিল। আমি রোজা রেখেছিলাম। জানি না এমন কী অপরাধ করেছিলাম, তিনি আমার সঙ্গে এমন আচরণ করলেন। আমি জানি, আল্লাহই সঠিক সময়ে এসবের সঠিক বিচার করবেন।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close