ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

  ০৩ নভেম্বর, ২০১৮

ময়মনসিংহে ১০৩ প্রকল্পের উদ্বোধন

উপহার নিয়ে এসেছি ভোট চাই : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জনস্রোতে পরিণত হওয়া ময়মনসিংহের জনসভায় জনতার কাছ থেকে আগামী একাদশ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার ওয়াদা করালেন। তিনি বলেছেন, আমি ময়মনসিংহ বিভাগের জন্য উপহার নিয়ে হাজির হয়েছি। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ। এ জন্য দরকার আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠে গতকল শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

জনসভার আগে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে ১০৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, বিভাগীয় স্টেডিয়াম ও পুরাতন ব্রহ্ম??পুত্র নদ খননসহ ৯৩টি প্রকল্পের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। জনসভায় উপস্থিত সবার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী দিনে নির্বাচন। পূর্বে যেভাবে নৌকায় ভোট দিয়েছিলেন, আগামীতেও নৌকায় ভোট দিয়ে দারিদ্র্যসীমা ৫ থেকে ৬ ভাগে নামাতে হবে। সে জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।

দেশ ও জনগণের উন্নয়নে সরকারের নানা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি চাই এদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন হবে। এদের মানুষ দুবেলা পেট পুরে ভাত খাবে। কেউ গৃহহারা থাকবে না, সবার উন্নয়ন হবে। এ সময় তিনি দেশের মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন জানিয়ে কবির ভাষায় বলেন, ‘নিঃস্ব আমি, রিক্ত আমি দেওয়ার কিছু নাই/ আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই’।

বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহে আলাদা শিক্ষা বোর্ড, বিভাগীয় স্টেডিয়াম ও নভোথিয়েটার করার ঘোষণাও দেন। একইসঙ্গে নেত্রকোনায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং প্রতিটি উপজেলায় মডেল মসজিদ গড়ার কথাও বলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহে উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা ১৯৫টি প্রকল্পের নাম পড়ে শোনান।

২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি মানুষ পুড়িয়ে মারে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে নারকীয় তা-ব চালিয়েছে। বিশেষ করে ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে আগুন দিয়ে ৩ হাজার ৯০০ মানুষকে পুড়িয়েছে। তারা ৫০০ মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। হাজার হাজার গাড়ি, রেললাইন, লঞ্চ পুড়িয়ে দিয়েছে। মানুষের স্বাভাবিকভাবে চলাফেরার কোনো অধিকার ছিল না। এই বিএনপি ক্ষমতায় এসে নির্যাতন করে আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কোনো নির্যাতন করে না, দেশের উন্নয়ন করে, মানুষের কল্যাণ করে।

প্রধানমন্ত্রী তারুণ্যের উদ্দেশে বলেন, আমাদের যুবসমাজ-তরুণ সমাজই আমাদের শক্তি। আমরা শিক্ষা খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করছি। প্রাইমারি থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত ২ কোটি ৪ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি-উচ্চবৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি। যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখতে পারে। এর মধ্যে প্রাইমারি শিক্ষার ১ কোটি ৪০ লাখ মা, ওই প্রাইমারি শিশুদের উপবৃত্তি মায়ের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সরাসরি আমরা পৌঁছে দিচ্ছি মায়ের হাসি প্রকল্পের মাধ্যমে।

আওয়ামী লীগ সরকার প্রযুক্তি খাতে দেশকে এগিয়ে নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বাংলাদেশ ডিজিটাল। প্রতি উপজেলায় ব্রডব্যান্ড এবং ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করেছি। আজকে আমরা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উপৎক্ষেপণ করে মহাকাশ জয় করেছি। আমরা যে ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি, আপনারা সেখানে বসে নিজেরা অর্থ উপার্জন করতে পারেন। নিজের দেশে বসে বিদেশে অর্থ উপার্জন করতে পারেন, সেই সুযোগ করে দিয়েছি। আজ সবার হাতে হাতে মোবাইল। এটি বিএনপির সময় ছিল না। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সবার হাতে মোবাইল ফোন পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নেই।

দৃঢ়তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলতে থাকেন, আমরা কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম করে দিচ্ছি। কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়ে জনগণের দোরগোড়ায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনা পয়সায় মা- বোনদের হাতে তুলে ধরছি। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকার সভাপতিত্বে এবং মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামুল আলম ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের যৌথ সঞ্চালনায় জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন, ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল, ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম প্রশাসক ইকরামুল হক টিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক শামীম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত-উর- রহমান শান্ত প্রমুখ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close