নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

এস কে সিনহা ইস্যু

দালিলিক প্রমাণ ছাড়া মামলা করবে না দুদক

আইনমন্ত্রীর কথায় নয়, দালিলিক প্রমাণ পেলেই সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘আমরা অনুসন্ধান করছি কি নাÑএ বিষয়ে সরাসরি উত্তর দেওয়াও সম্ভব না। অ্যাকশনে যেতে হলে তার বিরুদ্ধে আমাদের দালিলিক প্রমাণ বের করতে হবে। তারপর বক্তব্য দেওয়া সম্ভব হবে। মূলত দালিলিক প্রমাণ ছাড়া দুদক কারো বিরুদ্ধে মামলা করবে না।’ গতকাল সোমবার বিকেলে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে সংস্থাটির চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুদক দুজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঋণ নিয়ে ওই টাকা অবৈধভাবে অন্যত্র স্থানান্তরের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে। ওই অনুসন্ধান এখনো চলমান। অনুসন্ধান শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া যাবে না। দালিলিক প্রমাণ দিয়ে টাকা কোথায় ও কীভাবে গেল, সে বিষয়টি খুঁজে বের করতে হবে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে যখন মামলা করবে, তখনই মামলা হবে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘মন্ত্রী কী বলেছেন, সেটা আমার বিষয় না। তিনি বলতেই পারেন। তা ছাড়া মন্ত্রীর কথায় তো দুদক মামলা করবে না। দুদক স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। মন্ত্রীর কথার কোনো প্রভাব দুদকে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’

এর আগে গত ৬ মে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দুই ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহাকে এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবে চার কোটি টাকা স্থানান্তরের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওইদিন তাদের সঙ্গে আসা দুই আইনজীবী সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন এস কে সিনহাকে তার বাড়ি বিক্রির চার কোটি টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে। আইনজীবীরা হলেন আফাজ মাহমুদ রুবেল এবং নাজমুল আলম।

আইনজীবীরা বলেন, এস কে সিনহার উত্তরার ছয়তলা বাড়িটি পাঁচ কাঠা জমির ওপর ছিল। এ বাড়িটি ২০১৬ সালের শুরু দিকে টাঙ্গাইলের বাসিন্দা শান্ত্রি রায় ছয় কোটি টাকায় কেনেন। এ সময় বায়না দলিলকালে তিনি দুই কোটি টাকা পরিশোধ করেছিলেন। বাকি টাকা পরিশোধের জন্য নিরঞ্জন ও শাহজাহানের সহযোগিতা নেন। নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা শান্ত্রি রায়ের স্বামী রণজিতের চাচা (চাচাশ্বশুর)। আর শাহজাহান রণজিতের বন্ধু।

তারা বলেন, বাড়ি কিনতে বাকি চার কোটি টাকা ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে নিরঞ্জন ও শাহজাহান দুই কোটি টাকা করে চার কোটি টাকা ঋণ নেন। ঋণ পরিশোধে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে শান্ত্রি রায় জামিনদার হন। জামিনদার হিসেবে টাঙ্গাইল ও ঢাকার আশপাশের বেশ কিছু জমি বন্ধক রাখেন শান্ত্রি।

তাদের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের মে মাসে জমির বায়না দলিল হয় এবং ওই বছরের ৮ নভেম্বর দুটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে এস কে সিনহা সোনালি ব্যাংক সুপ্রিম কোর্ট শাখার মাধ্যমে চার কোটি টাকা গ্রহণ করেন। পে-অর্ডারের পর ২৪ নভেম্বর হস্তান্তর দলিলের মাধ্যমে বাড়িটি শান্ত্রি রায়কে বুঝিয়ে দেন।

ফারমার্স ব্যাংক থেকে ঋণের নামে আত্মসাৎ ও পে-অর্ডারে এক ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির’ ব্যাংক হিসাবে চার কোটি টাকা জমা দেওয়ার অভিযোগে ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহাকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল ওই দুই ব্যবসায়ীর ঢাকার উত্তরায় তাদের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং টাঙ্গাইলের স্থায়ী ঠিকানায় নোটিস পাঠানো হয়।

দুদক সূত্রে আরো জানা যায়, ২০১৬ সালে ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে দুই কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা শাহজাহান ও নিরঞ্জন ঋণ নেন। এরপর একই বছরের ১৬ নভেম্বর সেই অর্থ পে-অর্ডারের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ওই ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেন। ওই বিষয়ে সম্প্রতি দুদকে আসা এক ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক তা যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close