নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৯ মার্চ, ২০১৮

কন্যাসন্তানকে স্বাবলম্বী করে তুলুন : প্রধানমন্ত্রী

কন্যাসন্তানকে স্বাবলম্বী করে তুলতে সহায়তা করতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৮ উদ্যাপনের উদ্বোধন করে শেখ হাসিনা বলেন, আমিও সবার কাছে আহ্বান জানাব, বিয়ে দিলেই মেয়ের ওপর থেকে দায়িত্ব চলে যায় না। বরং দায়িত্ব আরো বাড়ে। মেয়েকে যদি লেখাপড়া শিখিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে; সেটাই সমাজের জন্য সব থেকে ভালো, পরিবারের জন্যও একটা সুরক্ষা।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানে নারী উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজে যদি নারী পড়ে থাকে; তাহলে এই সমাজ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। নারীদের অধিকার সুরক্ষিত করে তাদের অধিকার সৃষ্টি করে দেওয়া এবং সর্বক্ষেত্রে তাদের বিচরণ যেন নিশ্চিত হয়; সেটাই আমাদের লক্ষ্যে। আর সেই কাজটাই করে আমরা অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছি। বাংলাদেশের মেয়েরা পিছিয়ে নেই। যে বাধা ছিল; তা অতিক্রম করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো এবং মহিলা ও নারী মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বিশেষ অবদান রাখার জন্য পাঁচজন নারীর হাতে জয়িতা সম্মাননা তুলে দেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন মেহের আফরোজ চুমকি।

রাজনীতি, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে সশস্ত্র বাহিনী, বিচার বিভাগ, ব্যবস্থা ও ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের পদচারণার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, সব জায়গায় মেয়েরা কিন্তু তাদের স্থান করে নিয়েছে। একটু সাহসের সঙ্গে এগিয়ে গেলেই কিন্তু স্থান করা যায়। মেয়েরা যখন কাজ করে; আমি মনে করি খুব ভালোভাবেই কাজ করে। তাদের দক্ষতা অনেক বেশি; কোনো সন্দেহ নেই।

নারী শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাবা-মাও যখন দেখে যে, আমার মেয়ে লেখাপড়া শিখে সে যখন অর্থ উপার্জন করতে পারে, সংসারে সহযোগিতা করতে পারে; তখন আর বিয়ে দেওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করবে না। আর বাবা-মা বৃদ্ধ হয়ে গেলে ছেলের বৌ যতটা না দেখে, মেয়েরা তার থেকে বেশি দেখে। এটাও বাবা-মার মনে রাখা উচিত, এটাও বাবা-মার চিন্তা করা উচিত। এটা খুব বাস্তব কথা আমি বললাম। অবশ্য মেয়েরাই তো কারো ছেলের বৌ হয়Ñ সেটাও ঠিক। সেখানে আমি বলব, আমাদের বোনদেরও সমানভাবে দেখা উচিত। বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি সবচার প্রতি সমানভাবে দায়িত্ব পালন করা উচিত। নারীদের নিজের পরিবারের প্রতি দায়িত্ব যথাযথ পালনের কথাও মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

চারটা বিভাগে মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর্যায়ক্রমিকভাবে আমরা প্রতিটি বিভাগে এই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট করব। প্রতিটি বিভাগে আমরা মহিলা কারিগরি স্কুল ও কলেজ আমরা প্রতিষ্ঠা করে দেব। সব উপজেলায় কর্মজীবী মহিলাদের জন্য হোস্টেল তৈরিতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, স্বল্প ব্যয়ে কর্মজীবী মহিলাদের জন্য ঢাকাসহ অন্যান্য জেলা শহরে ৮টি হোস্টেল পরিচালনা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমিকভাবে প্রতিটি জেলায় আমরা কর্মজীবী মহিলাদের জন্য এই হোস্টেল করে দেব। উপজেলা পর্যন্ত যেন হয়; সে ব্যবস্থা আমরা নেব।

সারা দেশে ৭৪টি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হলেও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে এর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মা তখনই কাজে মনোযোগ দিতে পারবে; যখন তার সন্তানটা সুরক্ষিত থাকবে। প্রত্যেকটা জায়গায় ডে-কেয়ার সেন্টার করা প্রয়োজন। প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, মেয়েদের প্রতিটি উপজেলায় বিনা পয়সায় ১৮টি ট্রেডে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। গাড়ি চালনা থেকে শুরু করে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রতিটি ক্ষেত্রেই ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণকালীন মেয়েরা কিছু ভাতা পাচ্ছে। বর্তমান সরকারের সময়ে ৩৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে তিনটি আছে; বিশেষভাবে মহিলাদের জন্য। ৬৬টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ চালু আছে। যেখানে ছেলেমেয়ে উভয়েই ট্রেনিং নিতে পারে।

নারীদের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনা-২০১৩ গ্রহণ করা হয়েছে।

নারী নেতৃত্ব গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকারের প্রতিটি স্তরে আমরা কোটা সিস্টেম করে দিয়েছি। নেতৃত্বটা তৃণমূল থেকে উঠে আসুক; সেটাই আমরা চাই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist