খুলনা প্রতিনিধি

  ০৭ জানুয়ারি, ২০১৮

চোখ তোলার পর মামলাও তুলে নিতে হুমকি পুলিশের!

চোখ তুলে নিয়েও ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ। এবার ওই অভিযোগে করা মাললাও তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। গতকাল শনিবার দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমনই অভিযোগ করেছেন অন্ধ শাহ জালাল। সংবাদ সম্মেলনে তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান এডভোকেট ইশ্বরচন্দ্র সানা। সংবাদ সম্মেলনে দু’চোখ হারানো যুবক শাহ জালাল বলেন, ওসি নাসিম খান এবং তার পুলিশ বাহিনী আর্থিক লালসার জন্য আমাকে পৃথিবীর আলো দেখা থেকে চিরদিনের জন্য বঞ্চিত করেছেন। আমার দুটি চোখ উপড়ে ফেলে ভবিষ্যৎ ধ্বংস করেছেন। চোখ হারিয়ে বর্তমানে আমি মানবেতর জীবনযাপন করছি। এখন মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন। ফলে পরিজন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, মামলার সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে এজাহারভুক্ত আসামি খালিশপুর থানার ওসি নাসিম খানসহ পুলিশ সদস্যদের থানা থেকে প্রত্যাহার করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের প্রত্যাহার না করায় মামলাটি ভিন্নখাতে প্রভাহিত করাসহ তদন্তও প্রভাবিত করা হয়। পরে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত তারা অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া ওসি নাসিম বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে মামলা প্রত্যাহারের জন্য অর্থের প্রলোভনও দেখাচ্ছেন। কিন্তু তাদের আর্থিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পুলিশ কর্মকর্তাদের চাপের কারণে পিবিআইও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে সময় ক্ষেপণ করছে। এমনকি মামলার পর পুলিশের ইন্ধনে শাহ জালালের বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

আসামিদের দ্রুত থানা থেকে প্রত্যাহার এবং দ্রুত পিবিআইর তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের জন্য সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মহা পুলিশ পরিদর্শকসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। এ সময় শাহ জালালের বাবা মো. জাকির হোসেন, মা রেণু বেগম এবং স্ত্রী ও শিশু সন্তান উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই শাহ জালাল স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে নিয়ে পিরোজপুরের কাউখালি উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের বাড়ি থেকে খুলনা নগরীর নয়াবাটি রেললাইন বস্তি কলোনির শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যান। ওইদিন রাতে তিনি তার শিশু কন্যার দুধ কেনার জন্য বাসার পার্শ্ববর্তী দোকানে যান। এ সময় খালিশপুর থানার ওসি নাসিম খানের নির্দেশে তাকে থানায় ডেকে নেওয়া হয়। তার ফিরতে দেরি হওয়ায় খোঁজ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা থানায় গেলে ওসি তাকে ছাড়ানোর জন্য দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে ব্যর্থ হয়ে স্বজনরা থানার সামনে অপেক্ষা করতে থাকেন। এর মধ্যে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তারা শাহজালালকে পুলিশের গাড়িতে করে বাইরে নিয়ে যায়। পরদিন ১৯ জুলাই তারা জানতে পারেন তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় তাকে দুটি চোখ উপড়ানো অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় শাহজালাল জানান, পুলিশ কর্মকর্তারা হত্যার উদ্দেশে তাকে গাড়িতে করে গোয়ালখালি হয়ে বিশ্ব রোডের (খুলনা বাইপাস সড়ক) নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তার হাত-পা চেপে ধরে এবং মুখের মধ্যে গামছা ঢুকিয়ে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে দুটি চোখ উপড়ে ফেলে। এ ঘটনায় শাহজালালের মা রেণু বেগম বাদী হয়ে ৭ সেপ্টেম্বর খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিমের আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় দাবিকৃত টাকা না পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা যোগসাজশে তার ছেলে মো. শাহজালালের দুটি চোখ উৎপাটন করে বলে অভিযোগ করা হয়। মামলায় খালিশপুর থানার ১১ পুলিশ ও আনসার কর্মকর্তাসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হচ্ছেÑ খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম খান, এসআই রাসেল, এসআই তাপস রায়, এসআই মোরসেলিম মোল্লা, এসআই মিজান, এসআই মামুন, এসআই নূর ইসলাম ও এএসআই সৈয়দ সাহেব আলী, আনসার সদস্য (সিপাই) আফসার আলী, আনসার ল্যান্স নায়েক আবুল হোসেন, আনসার নায়েক রেজাউল এবং অপর দুজন খালিশপুর পুরাতন যশোর রোড এলাকার সুমা আক্তার ও শিরোমনি বাদামতলা এলাকার লুৎফর হাওলাদারের ছেলে রাসেল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist