দক্ষ সার্জন দরকার
বিনা পুঁজিতেও এ দেশে ব্যবসা করা যায়; এবং তা খুবই লাভজনকও বটে। এ ব্যবসার নাম চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজি নামের এই ব্যবসার খবর প্রায়ই প্রকাশিত হয়ে থাকে জাতীয় পত্র-পত্রিকায়। কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই। বরং এর মাত্রা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ, প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে।
রাজধানীর গুলিস্তান টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে আসার আগেই প্রতিটি বাসে চাঁদা ধার্য হয়ে আছে ৪০০ টাকা। একে টার্মিনালের চাঁদা বলা হয়ে থাকে, কর্তৃপক্ষ এভাবেই জানে। এরপর সিটি করপোরেশনের ইজারাদার এবং সিরিয়ালের জন্য ১০০ টাকা। এই ৫০০ টাকা না দেওয়া পর্যন্ত গাড়ি টার্মিনালের বাইরে আসার এবং সিরিয়াল পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এখানেই শেষ নয়। গুলিস্তান থেকে গাজীপুরÑএই পথপরিক্রমায় এসব বাসকে আরো ছয়টি স্পটে চাঁদা গুনতে হয়। টাকার পরিমাণ ৩০০। অর্থাৎ, প্রতি যাত্রায় টার্মিনাল থেকে গাজীপুরে পৌঁছতে মোট চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ৮০০ টাকা। এই হিসাবে প্রতি মাসে চাঁদা ওঠানো হয় ৯০ লাখ টাকা।
চাঁদার টাকা সরাসরি কোনো বিশেষ ব্যক্তির পকেটে যায় না। ওই টাকা ৬টি পর্যায়ে ভাগাভাগি হয়, যার সিংহভাগ পায় সরকারি দল সমর্থিত বিভিন্ন মালিক-শ্রমিক সংগঠন। বাকিটা স্থানীয় রাজনৈতিক ক্যাডার, পুলিশ এবং স্থানীয় সন্ত্রাসী।
এ তো গেল একটি মাত্র রুটের একটি হিসাব। রাজধানীর প্রতিটি রুটের অবস্থা এক এবং অভিন্ন। এ ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোসলেম উদ্দিন বলেছেন, এটা মিথ্যাচার। তবে সাধারণ বাস মালিক-শ্রমিকদের অভিযোগ, যখন যে দল সরকারে থাকে, চাঁদার নিয়ন্ত্রণ সেই দলের পরিবহন সংশ্লিষ্ট সংগঠন এবং তাদের ক্যাডারদের হাতেই থাকে। বর্তমানে অবস্থা ভয়াবহ।
এই ভয়াবহতা থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই বললেই চলে। কেননা, আলসার থেকে রোগ এখন ক্যানসারে পরিণত হয়েছে। এখানে যত ওষুধই দেওয়া হোক না কেন, রোগ সারার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমরা মনে করি, অ্যান্টাসিড অথবা অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ হবে না। প্রয়োজন সার্জারি। অপারেশন করেই এই জটিল ক্রনিক ক্যানসার থেকে রাজধানীর গণপরিবহনকে বাঁচাতে হবে। একজন দক্ষ সার্জন আজ খুবই প্রয়োজন। আর এই প্রয়োজন মেটাতে একমাত্র সরকারই পারে সেই সার্জনের জোগান দিতে।
আমরা প্রতীক্ষায় রইলাম।
"