reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৮ মার্চ, ২০২৪

পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে

কোনো রান্না শুরু করার আগে কড়াইতে তেল দেওয়ার পরপরই সাধারণত যে উপাদানটি ব্যবহার করা হয়, সেটি হলো পেঁয়াজ। শুধু অন্য রান্নার অনুষঙ্গই নয়, সরাসরি কাঁচা, ভর্তা, আচার এবং সালাদ হিসেবেও পেঁয়াজ খাওয়া হয়। পেঁয়াজের রয়েছে বেশ কিছু স্বাস্থ্যগুণ। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ তো বটেই বিশ্বের প্রায় সব দেশেই প্রচুর চাহিদা রয়েছে পেঁয়াজের। তবে, মাঝেমধ্যে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের ‘ঝাঁজ’ এতটা বেড়ে যায় যে তা মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্তের ছুঁয়ে দেখার সুযোগ কম হয়!

গত বছরের ৭ ডিসেম্বর এক ঘোষণায় পেঁয়াজ রপ্তানি চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে ভারত। এতে ওই সময় পেঁয়াজের দাম বেড়ে গিয়ে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে দাঁড়ায়। রমজান উপলক্ষে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে ও দামের ঊর্ধ্বগতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতকে অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ২ মার্চ থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পায় বাংলাদেশ। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভারতীয় রপ্তানিকারকরা ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ পেঁয়াজ বাংলাদেশে রপ্তানি করবে। অথচ গত রবিবার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, তা অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়িয়েছে। এরই ফল হিসেবে রাতারাতি বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। অথচ কয়েক দিন আগেই ছোট কিছু চালান দেশে আসার খবরে দাম কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১২ এবং খুচরায় বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় থাকা বাংলাদেশ পণ্যটি আমদানিতেও রয়েছে ১ নম্বরে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় এ আমদানিনির্ভরতা। আর সেই সুযোগে সরবরাহ চেইনে সামান্য কমবেশি হলেই সুযোগ নেয় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। তবে চাহিদা বাড়ায় দামের ওপর প্রভাব পড়েছে। তারা বলছেন, ভারতের ঘোষণার পর কৃষকরা দাম বেশি চাইছেন। আর এর প্রতিক্রিয়ায় উৎপাদনের স্থান আর ঢাকায় আড়ত ও পাইকারিতে বেড়েছে দাম। খুচরাতেও পড়েছে প্রভাব। বড় বাজারের তুলনায় মহল্লার দোকানে প্রভাব বেশি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য মতে, ২০২২ সালে ৭ লাখ ২৭ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করে বাংলাদেশ। ওই বছর বিশ্বের আর কোনো দেশ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেনি। ২০২৩ সালের ১১ মাসে পেঁয়াজের আমদানি হয় ৮ লাখ ৬৪ হাজার টন। আবার জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে, পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। তথ্য মতে, দেশে পেঁয়াজের নিট উৎপাদন ২২ লাখ থেকে ২৩ লাখ টন। অন্যদিকে চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ থেকে ৩২ লাখ টন। তাই অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির পরও চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না।

বলা বাহুল্য, জীবনযাত্রায় বাড়তি ব্যয়ের কারণে দিশাহারা নিম্ন আয়ের মানুষ। দুঃখজনক হলো, সরকারের পক্ষ থেকে পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া সত্ত্বেও তা কার্যকর হয় না। এ অবস্থায় পণ্য ও সেবার দাম যাতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, সে জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর দুর্বলতার কারণেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বেপরোয়া মুনাফা করার সুযোগ পায়। সংশ্লিষ্টরা কঠোর হলে অসাধু ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগ পাবে না বলে আমরা মনে করি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close