reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৬ মার্চ, ২০২৪

খেজুরের দাম নিয়ন্ত্রণে চাই দৃঢ় পদক্ষেপ

পবিত্র মাহে রমজানের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। রোজার খাদ্য তালিকার একটি অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুর। রোজাদাররা সারা দিন পানাহারে বিরত থাকার পর ইফতারে রোজা ভাঙেন খেজুর মুখে দিয়ে। যদিও খেজুরের সঙ্গে রমজানের কোনো ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নেই। তবু এ ক্ষেত্রে এক ধরনের ভাবাবেগ কাজ করে। কারণ এই ফল দিয়ে ইফতার করতেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। কাজেই ইফতারে ফলটি মুখে দেওয়া সুন্নত। সে কারণেই রমজান মাসে খেজুরের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। বাংলাদেশে যেহেতু সুস্বাদু খেজুর হয় না, তাই সবই আমদানি করতে হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসে প্রায় ২০ ধরনের খেজুর। তবে খেজুরে দাম এবার বেশ চড়া।

বলা সংগত, রোজা ঘিরে পর্যাপ্ত খেজুর আমদানি করা হয়েছে। সরবরাহব্যবস্থা ঠিক থাকায় জোগানও পর্যাপ্ত। তবে খেজুর ব্যবসায় বাড়তি মুনাফা করতে নীরবে কারসাজি করা হয়েছে। নজরদারির অভাবে আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে বাড়িয়েছে দাম। কিছুদিন আগেও যে খেজুর কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছিল হাজার টাকার মধ্যে, মাস দু-একের ব্যবধানে এখন তা প্রায় আড়াই হাজার টাকায় উঠেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামেই। অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্ক বিভাগের অধিকমাত্রায় করারোপে বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। ফলে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের টানাহেঁচড়ায় অস্থিরতার ফাঁদে পড়েছে বাজার, যার মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের। গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর যে খেজুর ছিল ১৬০ টাকা, এবার সেই খেজুর ৩০০ টাকা ছাড়িয়েছে। কিছু কিছু খেজুরের দাম বেড়েছে দুই থেকে তিন গুণ। দামের হঠাৎ এ বৃদ্ধি সম্পর্কে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, গত বছর ৫ কেজির খেজুরে ডিউটি (শুল্ক) ছিল ৫০ টাকা, এবার সেই ডিউটি দিতে হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে ২১০ টাকা বেড়েছে শুল্ক। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, গত বছরের চেয়ে বর্তমানে দেশের বাজারে খেজুরের দাম বেড়েছে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ। অথচ গত বছর শুল্ক, কাস্টমস ডিউটি, রেগুলেটরি ডিউটি, ভ্যাট, অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম কর মিলিয়ে ৫৩ শতাংশ আমদানি বাবদ রাজস্ব দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এখন সেটি ১০ শতাংশ কমে ৪৩ শতাংশ হয়েছে। ফলে বড় ব্যবসায়ীরা সুবিধা পেলেও খুচরা ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতারা থাকছেন সুবিধাবঞ্চিত।

বলা বাহুল্য, শুল্ক কমানোর পর ব্যবসায়ীরা বন্দর থেকে দ্রুতই খেজুর খালাস শুরু করেছেন। কিন্তু এর পরও কম দামে খেজুর কিনতে পারছেন না ভোক্তারা। শুল্ক কমানো ও পর্যাপ্ত আমদানি সত্ত্বেও খেজুরের দাম কেন কমছে না, তা তদারকি করা প্রয়োজন। কারণ ডলার রেটের ঊর্ধ্বগতি ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ থেকেই শুরু হয়েছে। ইদানীং বরং কিছুটা কমে এসেছে। ফলে ডলার রেটের যে কথা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়। এ ছাড়া এ দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকেও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন বলেও আমরা মনে করি। কারণ রাজস্ব বোর্ড ঘোষণা দিয়েছে ১০ শতাংশ কর হ্রাস করা হয়েছে। কিন্তু এতে কত টাকা কমবে সেটা পরিষ্কার করেনি। ফলে এ ধোঁয়াশার সুযোগ নিচ্ছেন সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা। বাস্তবতা হলো এটাই। শুধু খেজুরই নয়, অন্যান্য দ্রব্যমূল্যও যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে স্বস্তিতে নেই সাধারণ মানুষ। সরকারকে অবশ্যই সব অব্যবস্থার বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close