আজহার মাহমুদ

  ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

মতামত

ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালোবাসি

ভালোবাসা ভালোবাসে শুধুই তাকে, ভালোবেসে ভালোবাসা বেঁধে যে রাখে। আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এই দিবসের আড়ালে প্রতি বছরই চাপা পড়ে থাকে সুন্দরবন দিবস। কিন্তু ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবন দিবস আড়ালে থাকার প্রয়োজন ছিল না। আমরা ভালোবাসা দিয়ে সুন্দরবনকে হৃদয়ের সঙ্গে বেঁধে রাখতে পারতাম। সুন্দরবন আমাদের ভালোবাসার একটা অংশ। আমাদের ফুসফুস, আমাদের এই বাংলা মায়ের প্রাণ, হৃৎপিণ্ড যাকে বলা হয় সেটা হচ্ছে সুন্দরবন। এই সুন্দরবন বাংলাদেশের জন্য একটা বড় নেয়ামত মনে করে সবাই। কারণ এটা প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম এক নিদর্শন। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি।

২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশের উদ্যোগে এবং দেশের আরো ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালিত হয়ে আসছে। যদিও আগেই বলেছি, ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের আড়ালে হারিয়ে যায় এ দিবসটি। এই দিবসটিকে যতটা উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে পালন করা হয়। সুন্দরবন দিবসকে ততটাই অবহেলা করা হয়।

আসুন না আমরা ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবনকেও ভালোবাসি। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালিত হয়ে আসছে। সুন্দরবন রয়েছে ৫ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ১৯৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১২৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫৭৯ প্রজাতির পাখি, ১২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ৩০ প্রজাতির চিংড়ি মাছ। এত কিছুর পাশাপাশি এই সুন্দরবন সব সময় আমাদের ত্রাতা হিসেবে থাকে। যেকোনো ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোনে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে।

সুন্দরবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের পরিবেশ। অথচ সুন্দরবনের গুরুত্ব অনুধাবন করতে আমরা ব্যর্থ। আমরা আমাদের সম্পদগুলো এজন্যই আমাদের সুন্দরবন দিবস নিয়ে এত উদাসীনতা, এত অবহেলা। প্রতিনিয়ত বনখেকোদের আগ্রাসনের ফলে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন আজ হুমকির মুখে।

নামমাত্র সুন্দরবন দিবস বা বইয়ের পাতায় লেখা থাকলেই হবে না। সুন্দর বনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বাঁচাতে, সুন্দরবনকে বাঁচাতে আমাদের সবার এগিয়ে আসতে হবে। সরকারকে এ ব্যাপারে আরো তৎপর হতে হবে। চোরাকারবারি, পশুপাখি শিকারি, ভূমিখোরদের থেকে সুন্দরকে বাঁচাতে হবে। বিভিন্ন সেমিনার, আলোচনা সভার মধ্যে এটা সীমাবদ্ধ রাখলে কখনো সুন্দরবনকে রক্ষ করা যাবে না। এজন্য সরকারের যতাযত পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি এর তাৎপর্য প্রান্তিক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে সবাইকে সচেতন করে তোলতে হবে।

বনের প্রতি অতিনির্ভরতা এবং মানুষের নির্বিচার আচরণে দিন দিন বিপন্ন হচ্ছে এর পরিবেশ ও প্রতিবেশ। গত ১৯ বছরে ৩১ বার আগুন লেগেছে সুন্দরবনে। পুড়ে গেছে প্রায় ১০০ একর বনভূমি। এসব অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়েছে একরের পর একর বনভূমির গাছপালা, লতাগুল্ম। মারা গেছে বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তু। আবাসস্থল হারিয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘এই আগুন একা একা লাগতে পারে না। প্রতি বছর একটা নির্দিষ্ট সময়ে এই আগুন লাগানো হয়। বনের মাঝখানে জলাশয়ে মিঠাপানির মাছ ধরতেই এই আগুন লাগায় সেখানকার কিছু মানুষ। এতে ক্ষতি হয়ে যায় আশপাশের এলাকারও। সবাই সবকিছু জানে, কিন্তু উদ্যোগ নেয় না। উদ্যোগ আগে থেকে নিলে এই আগুন লাগানো বন্ধ করা সম্ভব।’

জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া মারাত্মক হুমকির মধ্যে আছে আমাদের সুন্দরবন। সুন্দরবনকে বাঁচাতে প্রয়োজন সুন্দরবনের আশপাশে শিল্প-কারখানা বন্ধ রেখে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সব শ্রেণির মানুষকে। সুন্দরবনের সৌন্দর্য মানুষের মধ্যে তুলে ধরতে হবে। তাহলেই আমরা আমাদের প্রিয় এই সুন্দরবনকে রক্ষা করতে পারব। মনে রাখতে হবে সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচাবে। আমাদের দেশ অনেক ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা পায় শুধু এই সুন্দরবন থাকায়। নয়তো এসব ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ত বাংলাদেশের বুকে।

তাই আসুন, সুন্দরবনকে বাঁচাতে আমরা সবাই সজাগ হই। ভালোবাসা দিবসের এই দিনটাকে সুন্দরবনের জন্য উৎসর্গ করে আমরা দেশ এবং দেশের পরিবেশকে বাঁচাতে সাহায্য করি। সুন্দরবনকে ভালোবাসতে পারলেই ভালোবাসা দিবস সার্থক।

লেখক : প্রাবন্ধিক এবং কলাম লেখক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close