reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

শিক্ষার্থীর হাতে নির্ভুল বই তুলে দিতে হবে

পাঠ্যবইয়ের ভুল নতুন কিছু নয়। এটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এবারো এই ভুলের দায় এড়ানো যায়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, বারবার পাঠ্যবই নিয়ে এত অবহেলা কেন? পাঠ্যবই সম্পর্কে বেশ আগে থেকেই রয়েছে অন্তহীন অভিযোগ। নতুন বছরের প্রথম দিনে বই হাতে নিয়ে শিক্ষার্থীরা উৎসবে মেতে ওঠে। কিন্তু তাদের হাতে কি সেই নির্ভুল পাঠ্যবই তুলে দিতে পারছি আমরা?

পাঠ্যবইয়ে ভুলের জন্য প্রধান দায় কার? অবশ্যই পাঠ্যবইয়ের ভুলের জন্য প্রধান দায় লেখক-সম্পাদকের। বই চূড়ান্ত করার আগে যেসব শিক্ষক, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিশিষ্টজনের হাতে বইয়ের পাণ্ডুলিপি পাঠানো হয় এবং কর্মশালায় ডাকা হয়, তাদেরও দায় আছে। এতজন অভিজ্ঞ লোক একটি বই দেখার পরও ভুল থাকে, কারণ তাদের কাজের মধ্যে সমন্বয় থাকে না, দায়িত্বজ্ঞানেরও অভাব থাকে। এসব ভুল এড়ানোর সহজ উপায়, লেখকদের মধ্যে এবং লেখক-সম্পাদকের মধ্যে কাজের সমন্বয় ঘটানো। সম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি তৈরি হওয়ার পর লেখক-সম্পদককে একসঙ্গে বসতে হয় এবং পুরো বই পড়ে দেখতে হয়। সেটা করা হয় কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। পাঠ্যবইয়ের ভুলের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নবম শ্রেণির অনুসন্ধানী পাঠ্যবইটির অনেক বিষয় আংশিক বা হুবহু নেওয়া হয়েছে মিসরভিত্তিক সফটওয়্যার কোম্পানি প্রাক্সিল্যাবস ডটকমের ব্লগ, ভারতীয় কোচিং সেন্টার বাইজুসের ওয়েবসাইটসহ অন্য উৎস থেকে। বইটির ইংরেজি সংস্করণ তৈরিতেও ‘গুগল ট্রান্সলেটর’ ব্যবহৃত হয়েছে। বইটির সিংহভাগ চিত্রের কনসেপ্ট ইন্টারনেট থেকে হুবহু নিয়ে পুনঃচিত্রায়ণ করে বইটিতে ছাপানো হয়েছে। এ ছাড়া অসংখ্য শব্দ ভুল বানানে ছাপা হয়েছে।

এরই মধ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) মার্চ মাসে ভুল যাচাই করে সংশোধন দেওয়ার কথা জানিয়েছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, বইয়ে ভুলের বিষয়ে লেখক ও সম্পাদককে দায় নিতে হবে। পাশাপাশি বই লেখা ও সম্পাদনায় আরো সতর্ক থাকতে হবে। গত বছর থেকে দেশে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের বই যায়। চলতি বছর গেছে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এসব বইয়ের মধ্যে বিশেষ করে মাধ্যমিক স্তরের বইয়ে ভুলের পরিমাণ বেশি। বানানের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির প্রমিত বাংলা বানান রীতি অনুসরণের কথা বলা হলেও অনেক বানানেই সেই নীতি অনুসরণ করা হয়নি। পাঠ্যবইয়ের ভুলের জন্য দায় এনসিটিবি কর্তৃপক্ষেরও আছে। তারা পুস্তক প্রণয়নের জন্য যতটুকু সময় দেন, ততটুকু সময়ে ভালো কাজ তুলে আনা কঠিন। ফলে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের উচিত, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও সংশোধনের জন্য যথেষ্ট সময় হাতে রাখা। এনসিটিবির বইয়ে ভাষা-সম্পাদনার কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত। প্রাথমিক শাখার জন্য এটি আরো বেশি প্রযোজ্য। পাঠ্যবইয়ের ভাষা- তা বিজ্ঞান হোক আর গণিতই হোক, ওই শ্রেণির উপযোগী কি না, তা বিবেচনা করা দরকার। এ জন্য প্রতিটি বইয়ে ভাষা-সম্পাদনার কাজে আলাদাভাবে ভাষাদক্ষ শিক্ষককে যুক্ত করা প্রয়োজন।

পাঠ্যবই প্রণয়ন কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও সঠিক তদারকির অভাবে পাঠ্যপুস্তক থেকে ভুল ও অসংগতি দূর করা যাচ্ছে না। এসব ভুল ও অসংগতির জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। মার্চের শুরুতে পাঠাবইয়ের ভুলের সংশোধনী আসতে পারে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, আগামী বছর যাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে মানসম্মত ও নির্ভুল বই তুলে দেওয়া যায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক থাকতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close