reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

কৃষি জমিতে তামাক চাষ বন্ধ করতে হবে

তামাক যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এটি এখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ধূমপায়ী ব্যক্তি যেমন এই ক্ষতির শিকার, তেমনি তার আশপাশে যারা থাকেন অর্থাৎ পরোক্ষ ধূমপায়ী হিসেবে তারাও এই ক্ষতির শিকার হন। শুধু ব্যক্তি নন, ধূমপানের কারণে রাষ্ট্রকেও বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু দেশের বিভিন্ন এলাকায় যে হারে তামাক চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে, তা নিঃসন্দেহে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তামাক উৎপাদনকারী বড় বড় কারখানা চাষিদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে তামাক চাষে উৎসাহী করে তুলছে।

তামাকের চাষাবাদে শুধু যে মাটির উর্বরতাই নষ্ট হয় তা নয়, পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তো রয়েছেই। তাৎক্ষণিক লাভের আশায় তামাক চাষে আগ্রহী হন চাষিরা। তবে এর পরিণতি কী হবে, সে সম্পর্কে তারা অবহিত নন। বেশি লাভের জন্য বনভূমি উজার করে কৃষিজমি প্রস্তুত করে সেখানে তামাক চাষ হচ্ছে। এতে খাদ্য উৎপাদনের ওপর বিরূপ প্রভাব তৈরি করছে। চাষিরা বেশির ভাগ গরিব। তামাক কোম্পানির দাদনদের কাছে তারা জিম্মি। তামাক চাষ বন্ধে প্রশাসন, এনজিও ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সামাজিক আন্দোলন আরো জোরদার করা উচিত। কোনো নীতিমালা না থাকায় তামাক চাষ বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করারও কোনো নীতিমালা নেই। তবে তামাক চাষে ঋণ প্রদান বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন, ভর্তুকি মূল্যের সার ব্যবহার বন্ধে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কিছু ক্ষুদ্র প্রয়াস রয়েছে। কিন্তু এর দুর্বল তদারকি এবং বহুজাতিক তামাক কোম্পানির লোভনীয় প্রস্তাবে তামাক চাষ বন্ধে এসব প্রয়াস কোনো প্রভাব ফেলছে না। এ জন্য তামাক চাষ বন্ধে জোরালো সামাজিক আন্দোলন দরকার।

প্রতিদিনের সংবাদের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, কক্সবাজারের চকরিয়ায় বোরো মৌসুমে মাঠের পর মাঠজুড়ে যেখানে দেখা যেত সবুজ ধানখেত, সেসব ফসলের খেত এখন তামাকের দখলে। উপজেলার অন্তত সাতটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমিতে চাষ হচ্ছে পরিবেশ বিনষ্টকারী তামাক। শুধু ফসলি জমিই নয়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সংরক্ষিত বনভূমির খাসজমি ও মাতামুহুরী নদীর দুই তীরে চলছে এখন তামাকের আগ্রাসন। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, কৈয়ারবিল, বরইতলী, লক্ষ্যারচর, ফাঁসিয়াখালী ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নে ফসলি জমিতে তামাক আবাদ হচ্ছে। এ ছাড়া বমু বিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর ও কাকারা ইউনিয়নের বন বিভাগের জমিতে এবং মাতামুহুরী নদীতীরে জেগে ওঠা চরের জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। তামাক চাষের এলাকায়, বনাঞ্চলের আশপাশে এবং লোকালয়ে তৈরি হওয়া শত শত চুল্লিতে তামাক পোড়ানো হয়। এসব চুল্লির জ্বালানির জন্য বনাঞ্চল থেকে নির্বিচারে গাছ কাটা হয়। এতে উজার হচ্ছে বনজসম্পদ, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড় এখন ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হচ্ছে। একটি বিষয় লক্ষণীয়, তামাক চাষে কমছে আবাদি জমি। এভাবে চলতে থাকলে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দেবে। এ জন্য তামাক চাষ বন্ধে প্রশাসনকে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

কৃষি জমিতে তামাকের উৎপাদন যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। খাদ্য সংকট এড়াতে এর লাগাম টেনে ধরা উচিত। তামাক চাষের জমিকে ধান ও রবি শস্যের জমিতে পরিণত করতে যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন, তাই নিতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close