reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২০ জানুয়ারি, ২০২৪

গ্যাস সংকট দূর করা জরুরি

কয়েক বছর ধরে রাজধানীতে শীতের সময় গ্যাসের চাপ কম থাকে। এবার এই সমস্যা আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযোগ আসছে, গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আবাসিক এলাকায় দিনের অধিকাংশ সময় গ্যাস থাকছে না। গ্যাস না থাকার কারণে ঢাকার আশপাশের শিল্পাঞ্চলের জেনারেটর, ব্রয়লার অচল রয়েছে। ফলে উৎপাদনও বন্ধ রাখার কথা জানাচ্ছেন শিল্প মালিকরা। সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোয় গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় অপেক্ষমাণ গাড়ির বহর প্রতিনিয়ত দীর্ঘতর হচ্ছে।

প্রতিদিনের সংবাদের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ডেমরার আমুলিয়া, হাজীনগর, কোলাটিয়া, মিরপুরের পূর্ব শেওড়াপাড়া, শ্যামলী, পল্লবী, ভাসানটেক, কামরাঙ্গীরচর, রামপুরার বনশ্রী, গেণ্ডারিয়া, নবাবগঞ্জ, নারিন্দাসহ পুরান ঢাকার অনেক এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট রয়েছে। কোথাও দিনে চুলা জ্বলছে না। কখন গ্যাস আসবে- সেই অপেক্ষায় থাকেন গৃহিণীরা। অনেকেই লাকড়ির চুলায় রান্না করেন। কেউ হোটেল থেকে খাবার কিনে আনেন। ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গ্যাস সংকটের কারণে রাত ৩টা পর্যন্ত রান্না করতে হয়। তারা বলছেন, প্রতি মাসে বিল দিয়েও পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ এলাকায় গ্যাসের সংযোগ আছে, তবু এলপিজি ব্যবহার করতে হচ্ছে। এলপিজির ব্যয় বহন করাও তো সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। অবার গ্যাস সংকটের কারণে শিল্প-কারখানার উৎপাদনও কমেছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ।

জ্বালানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সহসা এ সংকট থেকে রেহাই মিলছে না। তবে মার্চের পর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে পারে। বর্তমানে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট পাওয়া যাচ্ছে আমদানি করা এলএনজি থেকে। বিশেষজ্ঞ ও খাতসংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সরকারের অতিমাত্রায় আমদানিপ্রীতির কারণে এ সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস অনুসন্ধানে চরম অবহেলার কারণে দেশি গ্যাসের উৎপাদন কমছে। উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানি করতে বিপুল পরিমাণ যে ডলারের প্রয়োজন, সেখানেও ঘাটতি রয়েছে। চলমান সংকট নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এ সংকট সাময়িক। গভীর সমুদ্রে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের সংস্কার কাজে হাত দেওয়ার কারণে এখন গ্যাসের সরবরাহ কিছুটা কম। আগামী মার্চে রোজা শুরুতে গ্যাস এবং বিদ্যুতের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছি। মার্চের আগেই এলএনজি টার্মিনাল দুটি পুরোপুরি সচল হয়ে যাবে। এছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। আশা করছি দুই বছরের মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট যোগ করা যাবে। এলএনজি আমদানিও বাড়বে। সবমিলিয়ে ২০২৬ এর মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দেওয়ার টার্গেট রয়েছে।

গ্যাসের অভাবে কারখানার উৎপাদন অনেক কমে গেছে। সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না। শিপমেন্ট শিডিউল ফেল করার কারণে ক্রেতারা ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে অর্ডার বাতিলের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এছাড়া আবাসিকে গ্যাস সংকট তো রয়েছেই। এ অবস্থায় তাৎক্ষণিক গ্যাস সংকট মোকাবিলায় এলএনজি আমদানি বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। তবে বর্তমানে ডলার মজুদের যে অবস্থা, এমন পরিস্থিতিতে সরকারের আমদানি বাড়ানোর সম্ভাবনাও কম। পরিস্থিতি যা-ই হোক, সরকার দ্রুতই সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close