reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪

ধান উৎপাদন ভালো হলেও চালের দাম বাড়ে কেন

মাসখানেক আগে বাজারে আমন ধান আসায় এখন চালের দাম কমার কথা। অথচ বাজারের চিত্র তা বলছে না। পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম কেজিতে ৬ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। সাধারণত নতুন মৌসুমের চাল বাজারে আসার আগে দাম বাড়তে দেখা যায়। কিন্তু এবার আমনের চাল সরবরাহের ভরা মৌসুমেও হঠাৎ দাম বাড়তে দেখা যাচ্ছে। অভিযোগ উঠছে, মুনাফা বাড়ানোর প্রবণতা থেকে মিলপর্যায়েই কৃষকদের থেকে কম দামে কেনা চালের মূল্য বাড়ানো হচ্ছে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ বছর আমনের উৎপাদন আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বাজারে আমনের চাল সরবরাহও হচ্ছে ডিসেম্বরের শুরু থেকে। এ সরবরাহ পুরোদমে থাকলেও এখন মিল, পাইকারি ও খুচরা- প্রায় সব পর্যায়ে চালের দাম বাড়ছে। আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধিতে ক্রেতারা বিস্ময় ও ক্ষোভের পাশাপাশি অসহায়ত্বের কথা বলছেন, আর বিক্রি-বাট্টা কমে যাওয়ার কথা জানাচ্ছেন খুচরা দোকানিরা। তারা অসময়ে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য চালকল মালিকদের দুষছেন। অন্যদিকে চালকল মালিকরা বাজারে ধানের সরবরাহ কমে যাওয়া এবং দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলছেন। এক তথ্যে জানা গেছে, দেশে মোট চাল উৎপাদনের ৪০ শতাংশ হয় আমন মৌসুমে। চলতি আমন মৌসুমে প্রায় ১ কোটি ৭১ লাখ ৭৮ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ৫৮ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে এ বছর ধানের আবাদ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কাটা হয়েছে ৫৭ লাখ ২৭ হাজার হেক্টর বা সাড়ে ৯৭ শতাংশ জমির ধান। এখান থেকে চাল উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ ৯৩ হাজার টন। গড় ফলন হয়েছে হেক্টরপ্রতি ২ দশমিক ৯৮ টন। গত বছরের শেষ দিকে পোকামাকড় এবং ঘূর্ণিঝড় মিধিলি ও মিগজাউমের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমির ধান। সে হিসেবে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার প্রায় ১ কোটি ৭৪ লাখ টন চাল উৎপাদন হওয়ার কথা রয়েছে। এ অনুযায়ী এবার আমনে উৎপাদন দাঁড়াতে যাচ্ছে রেকর্ড সর্বোচ্চে। তাতে এই মুহূর্তে চালের দাম বাড়ার কথা নয়। আকস্মিক এই বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেটের হাত রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কয়েক বছর ধরেই বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ছে। বাড়ছে মূল্যস্ফীতিও। ফলে বাজারে চালের মূল্যবৃদ্ধি খাদ্যাভ্যাসে চাপ ফেলবে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। গত মাসে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের নিয়মিত ‘খাদ্য নিরাপত্তা’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৭১ শতাংশ পরিবার খাদ্যপণ্যের দাম বেশি থাকা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন। বিশ্ববাজারে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। এজন্য ব্যবসায়ীরা হয়তো দেশের বাজারেও দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এ সময় দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। চালের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষ সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ দেশে মানুষের মোট খরচের প্রায় ৩০ শতাংশ হয় চালে। সবকিছুর দামই বাজারে বেড়েছে। চালের দাম বাড়লে তার প্রভাব পড়ে সব ধরনের মানুষের ওপরই।

দ্বিতীয় মেয়াদে খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে গত রবিবার খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ‘দেশে ধান উৎপাদন ভালো হয়েছে এবং খাদ্যের মজুদ পরিস্থিতিও ভালো।’ এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে চালের দাম বাড়ল কেন? চালের দাম বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে তৎপর হবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close