নাজনীন বেগম

  ০৭ জানুয়ারি, ২০২৪

দৃষ্টিপাত

নতুন বছরে নির্বাচন নব-সম্ভাবনার কর্মযোগ

২০২৪ সাল, সম্ভাবনাময় নতুন বছরের সূচনালগ্নে সবার চাওয়া-পাওয়ায় যেন হয় নবদিগন্তের আলোকিত সূর্যোদয়। অর্থাৎ ফেলে আসা বছরের অনাকাঙ্ক্ষিত আবর্জনা ছাড়াও বিভিন্ন বিপর্যয়ও যেন আর মাথাচাড়া দিতে না পারে। নতুন সময়ের তাৎপর্যে এই বছরকে নানাভাবে কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে দাঁড় করানোর স্বপ্ন দেখাও এক অনন্য স্বাজাত্যবোধ। ২০২৩ সাল বিভিন্ন গৌরবময় ইতিহাসের অবধারিত এক যাত্রাপথ, যা দেশের সীমানাকে বিশ্ব আঙিকে নিয়ে যায়।

আর দক্ষিণ এশিয়ায় তো কিছু কর্মযোগে একেবারে শীর্ষে চলে আসা বাংলাদেশের সত্যিই এক লড়াকু ইতিবৃত্ত। সামাজিক-রাজনৈতিক ঝড়-ঝাপটাও কম আসেনি। সমাজের অভ্যন্তরে গেড়ে বসা পেশিশক্তির প্রবল প্রতাপ সহ্য করাও নিত্যনৈমিত্তিক মহাদুর্যোগ। ২০২২ সাল পদ্মা সেতুকে নিয়ে হরেক বাগবিতণ্ডাও ২৫ জুন তার শুভ দ্বার উন্মোচন জাতির জন্য উপহার, অহঙ্কার যাই বলা হোক সার্বিকভাবে মানুষই তার সুফল ভোগ করে যাচ্ছেন। তেমন পরিক্রমাসহ শত সেতুর উদ্বোধন চমকে দেওয়ার মতোই। ২০২৩ সালের যাত্রাপথ উন্নয়ন অভিগামিতার অনবদ্য নিশানা তো বটেই।

২০২৩ সালে পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেললাইন সংযোগ স্থাপনের ফলে দক্ষিণ বঙ্গের অধিবাসীদের নতুন যাত্রাপথের যে শুভ সংকেত তাও দেশ-জাতির জন্য অভাবনীয় কর্মদ্যোতনা। সড়কপথের অবিচ্ছিন্নতায় রেল যাতায়াত ব্যবস্থা দ্বৈত কর্মযোগের মঙ্গলালোক তো বটেই। ২০২৩ সাল আরো এক উজ্জ্বলতম ইতিহাসের সাক্ষী হয়েই থাকল। বন্দরনগরী চট্টলাও সাজল অপরূপ এক উন্নয়ন জয়ধ্বনিতে। বীর চট্টলা! বহু বীরের রক্ত আর বিপ্লব জড়ানো এক লড়াকু ঐতিহাসিক নগর। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের রক্তস্নাত এক পিচ্ছিল কঠিন বাতাবরণ। আবার সমুদ্র, পাহাড় ও নদ-নদী পরিবেষ্টিত জলস্নাত চট্টগ্রামের সুশোভিত, নৈসর্গিক সৌন্দর্য আজও মোহিত হওয়ার মতোই।

অনিন্দ্যসুন্দর এই নগরীকে বঙ্গবন্ধুকন্যা নিয়ে গেলেন অপার আর এক সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে। আধুনিক আর উন্নত প্রযুক্তিতে আরো দীপ্যমান করলেন সমুদ্রকন্যা চট্টগ্রামকে বহু প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু টানেলের শুভ উদ্বোধনে। ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে সারা বাংলা যেন নতুন অরুণোদয়ের আলোকিত আভায় পূর্ণ থেকে পূর্ণতর হয়ে ওঠে। নদীমাতৃক বাংলার কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নবতর এক যুগসন্ধিক্ষণের মাইলফলকের মর্যাদায় অভিষিক্ত হতে সময় নিল না। পরে আরো এক যাতায়াত ব্যবস্থায় দেশ কোনো সীমানার দ্বারপ্রান্তে তাও অভাবনীয় চমক। বলা হচ্ছে, এই নবতর টানেলটি দক্ষিণ এশিয়ায়ও প্রথম। পরের ইতিহাস সমুদ্রনগরী কক্সবাজারকে নিয়ে।

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের এক নয়নাভিরাম শৌর্য। যুগ-যুগান্তরের ভ্রমণকারীদের আকর্ষণে অনবদ্য ভূমিকা কল্পনা নয়, নিরেট বাস্তবতা। অপরূপ এক স্বপ্নের সৌধ সমুদ্রনগরীকে আবিষ্ট করে দর্শকনন্দিত করাও যেন এক অনন্য পরিকল্পনা। ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করলেন তেমন এক অসাধারণ কর্মপ্রকল্পের আধুনিক ও নবযাত্রার দৃশ্যমান ফলক। নব-সম্ভাবনার ব্যতিক্রমী দ্বার উন্মোচনই শুধু নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় চমক লাগানোর মতো এক অনন্য রেলপথ। কক্সবাজারে ঝিনুকের আদলে তৈরি অনবদ্য যাত্রা সংযোগ অনেক ইতিহাসকে অতিক্রম করে জোর কদমে এগিয়ে গেল।

যাতায়াত ব্যবস্থায় সর্বোত্তম অর্জন এই যাত্রাপথটি নতুনই শুধু নয়, ব্যতিক্রমী ধারায় নিজস্ব ঐতিহ্যিক সম্ভারকেও অনবচ্ছেদ করে দিল। বদলে যাওয়া বাংলাদেশের আধুনিক নির্মাতা প্রধানমন্ত্রী বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয় প্রাঙ্গণ’ উদ্বোধন করে দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিতে কার্পণ্য করেননি। কারণ তখন চলছিল বিরোধী শক্তির হরতাল, অবরোধ আর নির্বাচন বানচাল করার হরেক ষড়যন্ত্র, যা আজ পর্যন্ত অব্যাহত প্রক্রিয়ায় চলমান রয়েছে। এক পাশে শত্রু পরিবেষ্টিত কণ্টকাকীর্ণ পথ ডিঙানো, অন্যদিকে দাঁড়ানো নিজের অপরিমেয় শক্তি।

সাধারণ জনগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পূর্ণ করার লক্ষ্যে তিনি এগিয়ে চলছেন দেশের মানুষকে আধুনিক ও প্রযুক্তির বাংলাদেশ উপহার দিতে। সেখানে কোনো বিরোধী অপশক্তি, সামাজিক জঞ্জাল আর রাজনৈতিক চরম অস্থিরতাকে তোয়াক্কাই করছেন না। বীরদর্পে সামনে এগিয়ে যেতে চারপাশের আবর্জনাকে পাশ কাটিয়ে নির্ভয়ে-নির্বিঘ্নে ছুটে চলা প্রধানমন্ত্রী সত্যিকারের দেশনায়কের অনবদ্য ভূমিকায় অধিষ্ঠিত। সফল কর্মযোগের অনবদ্য স্থপতি শেখ হাসিনা এখন মোকাবিলা করছেন আসন্ন জাতীয় সংসদের এক অনন্য পালাক্রম।

সংগত কারণে জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে হয়েছে নির্বাচনী অঙ্গীকার, যেখানে দলীয় ইশতেহার প্রকাশও ছিল সময়ের অপরিহার্য দাবি। ইতিমধ্যে দেশ ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে যাওয়ার পথে অনন্য পরিক্রমায় সামনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আধুনিক উন্নত জাতির কাতারে পৌঁছাতে সব ধরনের কর্মপ্রকল্প হাতে নিতে তিনি বদ্ধপরিকর। তেমন লক্ষ্যে দলীয় নতুন ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। সমাজের নানামাত্রিক জঞ্জালও দেশনায়ককে বিচলিত ও ভাবিত করে যাচ্ছে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ জনগোষ্ঠীর নাভিশ্বাস নিয়ে সরকারপ্রধান নতুন ইশতেহারে দিকনির্দেশনা দিতেও ভোলেননি।

নতুন প্রজন্মকে তাদের অনাগত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আধুনিক ও যুগোপযোগী কর্মসংস্থান তৈরির ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী সচেতন দায়বদ্ধতায় কিছু পরামর্শ ও পথনির্দেশ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কৃষি উৎপাদনব্যবস্থাকে আধুনিক ও নতুন সময়ের স্রোতে নেওয়ার প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও উঠে আসে নির্বাচনী ইশতেহারে। ধনে ধান্যে পুষ্পে ভরা আবহমান শ্যামল বাংলা কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় সভ্যতা সূর্য থেকেই পীঠস্থান হিসেবে চিহ্নিত। বিভিন্ন কৃষিজাত সম্ভার যুগ-যুগান্তরের প্রকৃতিরই অবারিত দান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে সময়ের দাবিতে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদনব্যবস্থা গতিশীল করতে সব ধরনের কর্মপ্রকল্প হাতে নিয়ে যাচ্ছেন। তেমন ধারাবাহিকতায় ইশতেহারেও দিকনির্দেশনা তুলে ধরেন। প্রযুক্তির সর্বশেষ অর্জনকে কাজে লাগানো হবে কৃষি সভ্যতাকে আরো উন্নততর অবস্থায় নিয়ে যেতে। ঘুষ, দুর্নীতি আর ঋণখেলাপির মতো অপরাধকে উৎখাত করাও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রত্যয় দৃশ্যমান হয়।

এবার প্রচারণায় দীর্ঘ ১৫ বছরের সাফল্য ছাড়াও ভুল-ভ্রান্তিকেও বিবেচনায় আনছেন সরকারপ্রধান। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন সরকার পরিচালনার ইঙ্গিতও শেখ হাসিনাকে উদ্দীপ্ত করে যাচ্ছে। পুরোনো বছরের জঞ্জাল যেমন সাফ করা জরুরি, পাশাপাশি নতুন সময়ে নব-অধ্যায়কেও ঢেলে সাজানো চলমান পরিস্থিতির ন্যায্যতা। দীর্ঘ মেয়াদে হরেক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যেসব অসংগতি এবং ভুলত্রুটি রয়ে যায়, তার দায়ভার নিজের কাঁধে নিতে মোটেও কার্পণ্য করলেন না। কোনো ভুলের পুনরাবৃত্তি তো নয়ই, বরং সঠিক সিদ্ধান্ত আর স্বচ্ছ পরিক্রমায় দেশের ১৮ কোটি মানুষকে আরো উন্নত বাংলাদেশ দিতে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ। সামনে শুধু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনই নয়, বরং নতুন এক বছরের শুভ পদার্পণও জাতির জন্য এক বিশেষ নির্দেশনা।

চমৎকার এক ইশতেহার যেন প্রধানমন্ত্রীকে উজ্জ্বলতম অবস্থানে নিয়ে যেতে জনগণের দ্বারপ্রান্তেই হাজির করাল। জনবান্ধব এই প্রধানমন্ত্রী গত ১৫ বছরে যা করেছেন, সবই জনগণের কল্যাণ আর ভালো থাকার জন্যই অবারিত করেন। বারবার যে কথা জনগণকে দিয়েছেন, এবারও তারই প্রতিধ্বনি হলো। গণমানুষকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে তিনি অতীতে যা করেছেন আগামীতেও তেমন পথে নির্বিঘ্নে হাঁটার ঘোষণা দেওয়া অত সহজ ব্যাপার নয়। তিনি পারলেন বটে। কারণ যা কথা দিয়েছেন এ পর্যন্ত সবটা না পারলেও অনেক কিছুই পেরেছেন।

নিজের ওপর এমন বিশ্বাস আর প্রত্যয় বঙ্গবন্ধুকন্যার অদমনীয় শক্তি আর সাহস, যা তিনি করে দেখাতে পারেন। আসলেই শুধু ২০২৩ নয়, কোনো পিছুটান তাকে হতাশ আর বিচলিত করে না। তা না হলে সপরিবারে পিতৃহত্যার পরও দেশটার জন্য যে মাত্রায় ভেবেছেন সেখানে অতুলনীয় এক রমণীয় সত্তা। হৃদয়ের নিভৃতে স্বজন হারানোর অন্তর্জ্বালা মোটেও মুছে যাওয়ার নয়। তেমন অগ্নিশিখাকে প্রশমিত করে স্থির লক্ষ্যে অবিচল থাকা অসাধারণ এক দিব্যদৃষ্টি আর মনোশক্তি। কঠিন এক যাত্রাপথ আলিঙ্গন করে সম্মুখ সমর মোকাবিলা করা সহজসাধ্য ছিল না। তারপরও অর্জনের পাল্লা ভারী করতে ঝড়ঝঞ্ঝাকে পদদলিত করেছেন বহুবার।

উন্নয়ন মহাপ্রকল্পের সম্প্রসারিত যাত্রাপথ আজও অনেক স্থানে নির্মাণাধীন। তেমন সমৃদ্ধির বাতাবরণও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলার যে দীপ্ত প্রত্যয় সেটাই প্রধানমন্ত্রীর অনবদ্য বৈশিষ্ট্য বলা যায়। যার প্রমাণ বিভিন্ন সময় জনগণকে উৎসাহিত আর সাহস জোগাতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করতে প্রধানমন্ত্রীকে আর প্রমাণ অবশ্যই দিতে হবে না। আজও দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিকে অসহনীয় করতে বিরোধী অপশক্তি যেন সম্মুখযুদ্ধে নেমেছে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর নতুন বছরের নবসম্ভাবনা দেশ যেন নিরন্তর কর্মযোগের সোপানে আরো অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।

লেখক : সাংবাদিক

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close