দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

মুক্তমত

স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ : সবার জন্য বিদ্যুৎ

আজকের যুগ হলো প্রযুক্তির যুগ। এ যুগে সেই জাতিই এগিয়ে থাকবে যে জাতির প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বেশি। প্রযুক্তি ও বিদ্যুৎ- এ দুটি একে অপরের অনুষঙ্গ। যে কারণে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে বর্তমান সরকারের আমলে শতভাগ বিদ্যুতায়নের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নেওয়া হয়। যে দেশে ২০০৯ সালের আগে বিদ্যুৎ সংকটে দেশের অনেক এলাকা হারিকেনের যুগে ফিরে যাচ্ছিল। সে দেশকে বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার পরিকল্পনা প্রায় অসম্ভব হলেও তা এখন সত্য হতে বসেছে। ২০০৯ সালে দেশের ৪৭ শতাংশ মানুষ ছিল বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায়। গড়ে অর্ধেক সময় লোডশেডিং ছিল নিয়তির লেখন। এক যুগ পর দুর্গম চরসহ সারা দেশের ৯৯.৫ ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায়। লোডশেডিংয়ের লজ্জা এখন বিরল বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একসঙ্গে ৭৭৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরো পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রগুলো উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন করা পাঁচ বিদ্যুৎকেন্দ্র হলো হবিগঞ্জের বিবিয়ানা-৩৪০০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামের জুলদায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট-২, মেঘনাঘাট ১০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, বাগেরহাটের মধুমতী ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সিলেটে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ২২৫ বিদ্যুৎকেন্দ্রে উন্নীতকরণ।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সরকার এ পর্যন্ত ১১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার ২৯৩ মেগাওয়াট। নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে অবদান রাখবে। দেশের প্রত্যন্ত এলাকায়ও শিল্প স্থাপনের সুবিধা সৃষ্টি করবে। দেশ এগিয়ে যাবে সামনের দিকে। ২০০৯ সালে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল পাঁচ হাজার মেগাওয়াটেরও কম। সে সময় সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। দেশ আজ সেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। শুধু উৎপাদনই নয়, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজটিও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এ পর্যন্ত ৯৯.৫ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন দ্বীপভূমিতেও বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রবিবার আরো পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে ২০০৯ সালে কাজ শুরুর পর নতুন ১১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হয়েছে।

দেশে কর্মক্ষম যুবক শ্রেণির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। তাদের কর্মসংস্থানের জন্য ব্যাপক শিল্পায়ন প্রয়োজন। আর শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজন ব্যাপক অবকাঠামোগত সুবিধা, জ্বালানি ও বিদ্যুতের সহজলভ্যতা। একসময় এ দেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের একটি প্রধান দাবি ছিল নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করা। সেই দাবি পূরণ করা হয়েছে। শিল্প-কারখানায় বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের গতি বেড়েছে। তদুপরি এলএনজি আমদানির মাধ্যমে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। মহাসড়কগুলোকে চার লেন, আট লেন করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীতে টানেলওয়ে নির্মাণ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। নদীখননের মাধ্যমে নৌপথের উন্নয়ন করা হচ্ছে। নতুন সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ বিদ্যমান বন্দরগুলোর সুবিধা অনেক বাড়ানো হয়েছে। অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে শিল্পায়নও দ্রুততর হচ্ছে। শুধু দেশীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগই নয়, বিদেশি বিনিয়োগেও গতি এসেছে। আর এসবই সম্ভব হয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কারণে। ৭৭৯ মেগাওয়াটের নতুন যে পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে, সেগুলো হলো ৪০০ মেগাওয়াটের বিবিয়ানা-৩ বিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রামের ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ইউনিট-২, নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট ১০৪ মেগাওয়াট, বাগেরহাটের ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সিলেটের ১৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্রকে ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে উত্তরণ।

দেশে বিদ্যুতের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে এবং তা বাড়তেই থাকবে। মেট্রোরেল বিদ্যুতে চলবে এবং ক্রমে পুরো রেলব্যবস্থাকে বিদ্যুতায়িত করার লক্ষ্য রয়েছে। যানবাহনও ক্রমেই বিদ্যুৎচালিত হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে শিল্পায়নও দ্রুত এগোতে থাকবে। বাড়ছে ব্যক্তিপর্যায়ের বিদ্যুতের চাহিদাও। তাই এই ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়েই দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনকে এগিয়ে নিতে হবে এবং সেভাবেই এগিয়ে চলেছে বিদ্যুৎ

পরিকল্পনা। এরপর গ্রিডে আসবে রূপপুরের পরমাণুবিদ্যুৎ। তৈরি হচ্ছে মাতারবাড়ী ও পায়রায় বিদ্যুৎ হাবসহ অনেক উদ্যোগ। সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুৎসহ অন্যান্য উদ্যোগও এগিয়ে চলেছে। আমরা বিশ্বাস করি, দেশে উন্নয়নের যে গতিধারা সূচিত হয়েছে তা সঠিকভাবেই এগিয়ে যাবে।

লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close