আজহার মাহমুদ

  ৩০ মার্চ, ২০২০

মুক্তমত

অসতর্কতার ফলাফল হতে পারে ভয়াবহ

করোনা শব্দটি লাতিন শব্দ। এই লাতিন শব্দ থেকে নামকরণ করা হয়েছে ভাইরাসটির। এর অর্থ হচ্ছে মুকুট। ভাইরাসটির আকৃতি দেখতে অনেকটা মুকুটের মতো হওয়ায়, এর নাম করোনা দেওয়া হয়েছে। এর উপরিভাগে প্রোটিনসমৃদ্ধ। এই প্রোটিন আক্রান্ত হওয়া টিস্যু নষ্ট করে দেয়। সাধারণত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রাথমিকভাবে বোঝা যায় না। তবে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর, অবসাদ, ঠা-া-সর্দি-কাশি, শুকনা কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলাব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়। আবার কিছু রোগীর ক্ষেত্রে উপরোক্ত সব উপসর্গ দেখা গেলেও জ্বর থাকে না। করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য কন্ট্রোলরুমে আইইডিসিআরের নম্বরে কল করতে হবে বা ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। এটি রোগীর শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমিত হয় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে অন্যজনের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সংক্রমণের ১৪ দিনের মধ্যে রোগীর শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা যাবে। তবে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ পাঁচ দিনের মধ্যে আবার কেউ কেউ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে বলছেন।

করোনাভাইরাসের কোনো ওষুধ ও প্রতিষেধক না থাকায় পরিচর্যা, সতর্কতা ও সচেতনতাই প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। এর জন্য বিশ্বব্যাপী দেওয়া হচ্ছে সতর্কবার্তা। প্রতিষেধক ও ওষুধ তৈরির জন্য বিভিন্ন দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। ভাইরাসটির উৎপত্তি সম্পর্কে এখনো সঠিক কোনো তথ্য নেই।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, হাঁচি-কাশিতে রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করতে হবে, বাইরে ঘোরাফেরা-ভ্রমণ, ভিড় জমানো হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি, যেখানে-সেখানে থুতু ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে, সাবান ও পানি দিয়ে ঘনঘন হাত ধুতে হবে, জামাকাপড় পরিষ্কার করতে হবে, প্রত্যহ গোসল করার সময় সাবান ব্যবহার করতে হবে, অপরিষ্কার হাত দিয়ে নাক-মুখ ও চোখ স্পর্শ করা যাবে না। গরম পানি দিয়ে গড়গড়া কুলি করতে হবে, গরম পানি পান করতে হবে, আইসক্রিম বা ঠা-াজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে, ঠা-া যাতে না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, যতটা সম্ভব সূর্যের আলোতে থাকতে হবে, অসুস্থ পশুপাখি থেকে দূরে থাকতে হবে, মাছ-মাংস ভালোভাবে সেদ্ধ করতে হবে, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে, কেউ আক্রান্ত হয়েছে- এমন সন্দেহ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং রোগীকে হাসপাতালে বা ঘরে নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে। সাধারণত লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। সঠিক সময়ে সঠিক সেবা ও চিকিৎসা পেলে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।

সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটাকে মহামারি বলে আখ্যায়িত করেছে। রোগটি প্রথমে চীনে ধরা পড়লেও এখন প্রতিদিনই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। বেশি আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে চীন, ইতালি, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও

যুক্তরাজ্যসহ কটি দেশ রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বের ১৭৬টি দেশে এই ভাইরাস

ছড়িয়ে পড়েছে। এ যাবৎ ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষ এ রোগে মারা গেছে আর তিন লাখেরও বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ৮৫ হাজারেরও বেশি মানুষ এই রোগ থেকে সুস্থ হয়েছেন।

সময়ে সময়ে এ পৃথিবীতে করোনার চেয়েও ভয়াবহ অনেক রোগ যেমনÑ ইনফ্লুয়েঞ্জা, এইডস, সার্স-মার্স, জিকা, গুটিবসন্ত, পোলিও, ইবোলায় কোটি কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে কিন্তু এখনকার মতো এত ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়নি। করোনায় মৃত্যুর হার কম হলেও বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশেও রয়েছে তার

আতঙ্ক। ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে। বাংলাদেশ সরকার দেশে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দশদিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে। নিরাপত্তার কথা ভেবে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিলেও অনিরাপদভাবে চলাফেরা করছে দেশের মানুষ। তবু এই বাধা-নিষেধ কজন মানছে, সেটাই চিন্তার বিষয়। এভাবে অনিরাপদ জনস্রোতের পথে পা বাড়ালে মারাত্মক ক্ষতি হবে নিজেদেরই। সেই সঙ্গে দেশের পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ।

শুধু তাই নয়, আমাদের দেশে কিছু চরম অসৎ, অসাধু ও সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা বিপদের সময়ে ব্যবসায়িক লাভ খোঁজেন এবং যেকোনো মূল্যে তা আদায়ও করে নেন। এ ক্ষেত্রে তারা কোনো ধর্মীয়, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের ধার ধারেন না। মাস্কের দাম কয়েক সেকেন্ডের বিনিময়ে তিন গুণ বেড়ে গেল। আর আমরা হুজুগে বাঙালির মতো এ ধরনের দাম দিয়ে কিনছি। এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম করা হয়েছে বাড়তি। এভাবেই দেশের মানুষের বিপদের সময় শত্রু হয়ে দাঁড়ায় এসব অসৎ ব্যবসায়ীরা। তাদের ভেতর নৈতিকতা, মানবতা, মনুষ্যত্ববোধের ছিটেফোঁটাও নেই, তার জ্বলন্ত প্রমাণ এসব ব্যবসায়ী।

এত কিছুর পরও দেশের মানুষের কাছে অনুরোধ সবাই যেন সচেতন থাকেন, নিরপদ থাকেন। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে থাকা যাবে না। মনে রাখবেন আপনার ভালোমন্দ আপনাকেই দেখতে হবে। কে কী করছে সেটা ভেবে আপনিও বেপরোয়া হবেন না। আপনি আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। প্রবাসী কেউ আশপাশে থাকলে তাদের প্রতি নজর রাখুন। বাইরে ঘুরাফেরা করলেই গোপনে প্রশাসনের কাছে জানিয়ে দিন। এ সময় এগুলোই হচ্ছে প্রথম ও প্রধান কাজ।

লেখক : প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close