(পূর্ব প্রকাশের পর)

  ১৭ জানুয়ারি, ২০২০

ধর্ম ও সমাজ

ওলামায়ে কেরামদের মতে কদমবুচি বা পদচুম্বন

আর আমরা জানি ইমাম বুখারি (র.)-এর নিজের মতামত তার সংকলিত কিতাবের অধ্যায় রচনার মধ্যেই নিহিত। এ মর্মে বুখারি শরিফের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকার হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (র.) বলেন, ইমাম বুখারি (র.)-এর ফিকহ (তথা অভিমত) হলো তার তারজামাতুল ভাব তথা অধ্যায় বিন্যাস (ফাতহুল বারি ফি শরহিল বুখারি)। ইমাম মুসলিম (র.)-এর মতে, ইমাম মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ (র.) শুধু কদমবুচি জায়েজই বলতেন না; বরং নিজে তা আমল করতেও উদ্বুদ্ধ ছিলেন। যেমন ইমাম আযযাহাবী কৃত ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’তে হয়েছে, মুহাম্মদ ইবনে হামদুন ইবনে রুস্তুম (র.) বলেন, আমি ইমাম মুসলিম (র.) কে ইমাম বুখারি (র.)-এর কাছে এসে বলতে শুনেছি, তিনি বলছেন, ‘হে উস্তাদদের উস্তাদ, হে মুহাদ্দিসদের সর্দার, হে হাদিসের ডাক্তার! আমাকে আপনার কদমবুচি করার সুযোগ দিন’ (সিয়ারু আরামিন নুবালা)।

ইবনে বাত্তাল (র.)-এর মতে, ইমাম আবহারী (র.) বলেন, নিশ্চয়ই ইমাম মালেক (র.) কদমবুচিকে অপছন্দ করেছেন। কেবল যদি তা যাকে করা হবে তার মধ্যে অহংকার থাকে। আর যদি কোনো মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের মানসে অপর মানুষকে তার জ্ঞান বা দীনদারি বা মর্যাদার কারণে তার হাত বা চেহারা অথবা শরীরের কোনো অঙ্গ; যা ঢাকা ফরজ নয়, এমন অঙ্গে চুমু দেয়, তবে তা জায়েজ হবে (শরহুল বুখারি)। ইমাম নববী (র.)-এর মতে, বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও শাফেয়ি মাযাবের ফকিহ ইমাম মহিউদ্দীন নববী (র.) বলেন, নেককার, দুনিয়াবিমুখ, আলেম এবং এ ধরনের আখেরাতমুখী মহান ব্যক্তির হাত চুম্বন করা মুস্তাহাব। আর তাদের মাথা ও পা চুম¦ন করাও অনুরূপ (আল মাজমু শারহুল মুহাজজাব)।

ইবনে মুফলিহ (র.)-এর মতে, শায়খ ইবনে তাইমিয়ার প্রিয় ছাত্র, বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও হাম্বলী মাযাবের ফকিহ ইবনে মুফলিহ (র.)-এর মতে কদমবুচি জায়েজ। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আবু উবায়দা (রা.) একবার উমর (রা.)-এর হাত কাছে নিয়ে চুমু দিতে চাইলেন। এতে উমর (রা.) তা গুটিয়ে নিলেন। তখন তিনি চুমু দেওয়ার জন্য তার পা ধরলেন। উমর (রা.) তখন বললেন, আমি হাত চুমু দিতে দিইনি, এখন পা চুমু দিতে অনুমতি দেই কেমন করে (আল আদাবুশ শরঈয়্যা)। এ ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে, কদমবুচি জায়েজ। তা না হলে আবু উবাইদা (রা.) এটা করতে চাইতেন না। আর উমর (রা.) নিষেধ করেছেন তার স্বভাবজাত বিনয়ের কারণে।

ইবনে হাজার হায়তামী (র.)-এর মতে, বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকিহ ইবনে হাজার হায়তামী (র.)-এর মতে, কদমবুচি জায়েজ। তিনি বলেন, আলী (রা.) আব্বাস (রা.)-এর হাত ও পা চুম্বন করেছেন এবং বলেছেন, হে চাচা আপনি আমার ওপর খুশি হয়ে যান (আল ফাতওয়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুবরা)। বিশ্ববিখ্যাত হানাফি ফিকহ সংকলন ফাতওয়ায়ে শামীর ‘কিতাবুল হায্রি ওয়াল ইবাহাতি মুনাছাবাতুহু জহিরতুন’-এর ‘ফাসলুন ফিন নাযরি ওয়াল মাছছি’ নামক অধ্যায়ে কদমবুচিকে জায়েজ বলা হয়েছে (রদ্দুল মুহতার)।

বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ, আহলে হাদিস শায়খদের মান্যবর মুরব্বি তিরমিজি শরিফের ব্যাখ্যাকার আবদুর রহমান মুবারকপুরি তিরমিজিতে বর্ণিত কদমবুচির হাদিস উল্লেখ করে বলেন, ‘আর হাদিসটি হাত ও পা চুম্বন করা জায়েজ হওয়ার প্রমাণ বহন করে’ (তুহফাতুল আহওয়াজি)।

মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন-এর মতে, কদমবুচি করা জায়েজ। মোটকথা এ দুই ব্যক্তি নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত ও পা চুম্বন করেছেন। আর নবীজী তাদের অনুমতি দিয়েছেন। তাই এটা সম্মানী ব্যক্তি ও আলেমে দীনের হাত ও পা চুম্বন জায়েজ হওয়ার প্রমাণ। অনুরূপ মা-বাবার হাত ও পা চুম্বন করাও জায়েজ। কেননা, তাদের অধিকার আছে এবং এটা বিনয়ের বহিঃপ্রকাশ। চলমান...

লেখক : ডা. কারি মাওলানা

শেখ সৈয়দ ওবায়দুল্লাহ আহাম্মেদ

পীরসাহেব মাধবদী রহমানিয়া দরবার শরিফ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close