ইফতেখার আহমেদ টিপু

  ২৮ অক্টোবর, ২০১৮

নিবন্ধ

দারিদ্র্যবিমোচনে বিনিয়োগ

দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশের সাফল্য দুনিয়ার অন্য সব দরিদ্র দেশের জন্য অনুকরণীয় মডেলে পরিণত হয়েছে। গত আট বছরে দেশের ১ কোটি ১৫ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার শেকল ছিন্ন করে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতির দেশ। স্বাধীনতার পর গত ৪৭ বছরে দেশের জনসংখ্যা ৭ কোটি থেকে বেড়ে ১৭ কোটি ছোঁয়ার পথে। তার পরও বাংলাদেশ দারিদ্র্যবিমোচনে নজরকাড়া সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছে। এর পাশাপাশি স্বীকার করতে হবে দেশে এখন হতদরিদ্রের হার ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। সংখ্যার হিসেবে ৩ কোটি ৮৮ লাখ মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে।

বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অনুযায়ী ওই হার ২০১৫ সালের মধ্যে অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশ ২০১২ সালে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ অতি দারিদ্র্য বিদায় করতে চায় বাংলাদেশ।

এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনশীলতা এবং রেমিট্যান্স। পাশাপাশি শহর থেকে অনেক অর্থ এখন গ্রামে যাচ্ছে, যা দারিদ্র্যবিমোচনে প্রভাব ফেলছে। সরকারকে সময়মতো এসডিজির লক্ষ্য অর্জন করতে হলে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার বাড়াতে হবে।

২০১০ সালের জরিপে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় হিসাব করলে প্রায় পাঁচ কোটি। আর সর্বশেষ ছয় বছরের ব্যবধানে দারিদ্র্যের হার কমেছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অবশ্য দারিদ্র্য কমার এ হার আগের ছয় বছরের চেয়ে কম। অর্থনীতিবিদদের মতে, গত ছয় বছরে যে হারে দারিদ্র্য কমেছে, সে হারে কর্মসংস্থান হয়নি। এ সময়ে মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়েছে। একই সঙ্গে প্রবাসী আয়ও কমে গেছে। অন্যথায় দারিদ্র্যবিমোচনের চিত্র সে অন্য রকম হতে পারত তা সহজে অনুমেয়। সরকারের তথ্যানুসারে, ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির জন্য জিডিপির ৩৫ শতাংশ বিনিয়োগ দরকার। অথচ বিনিয়োগ এখন ৩১ দশমিক ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ২৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। দারিদ্র্যবিমোচনে সাফল্য অর্জিত হলেও বেসরকারি বিনিয়োগ আশাব্যঞ্জক না হওয়ায় তা কতটা টেকসই, সেটি সংশয়ের ঊর্ধ্বে নয়। কর্মসংস্থানের সুযোগ কাক্সিক্ষত হারে বৃদ্ধি না পাওয়ায় এ ক্ষেত্রে হতাশা থেকেই যাচ্ছে। দেশে সরকারি খাতের বিনিয়োগ মোটামুটি সন্তোষজনক হলেও বেসরকারি খাতে সন্তুষ্টির অবকাশ কম। দারিদ্র্যবিমোচনে প্রত্যাশিত সাফল্য পেতে হলে বেসরকারি কর্মসংস্থানে গতি সৃষ্টি করতে হবে। বিনিয়োগবান্ধব নীতি প্রণয়ন শুধু নয়, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও তার প্রতিফলন যাতে হয়, সে বিষয়টিও জরুরি।

দারিদ্র্যবিমোচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে ধারাবাহিকতা তা এই অঞ্চলের ভারত, পাকিস্তান ও ভুটানের চেয়ে অনেক ভালো। কাক্সিক্ষত বৈদেশিক সহায়তা ছাড়াই বাংলাদেশ স্বল্প সময়ের মধ্যে দারিদ্র্যবিমোচন, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং শিশুমৃত্যু কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। বিশেষ করে চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূলে উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কারণে বিশ্বে এখন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। এ ঘটনা বাংলাদেশের সাফল্য ও অগ্রগতির প্রেক্ষাপটে মাইলফলকই বলা যায়। বলা হয়, দারিদ্র্যবিমোচন হচ্ছে দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পেছনে সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রম, বেসরকারি পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগ এবং একই সঙ্গে সামাজিক উদ্যোগও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এখন এ প্রক্রিয়াকে আরো ত্বরান্বিত করতে পারলে বিশ্বে আমাদের অবস্থান আরো সুদৃঢ় হবে।

লেখক : চেয়ারম্যান, ইফাদ গ্রুপ

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close