মোহাম্মদ আবু নোমান

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

মতামত

অ্যাপ ও চা খাওয়ার গল্প

ইংরেজরা নাকি বিনা পয়সায় চা খাওয়াতো। এরপর মানুষ যখন চা খাওয়া শিখল...তখন আর চা ফ্রিতে জোটে না...এখন টাকা দিয়ে কিনে খাও...! ব্রিটিশরা যেমনিভাবে বাঙালিদের চা খাওয়ায়ে গেছে! তেমনি আধুনিক সংস্করণ ও অ্যাপ সেবার নামে বিকাশের গ্রাহকদের এখন থেকে হাজারে আড়াই টাকা বেশি গুনতে হবে। অ্যাপ চালুর মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় বিকাশ কর্তৃপক্ষ চার্জে ছাড় তুলে নিল। সেই ব্রিটিশদের হুবহু অনুকরণ, অনুসরণ ও কূটনীতিক চাল খেলেÑপ্রথমে সাধারণ জনগণকে চার্জ কমানোর লোভ দেখিয়ে... অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলে... রোস্ট-রেজালা-মুরগি খাওয়ার লোভ দেখিয়ে, এখন হাজির পচা ডাল ও আলু ভর্তা নিয়ে! মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে মার্কেট পাওয়ার পর সব ভুলে গিয়ে, রক্ত চোষা এনজিওর মতো, ছাড় তুলে নিয়ে চার্জ বাড়াল বিকাশ অ্যাপ। এ যেন ‘মগের মুল্লুুকের মতো’, যা ইচ্ছা তাই করে, কোনো জবাবদিহিতার পরোয়া না করে ‘গাছে তুলে মই কেড়ে নেওয়া, আর কি!’

বিকাশ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন! আপনাদের সিকিউরিটির মান কতটুকু বেড়েছে? এর আগে বিকাশের কারিগরি ত্রুটির কারণে লাখো জনগণ টাকা হারিয়েছে, যা লিখতে গেলে বড় একটি কিতাব হয়ে যাবে। ধরো মারো খাও নীতি হলে আমাদের আর কী করার আছে! এ দেশের সর্বক্ষেত্রে এটাই যেন নিয়তি। এসব নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা আছে কি? দেশের সহজ, সরল সাধারণ ও বিশেষত কম শিক্ষিত মানুষ পেয়ে এসব ধূর্ত ও চালাক শ্রেণির মানুষরা আজ অর্থ কামিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। আর দেশের কর্তৃপক্ষ ও নেত্রীস্থানীয় ব্যক্তিরা নিয়মিত মাশোহারা পেয়ে চুপ করে থাকলে সাধারণ জনগণের আর কিছুই করার নেই। এখন চাকরি ক্ষেত্রে মেধার মূল্যায়ন নেই, লাগে ঘুষ কিংবা মামা-ভাগ্নের সম্পর্কের মতো জাদুর ছোঁয়া। একটা মেথর নিয়োগ থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিয়োগে চলে বাণিজ্য আর অপরিসীম দুর্নীতি। ঠিকাদারদের মন্ত্রী, আমলা, ইঞ্জিনিয়ার, স্থানীয় মস্তানদের পার্সেন্টেজ ও চাঁদা দিয়ে কাজ করতে হয়। রাজনীতিবিদের গোয়েবেলসীয় কায়দায় মিথ্যাকে সত্য এবং সত্যকে মিথ্যা বলে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়বে না। অবৈধ লোন দিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা পয়সা কামানো। জাল সার্টিফিকেটে শিক্ষকতা, ভুয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। এমনিতর শতসহস্র বাঁধ ভাঙা অনৈতিক ঘটনা যেখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার, সেখানে বিকাশ কর্তৃপক্ষ চার্জ না বাড়িয়ে পিছে থাকবে কোন যুক্তিতে?

প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে চার্জ বা ফি যখন উত্তরোত্তর কমানোর কথা, তখন বিকাশ গ্রাহকদের কাছ থেকে উল্টো সুযোগ নিয়ে তাদের ব্যবহার করছে। গ্রাহকদের অ্যাপে ঢুকিয়ে নিয়ে আবার চার্জ বাড়িয়ে, সেবার বদলে বিকাশ এখন যেন জনগণের গলার কাঁটা! যা সম্পূর্ণই প্রতারণা, অন্যায় ও অনৈতিক। তথ্য মতে, অ্যাপের মাধ্যমে ক্যাশ আউটের ক্ষেত্রে এখন থেকে গ্রাহককে হাজারে আড়াই টাকা বেশি গুনতে হবে। অর্থাৎ গ্রাহককে এখন চার্জ দিতে হবে হাজারে ১৭.৫ টাকা। অ্যাপ চালুর পর যা ছিল ১৫ টাকা। আগে যে চার্জ ছিল তা মোটেই কম ছিল না। তবু সর্বসাধারণ সাধারণ প্রক্রিয়ায় বিকাশের অ্যাপের মাধ্যমে টাকা লেনদেন যখন সহজভাবে মেনে নিয়েছে। গ্রাহকের কাছে জনপ্রিয়তার দিকটি ভেবে তাদের উচিত ছিল চার্জ কমানো। কিন্তু হঠাৎ বিকাশ কর্তৃপক্ষ যে চার্জ বাড়াল, এটা কতটুকু ঠিক হয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবে বলে আশা করি। তাই আমরা মনে করি, আগের অবস্থানে ফিরে এসে, বিকাশ কর্তৃপক্ষ জনগণকে ঠকাও! এই নীতি পরিহার করবে। এ ছাড়া বিকাশ কর্তৃপক্ষেরও ভেবে দেখা উচিত, বিকাশ ছাড়াও এ দেশের মানুষ বেঁচে ছিল, অর্থের লেনদেনও হয়েছে। বর্তমানে বিকাশের বিকল্পও এ দেশে আছে। এখন দেশের অজপাড়াগাঁয়েও ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা ছাড়াও রকেট অ্যাকাউন্ট, ডাচ্-বাংলাসহ টাকা লেনদেনের বৈধ মাধ্যম রয়েছে। এরপরও জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা হারানোর পর অধিকাংশই যদি বিকাশকে বয়কট করলে তাদেরই বেশি ক্ষতি হবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close