দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ১৮ জানুয়ারি, ২০১৮

উন্নয়ন মেলা

জনসম্পৃক্ততাই মূল শক্তি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার একযোগে দেশের ৬৪টি জেলায় আয়োজিত উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন করেছেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। তিন দিনব্যাপী এই উন্নয়ন মেলার উদ্দেশ্য হলো, দেশের চলমান উন্নয়ন সাফল্যকে জনগণের সামনে তুলে ধরে সরকারের উন্নয়নকাজের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত করা। উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেখতে চাই। সরকার দেশের উন্নয়নের যে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে তার সুফল পাচ্ছে জনগণ। উন্নয়ন কর্মকা- যাতে সঠিকভাবে পরিচালনা করা হয় সে জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের উন্নয়ন সার্বিকভাবে সব মানুষের, বিশেষ করে গ্রামের মানুষের জন্য। গ্রামের মানুষের উন্নয়নের জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণ, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতিসহ আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি যেন বিশ্বদরবারে সম্মানজনক স্থানে পৌঁছাতে পারি। সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচিগুলো যেন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়, সে জন্য সবার সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যেসব উন্নয়নকাজ করতে পেরেছি ও করার পদক্ষেপ নিয়েছি সেগুলোর ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করতে হবে। সরকারের উন্নয়ন হচ্ছে জনগণের উন্নয়ন, তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের উন্নয়ন। উন্নয়ন মেলা উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য দেশের মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা। সেহেতু যেকোনো উন্নয়ন কর্মকা-ে জনগণকে সম্পৃক্ত করা গেলে তার সাফল্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। টেকসই উন্নয়নেরও সহায়ক হয় উন্নয়নকাজে জনগণের অংশগ্রহণ। উন্নয়ন মেলা এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে ব্যাপকভাবে আশা করা হচ্ছে। উন্নয়ন মেলার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের জন্য কী কী কাজ করা হচ্ছে সে সম্পর্কে মানুষ জানার সুযোগ পাবে। মানুষ তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে কী করলে ভালো হয় সে ব্যাপারে সবার মত নেওয়া সম্ভব হবে। কৃষক শ্রমিক জনপ্রতিনিধি সবার মতামতের ভিত্তিতে সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পাবে। উন্নয়ন মেলা জনসম্পৃক্ততা সৃষ্টিতে অবদান রাখলে সাধারণ মানুষের মধ্যে উন্নয়ন সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা করা যায়।

কয়েক বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতা, ধ্বংসাত্মক তৎপরতা ও বিচ্ছিন্ন জঙ্গি হামলা সত্ত্বেও বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। তারই স্বীকৃতি মিলছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপ কিংবা পূর্বাভাসেও। লন্ডনভিত্তিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান বিএমআই রিসার্চ ভবিষ্যতের ১০টি উদীয়মান বাজারকে চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী গার্মেন্ট ও কৃষিভিত্তিক পণ্য রফতানি করে দেশটি ক্রমেই জোরালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ এখনই তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ। একই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। তার মতে, বাংলাদেশের অগ্রগতি চমৎকার। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার এমন আশাবাদের প্রতিফলন দেখা যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও ওষুধ রফতানি করেছে। আর তা নিয়ে বাংলাদেশ যেসব দেশে ওষুধ রফকানি করে তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৬টিতে। জাহাজ বা নৌযানসহ অন্যান্য উৎপাদিত পণ্য রফতানিতেও বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। জনস্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, শিক্ষা, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, নারীর উন্নয়নসহ সামাজিক নানা সূচকেও বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রশংসা পাচ্ছে। ধরে নেওয়া যায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা তার অর্থ খুঁজে পাচ্ছে।

বাংলাদেশ যে এগিয়ে চলেছে তা বাংলাদেশের মানুষ নিজের চোখেও দেখছে। এত দিন যা ছিল শুধুই স্বপ্ন বা কল্পনা, সেই পদ্মা সেতু এরই মধ্যেই দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। যে পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংক ফিরে গিয়েছিল, সেই বিশ্বব্যাংকই আজ তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ঋণ প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য বড় ধরনের ঋণ দিয়েছে। আস্থা বাড়ছে অন্যান্য ঋণদানকারী সংস্থারও। ধারণা করা হচ্ছে, পদ্মা সেতু এবং এই বন্দর পাল্টে দেবে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা। বংশানুক্রমে চরম বঞ্চনায় থাকা এখানকার সাড়ে তিন কোটি মানুষ নাগাল পাবে সমৃদ্ধ জীবনের। এরই মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন সড়ক চালু হয়েছে। পদ্মার দুই পাড়ে আরো দুটি চার লেন সড়কের নির্মাণকাজ চলছে। পদ্মা সেতু হয়ে রেললাইন যাবে যশোর পর্যন্ত। পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের পরিকল্পনা এগিয়ে চলেছে। এখন বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই দেশে। সমুদ্রসীমা নিয়ে সব বিরোধের অবসান হয়েছে। সমৃদ্ধ বঙ্গোপসাগরে অর্থনৈতিক কর্মকা- বাড়ানোর উদ্যোগ চলছে। এসবই বাংলাদেশের এগিয়ে চলার চিত্র। এই ধারা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। রাজনৈতিক বিরোধ পৃথিবীর সব দেশেই আছে। তবে তা যেন ধ্বংসাত্মক না হয় এবং দেশের উন্নয়নকে ব্যাহত না করে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist