reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৪ জানুয়ারি, ২০২৪

‘দক্ষ ভেটেরিনারি গ্র্যাজুয়েট তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছি’

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) চারটি অনুষদের মধ্যে অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন (এএসভিএম) অনুষদ অন্যতম। এই অনুষদ ও ভেটেরিনারি মেডিসিন পড়াশোনার নানা বিষয়ে কথা বলেছেন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কে বি এম সাইফুল ইসলাম। দেশে পোষা প্রাণী চিকিৎসা ও গবেষণায় তার সুখ্যাতি রয়েছে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো. আব্দুল্লাহ

ডিন হিসেবে আপনি কত দিন আছেন? অনুষদের উন্নয়নে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?

আট মাস ধরে ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। অনুষদকে গুছিয়ে নিতে শুরু করেছি। শিক্ষকদের জন্য পেডাগোজি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। ভেটেরিনারি টিচিং হসপিটাল এবং নবনির্মিত পোলট্রি শেড চালু হয়েছে। নারীশিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্য অটোমেটেড স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন সমন্বিত ফিমেইল কর্নার চালু, ইন্টার্ন শিক্ষার্থীদের জন্য একাধিক সেমিনার এবং বিদেশি বিশেষজ্ঞ এনে ট্রেনিং করানোসহ ইন্টার্নশিপে চারটি দেশে প্লেসমেন্ট নিশ্চিত করেছি। ক্লাস পরীক্ষাসহ অ্যাকাডেমিক বিষয়গুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। দক্ষ ভেটেরিনারি গ্র্যাজুয়েট তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছি। অনুষদীয় উপদেষ্টা কমিটি গঠন, সব লেভেলের শিক্ষার্থীর জন্য অনুষদে ট্যুর ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ভেটেরিনারিয়ানদের চাহিদা কেমন?

দেশের নিরাপদ প্রাণিজ আমিষ নিশ্চিত এবং চাহিদা মেটাতে ভেটেরিনারি গ্র্যাজুয়েটরা নিরলস কাজ করছেন। একটি মেধাবী জাতির জন্য প্রয়োজনীয় আমিষ সরবরাহে ভেটেরিনারিয়ানদের ভূমিকা অপরিসীম। দেশে প্রতিনিয়ত পোষা প্রাণীর সংখ্যা বাড়ছে। এদের চিকিৎসা ও পরামর্শ দিচ্ছেন ভেটেরিনারিয়ানরা। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে দরকার স্মার্ট লাইভস্টক। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার জন্য বাংলাদেশে ভেটেরিনারিয়ানদের প্রয়োজনীয়তা এবং কর্মক্ষেত্র ব্যাপক।

শিক্ষার্থীরা কেন ভেটেরিনারি বিষয়ে পড়বে?

ভেটেরিনারি শিক্ষা একটা প্রফেশনাল শিক্ষা, যা ভেটেরিনারি কাউন্সিল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যাদের মেডিকেল ও বায়োলজিক্যাল সায়েন্স পছন্দ তারা নিঃসন্দেহে এই বিষয়ে পড়তে পারে। এখানে হিউম্যান মেডিকেলের মতো এনাটমি, হিস্টোলজি, নিউট্রিশন, জেনিটিক, প্যাথলজি, ফার্মাকোলজি, সার্জারি, গাইনোকোলজি, মেডিসিন, পাবলিক হেলথসহ নানা বিষয় পড়ানো হয়। ভেটেরিনারি বিষয়ে ডিগ্রি নিতে একজন শিক্ষার্থীর অনেক পরিশ্রম করতে হয়। তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানে দক্ষ হতে হয়। প্রাণিচিকিৎসা এবং দেশের প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে অংশ নিতে চাইলে শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ে পড়তে পারে। বিদেশে এই বিষয়ের চাহিদা অনেক বেশি। একজন ভেটেরিনারিয়ান মানুষের চিকিৎসা না করেও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রাখেন।

এই বিষয়ে পড়াশোনা করে চাকরির সুবিধা কেমন?

বিসিএসে টেকনিক্যাল ক্যাডার রয়েছে, পাশাপাশি অন্যান্য ক্যাডারেও প্রতিযোগিতা করতে পারবে। প্রাণিসম্পদবিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। সেনাবাহিনীতে ভেটেরিনারি পেশার জন্য রয়েছে আরভিএফসি নামে আলাদা কোর। আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় ওষুধ ও ফিড কোম্পানিগুলোতে চাকরিসহ বিভিন্ন এনজিও এবং প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। কেউ চাইলে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারে।

শিক্ষার্থীদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

অ্যাকাডেমিক বিষয়গুলোকে গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে, বুঝতে হবে। না বুঝলে শিক্ষকদের সহযোগিতা নিয়ে শিখতে হবে। পাশাপাশি ব্যবহারিক ক্লাসগুলো ভালোভাবে আত্মস্থ করতে হবে। ডিজিজ ডায়াগনোসিস এবং ট্রিটমেন্ট ভালোভাবে শিখতে হবে। আমাদের ক্লিনিকে ভেটেরিনারি সার্জন নিয়োগ হয়েছে। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা হাতেকলমে আরো দক্ষতা লাভ করতে পারবে।

অনুষদের সেশনজট নিরসনে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন?

আমি দায়িত্বে আসার পর সব ক্লাস পরীক্ষা অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী হয়েছে। সেশনজট হয়েছে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা পেছানো, পরীক্ষা বর্জনের মতো কারণে। আমাদের অনুষদের বিভিন্ন বিভাগে নতুন ২৭ জন শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। আশা করি অনুষদে আগের চেয়ে আরো গতি আসবে। আমার দায়িত্বে সেশনজট পড়ার সুযোগ নেই। সবকিছু নিয়মানুযায়ী সময়মতো শেষ হবে।

অনুষদ নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আমার দ্বিবার্ষিক কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, জব ফেয়ার করা, ইন্টার্নশিপে আরো নতুন দেশে প্লেসমেন্ট সংযুক্ত করা, ভেটেরিনারি ক্লিনিক স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা, ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালে আন্তর্জাতিক মানের একটি ক্লিনিক্যাল ল্যাব স্থাপন করা।

শেকৃবির ভেটেরিনারি টিচিং হসপিটালে সাধারণ মানুষজন কী কী সেবা পাবে?

আমাদের হাসপাতালটি সম্প্রতি চালু হয়েছে। জনবল ও চিকিৎসার সরঞ্জামাদির ঘাটতি রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু হলে একই ছাদের নিচে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, প্রতিকার, প্রতিরোধ, বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, টিকা প্রদান, সার্জারিসহসহ প্রাণীর স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট সব ধরনের সেবা পাওয়া যাবে।

গবেষক হিসেবে দেশ-বিদেশে আপনার সুনাম রয়েছে। অনুষদীয় গবেষণা কার্যক্রমের কী কী উদ্যোগ নিয়েছেন?

এখানে প্রাণীর বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, জাত উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা হচ্ছে। অনুষদে প্রথমবারের মতো ইন্টারনাল সায়েন্টিফিক রিসার্চ কনফারেন্স আয়োজন এবং অনুষদীয় জার্নাল নিয়মিত প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ভালো গবেষণা এবং প্রকাশনাকে পুরস্কৃত করার উদ্যোগ গ্রহণ করছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close