reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০২ মে, ২০২৪

‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’ তীব্র গরমে লোডশেডিং

ফাইল ছবি

রাজশাহী বিভাগে টানা দুসপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলছে তীব্র দাবদাহ। প্রচণ্ড খরতাপে পুড়ছে প্রকৃতি। ঠাঠা রোদে তপ্ত কড়াইয়ের মতো তেঁতে ওঠেছে পথঘাট। এরই মধ্যে তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়েছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর অসহনীয় এ গরমের মধ্যে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের জাঁতাকলে অতিষ্ঠ জনসাধারণ। দিনে-রাতে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। বিঘ্ন হচ্ছে হাটবাজার ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা। দিনে তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। ইরি-বোরোসহ আমনের ক্ষেতে সেচ দিতে পারছেন না কৃষকরা -- এ যেন 'কাটা গায়ে নুনের ছিটা'!

লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা বলেন, গত কদিন ধরে দিনে-রাতে চলছে লোডশেডিং। ক্লান্ত শরীরে রাতে ঘুমাতে গেলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর আসে। এরপর আধা ঘণ্টা কিংবা এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। দিনে-রাতে কদিন ধরে এভাবেই চলছে বিদ্যুতের যাওয়া-আসা। দিনে বিদ্যুৎ থাকে না, তাই ভ্যাপসা গরমে ঘরে টেকা যায় না। সবচে বেশি ভোগান্তিতে আছে শিশুরা। গভীর রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে প্রচণ্ড গরমে ঘুমাতে না পেরে শিশুরা চিৎকার করে ওঠে।

চারঘাট উপজেলার বাসিন্দা জাহানারা ইসলাম বলেন, সারা দিনে কতবার বিদ্যুৎ যায়, তার হিসাব নেই। তার ওপর শুধু রাতেই তিন থেকে চারবার লোডশেডিং হচ্ছে। গরমে আমার পরিবারের কেউই ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না। আমার আড়াই বছরের বাচ্চাও রাতে ঘুমাতে পারে না। কান্না করে ওঠে।

আফরোজা নামে এক গৃহবধূ বলেন, ‘এর আগে কোনো দিন এমন কষ্ট হয়নি। রাতের বেলা বিদ্যুৎ চলে গেলে বাচ্চারা গরমে কান্না শুরু করে দেয়। বাচ্চাদের সারা শরীর ঘামে ভিজে যায়। এভাবেই চলছে প্রতিদিন।

এদিকে, নওগাঁয় ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে মিলছে ৭০ থেকে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ফলে দিনে প্রায় লোডশেডিং হচ্ছে চার ঘণ্টা। এ অবস্থায় জমিতে সেচ দিতে পারছেন না কৃষকরা।

মহাদেবপুর উপজেলার কৃষক হারিস উদ্দিন বলেন, দিনরাত মিলিয়ে মাত্র ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়৷ বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে মাঠের জমিতে ঠিকমতো পানি দিতে পারছি না।

ছালাম মিয়া নামে আরেক কৃষক জানান, দিবারাত্রি গড়ে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। অব্যাহত লোডশেডিংয়ে মাঠের জমিও ফেটে যাচ্ছে। জমিতে এ মুহূর্তে সেচ দিতে না পারলে ধান বাঁচানো সম্ভব হবে না।

এদিকে, বগুড়ায় গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শহরবাসী। গেল এক সপ্তাহে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা করে চলছে লোডশেডিং। এতে কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

বিদ্যুতের এমন সংকটের কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন উদ্যোক্তারা। শ্রমিকরা দিনের নির্দিষ্ট সময় কাজ করেন। ওই সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকলে তারা অলস সময় কাটান। কাজ কম হলেও বেতন-ভাতা একই দিতে হয়। এতে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়লেও দাম কিন্তু একই। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী মালামালও সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

এছাড়া দিনের বেলায় নাটোরে ও সিরাজগঞ্জে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কম থাকলেও সন্ধ্যা নামার পর শুরু হচ্ছে ঘন ঘন লোডশেডিং। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

রিফাত ইসলাম নামে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী বলেন, ‘সামনে আমার পরীক্ষা। পড়াশোনায় মন বসতে হলে ভালো পরিবেশ লাগে। যে গরম পড়ছে মনে হচ্ছে শরীর পুড়ে যাবে, তার ওপর তীব্র লোডশেডিং। এমন অবস্থায় পড়াশোনা করা একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। হাতপাখা চালিয়ে আর কতক্ষণ পড়াশোনা করা যায়। আর এভাবে মনোযোগ দিয়ে কোনো কিছু পড়াও যায় না। এভাবে চলতে থাকলে তো আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে।

আর জয়পুরহাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে তীব্র তাপপ্রবাহের সঙ্গে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় দুর্বিষহ হয়ে ওঠেছে জনজীবন। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। এছাড়া তীব্র গরমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে শত শত রোগী। হাসপাতালটিতে তিনটি শিশু ওয়ার্ডে বেডের তুলনায় তিনগুণ বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আফসানা বেগমের দুবছরের সন্তান। তীব্র গরমে অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েও নেই স্বস্তি। তিনি বলেন, ‘দুদিন আগে ছেলেকে প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করি। তীব্র এ গরমে এখান থেকে চিকিৎসা নেয়াটা খুবই কষ্টকর। ঠিকমতো ফ্যানের বাতাস পাওয়া যায় না। হাতপাখা দিয়ে কোনো রকম বাচ্চাকে একটু বাতাস দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আর কতক্ষণই বা হাতপাখা চালানো যায়।’

এদিকে তীব্র লোডশেডিং নিয়ে জানতে চাইলে নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, চাহিদার বিপরীতে কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় সাময়িকভাবে কিছুটা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটছে। আগামীতে এ সমস্যা যেন দ্রুত কাটিয়ে উঠা যায়, সে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পিডিএস/এমএইউ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
তীব্র গরম,লোডশেডিং,বিদ্যুৎ বিভাগ,প্রত্যন্ত অঞ্চল
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close