আবদিম মুনিব, ইবি

  ১০ জানুয়ারি, ২০২৪

ভালোবাসার আশ্রয়স্থল আবৃত্তি আবৃত্তি

তখন তৃতীয় শ্রণিতে পড়তাম, বার্ষিক পরীক্ষা দেওয়া শেষ চতুর্থ শ্রেণিতে উঠব। এদিকে আমাদের প্রাইমারি স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও বেশি দিন বাকি নেই। ক্লাসে নাসরিন আপা এলেন এবং বললেন তোমাদের মধ্যে কে কোন বিষয়ে নাম লেখাতে চাও জলদি বলো। আরো বললেন, কেউ তিনটার বেশি নাম জমা দিতে পারবে না। আমি গান, কবিতা আর গজলে নাম লেখালাম এবং সে অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় হয়েছিলাম। তখন থেকেই কবিতার প্রতি ভালো-লাগা কাজ করত।

স্কুল, কলেজের গন্ডি পেরিয়ে চলে এলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানে এসে এক দিন টিএসসির দেয়ালে দেখতে পেলাম একটা সদস্য সংগ্রহের লিফলেট লাগিয়ে দিয়েছে। তখন মোবাইলে এর ছবি তুলে নিলাম। আর রুমে গিয়ে ভাবলাম একটা ফর্ম নিতে হবে। সেখানে দেওয়া নম্বরে কল করলাম এবং তিনি লালন শাহ হলে তার রুমে যেতে বললেন। সময়মতো ভাইয়ের রুমে গিয়ে ফর্ম সংগ্রহ করে ছবি আর প্রয়োজনীয় লেখা সম্পূর্ণ করে জমা দিয়ে দিলাম। এরই মধ্যে বিশ্বে করোনার ভয়াবহতা শুরু হলো। আমাদের ভার্সিটি বন্ধ ঘোষণা হলো। চলে এলাম বাসায়। বাসায় এসে শুনছি এ তারিখে প্রতিষ্ঠান খুলবে কিন্তু খুলছে না। প্রায় এক দেড় বছর পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলল। ক্লাসও টুকটাক করছি ক্যাম্পাসে এসে। এরই মধ্যে আমাদের ‘আবৃত্তি আবৃত্তি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়’ পেজে নতুন সদস্যদের ভাইভার সময় ও তারিখ দেওয়া হলো। আর মোবাইলে মেসেজও এলো ভাইভার। এত বড় সংগঠন আমি নতুন আবৃত্তির তেমন কিছু জানি না। ভাইভা বোর্ডে কী বলব, নানা চিন্তা হচ্ছিল! আরো শুনলাম বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক খাঁন মাজহারুল হক লিপু স্যারও থাকবেন। যথাসময়ে ভাইভা দেওয়ার জন্য টিএসসির করিডরে চলে এলাম। হঠাৎ ডাক এলো আমার, চলে গেলাম ভাইভা বোর্ডে। প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন, বললাম। একটা স্বরচিত কবিতাও শুনলেন। পরে সালাম দিয়ে চলে এলাম। পরের দিন মোবাইলে টুং করে শব্দ হলো, দেখি অভিনন্দন লেখা। বেশ খুশি হলাম! এভাবে আস্তে আস্তে আবৃত্তির সদস্য হলাম। প্রতি সপ্তাহের নিয়মিত সিটিং, পাঠচক্র, কণ্ঠশীলন, মুখের ব্যায়ামসহ নানা কিছু জানতে পারলাম। এভাবে আবৃত্তির সঙ্গে চলতে চলতে দুটি বছর পার করলাম। সত্যিই সুন্দর মানুষ হওয়া, সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা, শুদ্ধ উচ্চারণ, আঞ্চলিকতা দূর করা, মুখের জড়তা দূর করার জন্য আবৃত্তি আবৃত্তি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা অপরিসীম। সংগঠনে পেয়েছি সিনিয়র প্রিয় আপু আর ভাইয়াদের। তাদের একান্ত ভালোবাসায় আর প্রচেষ্টায় সত্যিই অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। এখানে যেন একটা পরিবার। সবার সুখ-দুঃখ অনায়াসে বলতে পারি। বিভিন্ন দিবসে কবিতা পাঠের আয়োজন করা হয়। ঐতিহাসিক স্থানে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ যেন সিনিয়র আর জুনিয়রদের ভালোবাসার মেলবন্ধন। ‘আসুন আমরা শুদ্ধতার চর্চা করি’ এই স্লোগানকে বুকে ধারণ করে প্রিয় এই সংগঠনটি ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক খাঁন মাজহারুল হক স্যারের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং শফিক, রাজিব, শুভ, সালাউদ্দিন ভাইয়াদের একান্ত সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আবৃত্তি আবৃত্তি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত বছর দুই দশক পূর্তি ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করলাম। আবৃত্তি আবৃত্তির নিবেদিতপ্রাণ নূরুল্লাহ মেহেদী ভাই, নাঈমা পারভীন নিলা আপু, জান্নাতুল ফেরদৌস মীরা আপু হায়াতে জান্নাত আপু, শোভন ভাইয়াদের

স্নেহ-ভালোবাসা পেয়েছি আর রায়হান, দীপেন, গোলাম রব্বানীর মতো বন্ধুদের সহযোগিতা পেয়েছি। আবৃত্তি আবৃত্তি শিখিয়েছে মানুষকে কাছে নিতে, নিজেকে বিকশিত করতে। তাই আবৃত্তি আবৃত্তি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। টিকে থাকুক এ প্রিয় সংগঠন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close