জয়দেব রায়, ইবি

  ০৯ জানুয়ারি, ২০২৪

বন্ধুত্ব চিরন্তন

‘একটাই কথা আছে বাংলাতে/ মুখ আর বুক বলে একসাথে/ সে হলো... বন্ধু, বন্ধু আমার...’ বাপ্পি লাহিড়ী ও মুন্না আজিজের কণ্ঠে বন্ধু আমার সিনেমার এই গানটি যুগ যুগ ধরে বন্ধুত্বের গুরুত্বকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এজন্য হয়তো এটা বলা হয়ে থাকে বন্ধুত্ব চিরন্তন। বন্ধু হলো সেই জলধারা যেখানে আমরা দুঃখ নিয়ে স্নান করি আর মানসিক শান্তি নিয়ে ফিরে আসি। সবকিছু পুরাতন হলেও বন্ধুত্ব কখনো পুরাতন হয় না।

গত ১০ নভেম্বর ২০২৩ ছিল আমাদের চতুর্থ বর্ষের শেষ ক্লাস। পরীক্ষা শুরু হবে ২২ নভেম্বর থেকে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি। দেখতে দেখতে বছরগুলো কেমন করে কেটে গেল বুঝতেই পারিনি। ১০ নভেম্বর ক্লাস শেষে ওবায়দুল বলল, আমরা দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই। সবাই মিলে পরিকল্পনা করলাম ১১ নভেম্বর ছেলেরা সবাই পাঞ্জাবি পরে আসবে এবং মেয়েরা শাড়ি পরে আসবে। সবাইকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা ধরা হলো। চাঁদার এই টাকা দিয়ে কেক, টি-শার্ট এবং দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হলো। ১১ নভেম্বর সকাল ৮টার বাসে ক্যাম্পাসে পৌঁছানোর পর বন্ধু শুভকে ফোন দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম তোরা সবাই কোথায়? শুভ বলল, ২১২ নম্বর রুমে। সময়মতো ২১২ নম্বর রুমে গিয়ে পৌঁছালাম। তারপর শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা এসে আগে থেকে অর্ডারকৃত কেক কেটে উদ্বোধন করলেন। বিভাগের শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর জাকির হোসাইন আমাদের জন্য মূল্যবান দিকনির্দেশনা দিলেন। হঠাৎ আমার মনে হলো এই ২১২ নম্বর রুমেই প্রথম বর্ষের প্রথম ক্লাসটা করেছিলাম। বুকের মধ্যে কোথায় জানি একটা শূন্যতা অনুভব করলাম। তারপর সবাই মিলে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ছবি তুললাম। ছবি তোলার জন্য রিফাত আগে থেকেই একটা ক্যামেরা এনেছিল। এরই মধ্যে জোহরের আজান দিয়ে দিল। নামাজের পর সবাই মিলে দুপুরের খাবার খেলাম। তারপর হালকা বিরতির পরে রং খেলা শুরু করলাম। রং খেলার মধ্যে ছিল না কোনো বিভেদ। সবাই যেন একই মায়ের সন্তান।

তারপর ইলেকট্রিক ভ্যানে করে পুরো ক্যাম্পাসটা ঘুরলাম। সাউন্ড বক্স বাজিয়ে সবাই নাচানাচি, হই-হুল্লোড় করলাম। এভাবে কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল এলো বুঝতেই পারলাম না। ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় ৪টা। এবার সবার থেকে বিদায় নেওয়ার পালা। যারা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকে তারা সবাই একে-অন্যকে বিদায় জানাল। আমিও সবার থেকে বিদায় নিলাম। তারপর ক্যাম্পাসের বাসে উঠলাম। হালকা শীত পড়ছে তখন। তবু বাসের জানালাটা খুলে দিলাম। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে বন্ধুদের সঙ্গে তোলা ছবিগুলো দেখছি আর ভাবছি সবাইকে একসঙ্গে আর হয়তো কখনোই পাব না। কয়েক দিন পর যে যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে। এই ক্যাম্পাসে হয়তো এক দিন আবার ঘুরতে আসব কিন্তু সঙ্গে থাকবে না সুখ-দুঃখের ওই বন্ধুগুলো যাদের সঙ্গে কয়েকটা বছর এখানে কাটিয়েছি। তখন হয়তো পুরোনো ছবিগুলো মোবাইল থেকে বের করে দেখব আর স্মৃতিচারণ করব, আমিও একটা সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। এখানে আমার কিছু বন্ধু ছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close