তানজিদ শুভ্র

  ০৪ জানুয়ারি, ২০২৪

পিঠার ঘ্রাণে মাতোয়ারা

গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ আঙিনা গত ২৮ নভেম্বর দিনব্যাপী পিঠা উৎসবে মুখরিত ছিল। মাঠের স্টলে যেমন ভিড় ছিল, তেমনি পুকুর পাড় কিংবা জলছায়ায় ছিল বন্ধু, সহপাঠী সবার আনন্দমুখর আড্ডা। পিঠা উৎসব যেন এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। এদিন সকালে পিঠার ঘ্রাণে মাতোয়ারা ছিল এ আঙিনা।

কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও অভিভাবক, অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আগত শিক্ষার্থীসহ অনেকেই ভিড় করেন এ আয়োজনে। কেউ এসেছেন একা আর কেউ বন্ধুদের নিয়ে দলবেঁধে, কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে।

তত্বীয় পরীক্ষা শেষ হয়েছে দুদিন আগে। পরীক্ষা দিয়ে বাসায় যাওয়ার পর আনোয়ার স্যারের কল। পরদিন অর্থাৎ সোমবার সকাল সকাল ডিপার্টমেন্টে উপস্থিত থেকে কাজ করতে হবে মঙ্গলবারের পিঠা উৎসবের জন্য। সোমবার সকালে ১০টার পর উদ্ভিববিদ্যা বিভাগে পৌঁছে দেখলাম বড় আপুরা ব্যস্ত সময় পার করছিল রঙিন কাগজ দিয়ে কীভাবে সাজানো যায় সেসব নিয়ে। কেউ কাগজ কেটে ফুল, ময়ূর, ঘুড়ি বানাচ্ছিল, আবার কেউ চরকিসহ নানা ডিজাইনে ব্যস্ত। আমি যাওয়া মাত্রই আমাকে নির্দেশ দেওয়া হলো রং কিনে আনতে।

মাটির বাসনে রং করে সাজানো হবে পিঠার পসরা। যেমন কথা তেমন কাজ। রং কিনতে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে বিভিন্ন দোকান ঘুরে নিয়ে আসি। এরপর মাটির পাত্রগুলো ধুয়ে ভবনের ছাদে নিয়ে গেলাম শুকাতে। প্রচন্ড রোদ, তাকানো দায়। এই রোদের মাঝেই ছাদের এক পাশে দাঁড়িয়ে কলেজের অন্যতম অংশ দিঘির দিকে তাকিয়ে রইলাম। শুকিয়ে যাওয়ার পর সেসব নিয়ে ফিরলাম ডিপার্টমেন্টের এক রুমে। এরপর শুরু হলো আপুদের নিপুণ হাতে বিভিন্ন নকশা করার কাজ। শুধু কি এসবেই হয়! আরো রঙিন কাগজ কেটে বেশ কয়েকটি জিনিসও বানিয়ে রাখা হলো। এসব তালাবদ্ধ রুমে রেখে আপুরা বাসায় ফিরল মূল আকর্ষণ পিঠা বানানোর তাড়ায়। আমি আর তানিম ভাই আয়োজনের ব্যানার বানাতে গেলাম। সর্বাত্মক সহযোগিতায় ছিলেন বিভাগের প্রিয় মুখ আনোয়ার স্যার।

পরদিন ২৮ নভেম্বর সকাল। অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভাঙেনি, নির্দিষ্ট সময় থেকে দেরিতে বের হয়ে, ব্যস্ত রাজধানীর যানজট পেরিয়ে ডিপার্টমেন্টে পৌঁছাই সকাল ৯টার পর। ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই-আপুদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রচেষ্টায় তখন স্টল সাজানোর কাজ চলছিল। আমিও যোগ দিলাম তাদের সঙ্গে। একদিকে রঙিন কাগজ, বেলুন আর ফুলে সজ্জিত হলো আমাদের স্টল, আরেক দিকে সামনের টেবিলে মাটির পাত্রে কলাপাতার মাঝে রূপ ছড়াচ্ছিল বাহারি ধরনের পিঠাপুলি। অর্ধশতাধিক পিঠা শোভা পাচ্ছিল প্রদর্শনীতে।

কন্ট্রোল রুমসহ মাঠে ২১টি স্টল বরাদ্দ ছিল; এতে অংশ নিয়েছিল উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক (সম্মান), স্নাতক (পাস) শ্রেণির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীসহ বিএনসিসি, রোভার ও রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা।

বাহারি নামের ভিন্ন ভিন্ন পিঠাতে আকৃষ্ট হয়ে দর্শনার্থী, ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। অতিরঞ্জিত কোনো অফার ছাড়াই সাশ্রয়ী মূল্য তালিকায় আস্থা ছিল আগতদের। বেলা গড়িয়ে দুপুর থেকেই আমাদের স্টলের বিক্রি শেষের দিকে চলে যায়। আমাদের স্টলের পাশাপাশি অন্যান্য স্টলেও বেচা বিক্রি, দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মাঠের পূর্ব কোণে নজর কাড়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ফটো ফ্রেম, ভিড় ছিল হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ফটো বুথেও। সব ডিপার্টমেন্টের স্টলে ছিল নিজস্বতার শৈল্পিক ছোঁয়া।

সকালের শুরুতে অধ্যক্ষ মহোদয়ের উদ্বোধন করার মাধ্যমে শুরু হয় আয়োজন। অংশগ্রহণকারীদের পুরস্কারপ্রাপ্তি অবধি ছিল আনন্দমুখর। সবার চোখে মুখের উচ্ছ্বাস, আনন্দ ছিল দেখার মতো। আন্তরিকতায় আবদ্ধ করে রেখেছিল সিনিয়র ভাইয়া-আপুরা আর সহপাঠী, বন্ধুরা। এখানে স্নাতক শ্রেণির সাপ্তাহিক ভিন্ন দিনে একেক শ্রেণির ক্লাস থাকায় এমন উৎসবে সিনিয়র-জুনিয়রদের মিলনমেলায় রূপ নিয়েছিল।

পিঠাপুলির ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে সামনের মানুষটির আগ্রহকে সম্মান জানিয়ে শেষে দেখা গেল, স্টলের ভেতরে থাকা সদস্যদের পিঠা খাওয়ারও সুযোগ হয়নি। এমনকি স্মৃতি ধরে রাখার জন্য কোনো দলগত ছবিও নেই আমাদের স্টলে। আমরা হতাশ না হয়ে ডিপার্টমেন্টের সামনে গিয়ে দলবদ্ধ ছবি তুলে আত্মতুষ্টি নিয়ে বাসায় ফিরলাম। স্মৃতিতে দীর্ঘদিন মনে থাকুক এমন উৎসবমুখর দিন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close