প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রে তোলপাড়

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের বর্বর সামরিক আগ্রাসন ২০০ দিন পেরিয়ে গেছে। গত প্রায় সাত মাস ধরে ভূমধ্যসাগর পাড়ের অবরুদ্ধ উপত্যকায় রীতিমতো গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। গাজা উপত্যকা কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হতাহত হয়েছেন লক্ষাধিক নিরস্ত্র ও নিরীহ ফিলিস্তিনি। যার বেশিরভাগই শিশু ও নারী। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে নিখোঁজ রয়েছে আরও ৭ হাজারের বেশি। ২৩ লাখ বাসিন্দার ১৯ লাখই এখন উদ্বাস্তু। খোলা আকাশের নিচে দিন পার করছেন তারা। ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষ জেঁকে বসেছে। লাখ লাখ ফিলিস্তিনি রয়েছেন অনাহারে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ইসরাইলকে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা।

গণহত্যা থামাতে বিশ্বের সব প্রান্তেই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন কোটি কোটি সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসছেন। নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আর ঘাতক ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তারা। এসব মানুষের সাথে যোগ দিয়েছেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।

গাজায় ইসরাইলের অভিযানের প্রতিবাদে ইসরাইলের প্রধান মিত্র ও পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু থেকেই চলছিল। তবে সম্প্রতি তা আরও ব্যাপক রূপ নিয়েছে।

ক্রমবর্ধমান এই বিক্ষোভ সামাল দিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্মকর্তারা রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন। যে কারণে বিক্ষোভ দমনের নামে ধড়পাকড় চালানো হচ্ছে। তবে যত দিন যাচ্ছে, বিক্ষোভ তত ছড়িয়ে পড়ছে। কলম্বিয়া ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। নতুন নতুন ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররা কেন প্রতিবাদ করছেন : যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীরা শুধু গাজা যুদ্ধ বন্ধে বিক্ষোভণ্ডপ্রতিবাদ করছেন না। সেই সঙ্গে ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থনের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

শিক্ষার্থীরা মূলত গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছেন। পাশাপাশি ইসরাইলের জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তা বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছেন। নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দাঁড়ানো ছাত্র, শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ওপর শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে যে বহিস্কার বা হয়রানি করা হচ্ছে তারও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা।

শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদ কি ‘এন্টিসেমিটিজম’ : ইসরাইল যে ফিলিস্তিনের গাজায় রীতিমতো গণহত্যা চালাচ্ছে, সেজন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই ফিলিস্তিনের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল। কিন্তু বেশ কয়েকটি ইহুদি ছাত্র সংগঠন এই বিক্ষোভগুলোকে ‘অ্যান্টি-সেমিটিজম’ তথা ‘ইহুদি-বিদ্বেষী’ তকমা দেয়ার চেষ্টা করছে।

তবে তাদের এসব দাবি ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা খারিজ করে দিয়েছেন। তারা বলছেন, ইসরাইল জায়নবাদী শক্তি। তারা ইহুদিদের বিরুদ্ধে নয় বরং জায়নবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে। কারণ ইসরাইলবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি ও ইহুদি-বিদ্বেষের মধ্যে একটি স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। তারা আরও বলছেন, ইসরাইলবিরোধী বা জায়নবাদণ্ডবিরোধী হওয়া আর অ্যান্টিসেমিটিজম বা সব ইহুদির বিরোধিতা বা ঘৃণা এক বিষয় নয়।

বিক্ষোভ দমনে শক্তি প্রয়োগ : গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে মার্কিন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীদের যে বিশাল বিক্ষোভ গড়ে উঠেছে, তা দমনে শক্তি প্রয়োগের পথেই এগোচ্ছে কর্তৃপক্ষ। গত সোমবার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ করায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে, গত সপ্তাহে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করায় কর্তৃপক্ষ। এরপর সশরীরে ক্লাস নেয়াও বন্ধ করে দেয়া হয়।

তবে বিক্ষোভের নামে ইহুদি বিদ্বেষ ছড়ানো ও হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন সমালোচকদের অনেকেই। তাদের মধ্যে রিপাবলিকান দলের প্রভাবশালী কয়েকজন আইনপ্রণেতাও রয়েছেন। অন্যদিকে ব্যাপক ধড়পাকড়ের সমালোচনা করেছেন অধিকারকর্মীরা। তাদের মতে, এর মধ্য দিয়ে বাক্স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে।

গত শতকের ষাটের দশক থেকে নানা অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সরব হতে দেখা যায় ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের শিক্ষার্থীদের। এখানকার শিক্ষার্থীরাও গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভ করছেন তারা। ক্যাম্পাসে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের কারণে ক্যালিফোর্নিয়া পলিটেকনিক হামবোল্ডট বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের অনুরোধের পর ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার সেন্ট পল ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close