প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৯ মার্চ, ২০২৪

ক্ষুধা ও ভয়ে কান্নার শক্তিও হারিয়েছে ফিলিস্তিনি শিশুরা

ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত পুরো গাজা। পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় অবিরাম বোমা হামলা চালাচ্ছে দখলদার দেশ ইসরায়েল। তেল আবিবের এমন বর্বর হামলায় প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে শত শত ফিলিস্তিনি। বাদ যায়নি শিশু ও নারীরাও। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার শিশুকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। আর যেসব শিশু বেঁচে আছে তারাও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। অবিরাম বোমা আর গুলিকে সঙ্গী করে বেঁচে থাকা শিশুদের অনেকেই ভুগছে ট্রমায়। বেঁচে থাকা এসব শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। এমনকি এসব শিশুর কান্না করার মতো শক্তিটুকুও অবশিষ্ট নেই। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এমন তথ্য জানিয়েছে। খবর আল-জাজিরার।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল রবিবার সিবিএস নিউজ নেটওয়ার্ককে বলেন, কয়েক হাজার শিশু আহত হয়েছে অথবা তারা কোথায় আছে সেটাও আমরা নির্ধারণ করতে পারছি না। অনেক শিশু এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে থাকতে পারে। আমরা বিশ্বের অন্য কোনো সংঘাতে এত শিশুর মৃত্যু দেখিনি।

ক্যাথরিন রাসেল বলেন, আমি এমন শিশুদের ওয়ার্ডে গিয়েছি যারা মারাত্মক রক্তশূন্যতা ও অপুষ্টিতে ভুগছে। পুরো ওয়ার্ড একেবারেই নিস্তব্ধ। কারণ সেখানকার বাচ্চারা এতটাই দুর্বল যে, তাদের কান্না করার শক্তিটুকুও আর অবশিষ্ট নেই।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ইসরায়েলের ‘গণহত্যা’ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছে। ফলে সেখানে মানবিক সহায়তাবাহী ট্রাকগুলোকে নিয়ে যাওয়াটা ছিল খুব বড় একটি আমলাতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জ।

ফিলিস্তিন শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থানবিষয়ক সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) তথ্য অনুযায়ী, উত্তর গাজায় দুই বছরের কম বয়সি প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে একজন এখন তীব্রভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে। সংস্থাটি আরো সতর্ক করেছে যে, পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনে সেখানকার মানুষ দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। হামলায় ১২শর বেশি মানুষ নিহত হয়। জিম্মি করে নিয়ে যায় আরো ২৪২ জনকে। ওইদিন থেকে পাল্টা আক্রমণে তীব্র আক্রোশে গাজার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার দেশটি। ইসরায়েলি এ হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থীশিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি হামলায় পুরো গাজা ভূখণ্ড প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে সাড়ে ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। আর আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে সাড়ে ৭৩ হাজার। ঘরবাড়ি হারিয়ে গাজার বাসিন্দারা প্রায় সবাই উদ্বাস্তু হয়ে গেছে।

কঠোর অবরোধ ও অবিরাম হামলার মধ্যে থাকা গাজাবাসীরা অনাহারে ভুগতে ভুগতে দুর্ভিক্ষের প্রান্তে চলে গেছে। ইতিমধ্যেই অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় শিশুসহ অনেকের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষুধায় বেপরোয়া হয়ে ওঠা লোকজন ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে।

ইসরায়েলি বাহিনীর এমন আচরণে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। যুদ্ধ বন্ধের বদলে রবিবার মিসরের সীমান্তবর্তী রাফা শহরে স্থল অভিযানের হুমকি পুনর্ব্যক্ত করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। যেখানে হামলার মুখে গাজার অন্যান্য এলাকা থেকে প্রায় ১০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close