প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৭ মার্চ, ২০২৪

পানিশূন্য হওয়ার দিকে এগোচ্ছে ভারতের বহু এলাকা

২০১৮ সালে ভয়ানক আকার নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার শহর কেপটাউনের খরা পরিস্থিতি। মারাত্মক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন শহরের প্রায় ৪০ লাখ বাসিন্দা। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে কেপটাউন পৌরসভা ওই বছরের ১২ মেকে ‘ডে-জিরো’ হিসেবে চিহ্নিত করে। এর অর্থ হলো ওইদিন শহরের কোনো কলে আর পানি পড়বে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, একই অবস্থা হতে চলেছে ভারতের অন্যতম তথ্যপ্রযুক্তি নগরী বেঙ্গালুরুর।

এক প্রতিবেদনে আনন্দবাজার জানিয়েছে, খাওয়ার পানি তো বটেই, দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় পানির জন্য ইতিমধ্যেই হাহাকার পড়ে গেছে ভারতের সিলিকন ভ্যালিখ্যাত বেঙ্গালুরুতে।

পরিস্থিতি এতটাই ভয়ানকপর্যায়ে পৌঁছেছে, এক বালতি পানি কিনতে হচ্ছে এক বা দুই হাজার রুপিতে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেই দামও ছাপিয়ে যাচ্ছে। কয়েক দিন ধরে বেঙ্গালুরুতে এমনই পানি সংকটের ছবি উঠে আসছে। তবে মজার বিষয় হলো, যে বেঙ্গালুরু বর্তমানে পানিসংকটে ভুগছে, সেই বেঙ্গালুরুই একসময় পরিচিত ছিল ‘সিটি অব লেকস’ (হ্রদের শহর) নামে।

শহরের আনাচে-কানাচে বহু হ্রদ থাকায় এমন তকমা পেয়েছিল বেঙ্গালুরু। মনে করা হয়, একসময় শহরে প্রায় ২৮৫টি হ্রদ ছিল। এর মধ্যে প্রাকৃতিক হ্রদের পাশাপাশি বেঙ্গালুরুর প্রতিষ্ঠাতা কেম্পে গৌড়ার নির্দেশে নির্মিত অনেকগুলো জলাধারও ছিল।

তাহলে কেন এমন অবস্থা হলো বেঙ্গালুরুর? বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, যে বেঙ্গালুরুতে এক সময় প্রায় ৩০০ হ্রদ ছিল, তার অনেক বর্তমানে ‘উন্নয়নের জোয়ারে’ বুজে গেছে।

পানির স্তরও দিনে দিনে নেমেছে বেঙ্গালুরুর। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, কংক্রিটের স্তূপের নিচে চাপা পড়েছে বেঙ্গালুরুর মাটি। ফলে বৃষ্টির পানি মাটির নিচ পর্যন্ত পৌঁছতে পারছে না। বিশেষজ্ঞেরা উল্লেখ করেছেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমে যাওয়ার পাশাপাশি, বেঙ্গালুরুর পানি সরবরাহের অব্যবস্থাও এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।

এ ছাড়া রয়েছে বৃষ্টিপাতের অভাব, শহরের মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা, নির্মাণকাজে পানির অতিরিক্ত ব্যবহার এবং চাহিদা বৃদ্ধির মতো কারণ। খবরে বলা হয়েছে, পানির স্তর কমে যাওয়ায় বেঙ্গালুরুসহ কর্ণাটক রাজ্যের হাজার হাজার নলকূপের পানিও শুকিয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, গ্রীষ্মে বেঙ্গালুরুর পানি সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। হাহাকার আরো বাড়বে। হিসাব বলছে, শুধু বেঙ্গালুরুতেই প্রায় ৩০০০ নলকূপের পানি শুকিয়ে গেছে। রাজস্ব বিভাগের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, পানি নিয়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে কর্ণাটকের তুমাকুরু জেলা। এ ছাড়াও রয়েছে উত্তর কন্নড়ের জেলাগুলো।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেঙ্গালুরুর বিভিন্ন জেলায় ১৭৪টি গ্রাম এবং ১২০টি ওয়ার্ডে পানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। রাজ্য সরকার বেঙ্গালুরুসহ কর্নাটকের এমন ৭০০টিরও বেশি গ্রাম চিহ্নিত করেছে যেগুলো গরম বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি তীব্র পানির সংকটের সম্মুখীন হতে পারে।

সংকট মোকাবেলার জন্য কর্নাটক সরকার মোট ২১০ কোটি রুপি বরাদ্দ করেছে। যার মধ্যে ৭০ কোটি টাকা নতুন কূপ খননের জন্য খরচ করা হবে। পানি সংকটে থাকা গ্রামগুলোতেই খোঁড়া হবে নলকূপগুলো। এমন অবস্থার মধ্যে জনসাধারণের জন্য পানি ব্যবহারে কিছু নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে সরকার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close