আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৮ অক্টোবর, ২০১৮

জোটের খেলায় শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসে

নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করে বিরোধী দলীয় নেতা মাহিন্দা রাজাপাকসেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ পড়িয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্স (ইউএফপিএ) ক্ষমতাসীন জোট থেকে সরে যাওয়ার পরপরই শুক্রবার সিরিসেনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে রনিল বিক্রমসিংহকে সরিয়ে দেন। এরপর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা রাজপাকসের হাতে নতুন দায়িত্ব তুলে দেন, জানিয়েছে বিবিসি, বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ইউএফপিএ নেতা সিরিসেনা এক সময় রাজাপাকসের সরকারে মন্ত্রীও ছিলেন, পরে অবশ্য তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। ২০১৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সিরিসেনার পক্ষে সমর্থন ছিল বিক্রমসিংহের। শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রিসভাও বাতিল হয়ে যায়। রাজাপাকসে এখনো তার নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করেননি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সফরে থাকা অবস্থাতেই বিক্রমসিংহে বরখাস্ত হওয়ার খবর পান বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

মধ্য ডানপন্থী ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনএফ) এ নেতা পরে প্রেসিডেন্টের আদেশ মানতে অস্বীকারও করেছেন। বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী কেবল পার্লামেন্টই তাকে সরাতে পারে। ‘আমার এখনো সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। আমি এখনো প্রধানমন্ত্রী, এবং আমি এ দায়িত্ব চালিয়ে যাব,’ বলেন তিনি। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপের পথে হাঁটবেন বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন দখলে রাখা বিক্রমসিংহ। আনন্দবাজার বলছে, সিরিসেনা ও রাজাপাকসের দলের মিলিত আসনের চেয়ে বিক্রমসিংহের আসন সংখ্যা এখনো ১১ বেশি। পার্লামেন্টের স্পিকার কারু জয়সুরিয়া বলেছেন, সাংবিধানিক নিয়ম কানুন দেখেই শনিবার তিনি রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সমর্থন দেবেন কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন। বাজেট অধিবেশনের জন্য ৫ নভেম্বর থেকে দেশটির নতুন সংসদ অধিবেশন বসার কথা ছিল। সাংবিধানিক বিরোধ মেটানোর দায়িত্ব শ্রীলঙ্কার সুপ্রিম কোর্টের, তাও সোমবারের আগে খুলছে না বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

সিরিসেনার আদেশকে ‘অসাংবিধানিক’ অ্যাখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনে ভাষণ দিতে চেয়েছিলেন বিক্রমসিংহ মন্ত্রিসভার সদস্য মঙ্গল সামারাবিরা ও মন্ত্রিসভার মুখপাত্র রাজিথা সেনারতেœ। সে সময় ৩ মিনিটের জন্য রুপবাহিনী টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। টুইটারে রাজাপাকসের নিয়োগকে ‘গণতন্ত্রবিরোধী অভ্যুত্থান’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন সামারাবিরা।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে তীব্র মতবিরোধ চলছিল। গত সপ্তাহে সিরিসেনা অভিযোগ করেন, তাকে এবং রাজাপাকসের ভাই গোতাভায়াকে খুনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে জেনেও গুরুত্ব দেয়নি ইউএনপি। সিরিসেনাকে খুনের ছক কষার অভিযোগে বৃহস্পতিবার নালাকা ডি সিলভা নামে এক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’ এর সঙ্গে জড়িত, এক বৈঠকে সিরিসেনা এমনটাই বলেছিলেন বলেও জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা ও ভারতের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম। সিরিসেনার দফতর পরে তা অস্বীকার করে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে জিতে সিরিসেনা শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ ঘিরে বর্বরতার অভিযোগ ও রাজাপাকসে প্রশাসনের দুর্নীতি খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট থাকাকালে চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত রাজাপাকসে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধ শেষে দেশ পুনর্গঠনের নামে বেইজিংয়ের কাছ থেকে বিপুল বিনিয়োগ সহায়তা নিয়েছিলেন। এ সহায়তা পরে দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে ঋণের ভারেও জর্জরিত করে তোলে। যে কারণে কলম্বো পরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি কৌশলগত সমুদ্রবন্দরের নিয়ন্ত্রণ চীনের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়েছে বলেও অভিযোগ ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ পড়ার পর সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে রাজাপাকসে ‘ক্ষমতাচ্যুত’ বিক্রমসিংহকে ‘জনগণের রায়’ মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইউএনএফ নেতা সংবিধান ও আইন মেনে নেবেন বলেও আশা তার। শ্রীলঙ্কার সরকার কাঠামো অনেকটাই ফ্রান্সের মতো। এখানে প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টের নেতৃত্বে থাকলেও নির্বাহী ক্ষমতা থাকে প্রেসিডেন্টের হাতে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close