নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭

‘পরিকল্পিত হত্যা’র শিকার তিনজনই!

রাজধানীর পাঁচ থানায় পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া আলামত ও লাশের সুরতহালে এদের মধ্যে তিনজনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা তদন্তসংশ্লিষ্টদের। গতকাল শুক্র ও বৃহস্পতিবার রাতে তেজগাঁও, দারুসসালাম, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও মতিঝিল থানা এলাকা থেকে এ লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে কল্যাণপুরের রাস্তায় লাগেজে হাত-পা ও মস্তকবিহীন একজনের, তেজগাঁওয়ে নিজ বাড়িতে নারীর গলা কাটা, দক্ষিণখানের হোটেলে একজনের গলিত, মতিঝিলে জনতা ব্যাংকের পানির ট্যাংকে যুবক ও উত্তরখানে শিশুর লাশ পেয়েছে পুলিশ।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মিলু মিলার্ড গোমেজ (৬৫) নামে এক বৃদ্ধার গলা কাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় আরজতপাড়া ৩৮ নম্বর নিজ বাসার তিন তলার ড্রয়িং রুম থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। তেজগাঁও থানার এস আই ফারুক উল ইসলাম জানান, ভবনের পাশের ভাড়াটিয়াদের দেওয়া তথ্যে ওই বৃদ্ধার লাশটি উদ্ধার করা হয়। পরে বিকেল ৩টায় ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে। নিহতের গলার বাম পাশে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় বৃদ্ধার স্বামী হিউবাট অনিল গোমেজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে, সে বিষয়ে ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী স্বামী হিউবাট অনিল গোমেজ অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। আট কাঠা জমির ওপর নির্মাণ করা বাড়িটি দখলের জন্য এ ঘটনা ঘটেছে কি না, পুলিশ খতিয়ে দেখছে। নিহতের চার ছেলের মধ্যে তিনজন কানাডা ও একজন আমেরিকা প্রবাসী। ওই ফ্ল্যাটে দম্পত্তি থাকতেন। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য অনুযায়ী সকাল ৭টায় ঘটনা ঘটলেও আমরা খবর পেয়েছি আনুমানিক ১১টার দিকে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওই বাড়ির বুয়া খুরশী বেগম কাজ করার জন্য ফ্ল্যাটের কলিংবেল চাপেন। দীর্ঘ সময় ধরে কলিংবেল বাজলেও ফ্ল্যাটের দরজা খোলেনি। অনেক ডাকাডাকির পর শব্দ পেয়ে পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া বাসিন্দা অ্যাডভোকেট সুভাস চন্দ্র সাহা এসে দরজা ধাক্কাধাক্কি করেন। একপর্যায়ে অনিল গোমেজ দরজা খুলে দেওয়ার পর ড্রইং রুমের মেঝেতে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। এরপর বেলা ১১টার দিকে এক ব্যক্তি পুলিশের হ্যালো ৯৯৯-এ ফোন করে হত্যার ঘটনাটি জানায়। পুলিশ গিয়ে দেখতে পায় যে ড্রইং রুমের মেঝেতে রক্তাক্ত লাশ। নিহতের গলায় কাটা চিহ্ন ছাড়াও বুকে ছুরিকাঘাতের একাধিক চিহ্ন রয়েছে। লাশের পাশ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জের মঠবাড়িয়ার উলুখোলা গ্রামে।

নিহতের ভাতিজা সজীব গোমেজ জানান, মিলু মিলার্ড গোমেজের চার ছেলে, তারা সবাই প্রবাসী। স্বামী হিউবাট অনিল গোমেজকে নিয়ে তিনি বাসায় থাকতেন। মাঝেমধ্যে ছেলেদের কাছে বেড়াতে যেতেন। গত দুই মাস আগে কানাডা থেকে দেশে আসেন তিনি। আমাদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ ছিল না। তারা দুজন (স্বামী-স্ত্রী) বাসায় থাকতেন। একজন কাজের বুয়া আছে। সকাল পৌনে ৮টায় বুয়া দরজা নক করে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চলে যায়। জানা মতে, ফুফুর কোনো শত্রু ছিল না। কে বা কারা ফুফুকে হত্যা করেছে, তা-ও জানা নেই। ভাড়াটিয়ারা জানান, বাসায় পানি না থাকায় তারা সকাল সাড়ে ৮টায় দরজায় নক করেন। দীর্ঘ সময় নক করার পর নিহতের স্বামী দরজা খুলে দেন। পরে বাসার ভেতরে ড্রইং রুমে লাশ দেখতে পেয়ে তারা পুলিশে খবর দেন।

অপর ঘটনায় দারুসসালামের দক্ষিণ কল্যাণপুরে রাস্তায় ফেলে রাখা একটি লাগেজের ভেতর থেকে হাত-পা ও মস্তকবিহীন অবস্থায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

দারুসসালাম থানার ওসি মো. সেলিমুজ্জামান জানান, দক্ষিণ কল্যাণপুরের গাবতলীমুখী সড়কে সোহরাব পেট্রলপাম্প-সংলগ্ন ব্যাপটিক চার্চের সামনে মূল সড়কের পাশে একটি কালো সুটকেসে পড়ে ছিল। শুক্রবার সকালে এক টোকাই ল্যাগেজটি দীর্ঘ সময় মালিকবিহীন অবস্থায় পড়ে থাকায় লাগেজটি খুলে এক ব্যক্তির হাত-পা ও মস্তকবিহীন লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। নিহত ওই ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি। তবে বয়স আনুমানিক ৩৮ বছর। ধারণা করা হচ্ছে, তীব্র ক্ষোভ থেকে খুনিরা এভাবে ওই ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তসহ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাতে দক্ষিণখানের আশকোনা এলাকার নোয়াখালী গেস্ট হাউস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষ থেকে মানিক কুমার বড়ুয়া (৪৮) নামে এক ব্যক্তির গলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মানিক একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তার বাবার নাম মৃত অমিয় কান্তি বড়ুয়া। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে।

দক্ষিণখান থানার এসআই নান্নু মিয়া খান জানান, রাতে ওই আবাসিক হোটেলের তৃতীয় তলার ১২ নম্বর কক্ষের দরজা ভেঙে মানিক কুমারের লাশ উদ্ধার করা হয়। বিছানার ওপর লাশটি পড়ে ছিল এবং কিছুটা পচন ধরেছিল। স্বজনদের বরাত দিয়ে এসআই আরো জানান, নিহত মানিক নানা কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। ১১ ডিসেম্বর দুপুরে তিনি হোটেলে ওঠেন। থাকার কথা ছিল ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। রাতে পাশের কক্ষের লোকজন উৎকট গন্ধ পেয়ে হোটেল ম্যানেজারকে জানান। পরে তিনি থানায় খবর দিলে দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই কক্ষে বেশ কিছু ওষুধের খালি খোসা জব্দ করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ১১ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো একসময় মানিক অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন করেছিলেন।

এদিকে গতকাল শুক্রবার দুপুরে মতিঝিলে জনতা ব্যাংকের পানির রিজার্ভ ট্যাংক থেকে জিয়াউর রহমান জিয়া (২৫) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। মতিঝিল থানার ওসি ওমর ফারুক জানান, জিয়া ওই ভবনেই থাকতেন। ধারণা করা হচ্ছে, পানির রিজার্ভ ট্যাংকে কাজ করতে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়লে তিনি আর উঠতে পারেননি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

অন্য ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার উত্তরখানের উজ্জামপুর ঘাটে একটি ভাসমান নৌকার পাটাতন থেকে ছিমরান (৭) নামে একটি শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় শিশুটির সৎভাই বাপ্পিকে (২২) গ্রেফতার করা হয়েছে। বাপ্পি ওই শিশুকে গলাটিপে হত্যা করেছে। নিহত ছিমরান তার পরিবারের সঙ্গে উজ্জামপুর এলাকায় থাকত। তার পিতার নাম নাসির উদ্দিন।

উত্তরখান থানার ডিউটি অফিসার এসআই আনোয়ার হোসেন খান জানান, পারিবারিক কলহের জেরে সৎভাই বাপ্পি শিশু ছিমরানকে গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় নিহত ছিমরানের মা সুফিয়া বেগম মামলা করেছেন। মামলায় বাপ্পিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য শিশুটির লাশ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist