প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৫ এপ্রিল, ২০২৪

চৈত্রের খরতাপ, সঙ্গে লোডশেডিং-দুর্ভোগ

চৈত্র মাসের শুরুতে খরতাপে পুড়ছে বিভিন্ন এলাকা। এর মধ্যেই চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকার নবাবগঞ্জ-দোহার ও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে রাত-দিন সমানতালে চলছে লোডশেডিং। এতে প্রচণ্ড গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। রোজাদারদের দুর্ভোগ বেড়েছে বহুগুণ। কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ঈদবাজারে এর প্রভাব পড়ছে। স্থানীয়রা স্বাভাবিক জীবনযাপন ও ব্যবসা চালানোর জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবাহের দাবি জানিয়েছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

চট্টগ্রাম : তীব্র গরমে বিদ্যুতের চাহিদা ১৪ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। বিপরীতে আইপিপি কেন্দ্রে উৎপাদন কমে গেছে। এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ মিলছে ১২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামেও। গত বুধবার চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের চেয়ে বেশি। এর বিপরীতে গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে ৮৫০ মেগাওয়াট। এদিন চট্টগ্রামে লোডশেডিং ৩০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়। রাতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। লোডশেডিং ৩০০ থেকে কমে ১৫০ মেগাওয়াটে নেমে আসে। দিনের বেলায় ৩০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং থাকছে। কোনো কোনো এলাকায় পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সাত-আট বার লোডশেডিং হচ্ছে। এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে।

নগরীর বাকলিয়া রসুলবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা বলেন, বুধবার সারা দিনে ৪-৫ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ ছিল না। গতকাল বৃহস্পতিবারও অবস্থা ছিল একই রকম। লোডশেডিংয়ে ঈদবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তামাকুমন্ডি লেন বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, ব্যবসা বাঁচাতে ঈদ পর্যন্ত আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চাই। টেরিবাজারের ব্যবসায়ী মো. ইসমাঈল জানান, এখন ব্যবসার ভরা মৌসুম। এ সময়ে ক্রেতাদের ভিড় থাকে। এসি না চললে ক্রেতারা আসতে চান না। দিনে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এসি চালানো দূরের কথা- ফ্যানও চালানো যাচ্ছে না। এতে ক্রেতারা দোকান বিমুখ হচ্ছেন। ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে।

পিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক চৌধুরী বলেন, গরমের কারণে এসির ব্যবহার বেড়েছে। যে কারণে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে গেছে। গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। তবে এটি সাময়িক।

কুমিল্লা : বৃষ্টি না হওয়ায় চৈত্র মাসের শুরুতে খরতাপে পুড়ছে কুমিল্লা নগরসহ সমগ্র জেলা। টানা তিন দিন ধরে কুমিল্লার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর মধ্যে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। এমনকি সকাল, দুপুর, বিকেল ছাড়াও মধ্যরাতেও হচ্ছে লোডশেডিং। অন্যান্য বছরের চেয়ে চলতি বছর গরমের তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে। ফলে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে মানুষ। এদিকে অতিরিক্ত তাপমাত্রা কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন মানুষ। বিশেষ করে শিশু, নারী এবং বৃদ্ধরা তীব্র গরমে সীমাহীন কষ্ট পাচ্ছেন।

শহরের তুলনায় গ্রামে দুর্ভোগ বেশি। কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার অনেক এলাকায় ৬-৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। রোজায় তীব্র গরমের সঙ্গে বিদ্যুতের ভোগান্তি জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে।

কুমিল্লা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ ইসমাইল ভূইয়া বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে টানা তিন ধরে সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৫ ডিগ্রি। বেলা বাড়ার সঙ্গে তাপমাত্রা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা মাত্র ২৭ থেকে ২৮ শতাংশ। এ কারণে বাতাসে জলীয়বাষ্প কমে যাওয়ায় তাপদাহ বেশি অনুভূত হচ্ছে। কুমিল্লা আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। আগামী ৩ দিনের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।

বোয়ালখালী : চৈত্রের কাঠফাঁটা গরমে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে চট্টগ্রাম। গেল শনিবার থেকে লোডশেডিং বেড়ে যায়। গত এক সপ্তাহ ধরে লোডশেডিংয়ে নাকাল জনজীবন। এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ঈদ মার্কেটেও প্রভাব পড়েছে। পিডিবি বলছে, অফপিক আওয়ারে লোডশেডিং নেই। পিক আওয়ারে ২২০ মেগাওয়াট করে লোডশেডিং করা হচ্ছে।

পিডিবির চট্টগ্রাম বিতরণ দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. কামাল উদ্দীন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। এজন্য লোডশেডিং হচ্ছে। এর মধ্যে শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রও বন্ধ। এসব কেন্দ্র পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ পেলেই কেবল চালু করা যাবে।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন্স) প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বলেন, জাতীয়ভাবে যা চাহিদা তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে যা ৯ এপ্রিল মধ্যে ঠিক করা হবে।

দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) : ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রোগীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। লোডশেডিংয়ের কারণে ঈদুল ফিতরের উপলক্ষে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বেচাকেনা ও অটোরিকশা চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ বিদ্যুৎ নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো। সম্প্রতি চার্জার ফ্যান কেনায় ইলেকট্রনিকস দোকানগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রেতারা।

ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২, সদর অফিস সূত্র জানায়, বর্তমানে দোহার ও নবাবগঞ্জে বিদ্যুতের চাহিদা ৬৫ মেগাওয়াটের বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৩০-৪০ মেগাওয়াট। চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ না পাওয়ায় লোডশেডিং দিচ্ছে। তবে ইফতার সাহরি ও তারাবি সময় লোডশেডিংয়ের আওতামুক্ত। উপজেলা দুটিতে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার।

সরেজমিনে দেখা যায়, দোহার ও নবাবগঞ্জের অধিকাংশ এলাকায় লোডশেডিংয়ের কারণে স্থানীয় এজেন্ট ব্যাংক, এনজিও অফিস, ফটোকপি ও সাইবার ক্যাফেগুলোর কার্যক্রম বন্ধ থাকছে। এতে স্থানীয়রা আর্থিক লেনদেনসহ অতি প্রয়োজনীয় কাজে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। কম্পিউটার ল্যাব বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ফটোকপি করতে পারছে না। এদিকে লোডশেডিং বৃদ্ধির কারণে ব্যাটারিচালিত ফ্যানের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। বাগমারা বাজারের ইলেকট্রিক পণ্য ব্যবসায়ী মো. হাসান বলেন, প্রচণ্ড গরমে মানুষ টিকতে পারছে না। ফলে ব্যাটারিচালিত চার্জার ফ্যানের বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : কমলগঞ্জে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। ইফতার, সাহরি ও তারাবির নামাজের সময়েও থাকছে না বিদ্যুৎ। এতে অতিষ্ঠ হচ্ছেন পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা। এ ছাড়া বিভিন্ন কলকারখানাসহ চা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে জানা গেছে, বর্তমানে উপজেলায় দিনে ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা। এর বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৭ মেগাওয়াট। আর রাতে ১৮ মেগাওয়াটের জায়গায় ৮ থেকে ১০ মেগাওয়াট পাওয়া যাচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি থাকার কারণে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে।

শমশেরনগরের ওয়াজিদ মিয়া বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ ঘনঘন চলে যাচ্ছে। ইফতার, সাহরি ও তারাবির নামাজের সময় বিদ্যুৎ থাকছে না।

মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনালের ডিজিএম মীর গোলাম ফারুক বলেন, ঈদের আগে এই সমস্যা সমাধান হবে না। আসলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যার কারণে লোডশেডিং হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close