জি এম মনিরুজ্জামান, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)

  ০৬ মে, ২০২৪

শ্যামনগরে চিংড়ি ঘেরে মড়ক, দিশাহারা চাষি

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে অতি তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে চিংড়ি ঘেরে মড়ক দেখা দিয়েছে। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন চিংড়ি চাষিরা। মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, পর্যাপ্ত পানির অভাব, অতিরিক্ত লবণাক্ততাসহ নানা কারণে ঘেরে বাগদা চিংড়ি মরে যাচ্ছে।

শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলার ১৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বাগদা ও ১১০ হেক্টর জমিতে গলদা চিংড়ির চাষ হয়। ছোট-বড় মিলিয়ে বাগদা চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা ১৬ হাজার ৩২৮টি ও গলদা চিংড়ির ঘের আছে ১ হাজার ৪১০টি।

উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের চুনার ব্রিজ এলাকার ঘের ব্যবসায়ী ইউপি সদস্য আবদুল গফুর ঢালী জানান, বছরের শুরুতে ঘেরে পোনা মাছ ছাড়া হয়েছিল। গত দুই সপ্তাহ আগে থেকে ঘেরে সেই মাছ মরে ভেসে উঠছে। আর যেসব এখনো মরেনি, সেগুলোর শরীরও দুর্বল। মাছ লালচে হয়ে যাচ্ছে। কৈখালী ইউনিয়নের নৈকাটি গ্রামের চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ী হাবিবুল্লাহ জানান, তিনি ৫০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকা ঋণ করেছেন। চলতি মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার আশা ছিল, সে মাছ পেলে ঋণ পরিশোধ হয়ে যেত। কিন্তু হঠাৎ মাছ মরার কারণে এখন পর্যন্ত ১ লাখ টাকারও মাছ বিক্রি হয়নি।

নূরনাগর ইউনিয়নের দুরমুজ খালি এলাকার চিংড়ি চাষি সাব্বির হোসেন জানান, ২০১২ সাল থেকে তিনি ঘের করছেন। এবারও ১০ বিঘা জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন। ঘেরে ৩৫ হাজার বাগদার পোনা ছেড়েছিলেন। এখন প্রতিটি ৭০ গ্রাম করে ওজন হয়েছে। কিন্তু তীব্র এ গরমে পানি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে আর মাছও মারা যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তার ঘেরে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে। তাছাড়া নিয়মিত পরিচর্যাও করা হয়। তবে রৌদের কারণে কোনো হিসাব নিকাশ মিলছে না।

একই এলাকার চিংড়ি চাষি হারুন অর রশিদ বলেন, তিনি এবার নিজের এবং অন্যের জমি ইজারা মিলিয়ে ১০০ বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করেছেন। প্রথম কোটায় অবমুক্ত করা বাগদা মাছ মরে গেছে। এতে তার তিন লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। তার এলাকার ঘেরগুলোতে পর্যাপ্ত পানি নেই বলে জানান তিনি। তার ওপর প্রচণ্ড খরতাপে পানি লালচে হয়ে উঠছে।

এছাড়াও কয়েকজন চিংড়ি চাষি জানান, কী কারণে মাছ মারা যাচ্ছে বা এর প্রতিকারে কী করা উচিত সে বিষয়ে কেউ পরামর্শ দেয়নি।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর শ্যামনগরে চিংড়ির উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার ৬৯৯ টন। তবে চলতি মৌসুমে চিংড়ি উৎপাদন গতবারের তুলনায় অনেক কম হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। চিংড়ির আড়তদাররা জানান, এবার মাছ মরে যাওয়ার কারণে মাছের উৎপাদন কম। এজন্য বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে এসেছে।

শ্যামনগর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার বলেন, এবার অতি তীব্র তাপপ্রবাহ, পর্যাপ্ত পানি না থাকা ও অতিরিক্ত লবণের কারণে বেশি মাছ মারা যাচ্ছে। এছাড়া হয়ত চাষিরা মৌসুমের শুরুতে ঘের প্রস্তুতকালে মাটির সঠিক পরিচর্যা করেনি। জমির ব্যাকটেরিয়া মারার জন্য যে পরিমাণ চুন ব্যবহার করার দরকার তাও ঠিকমতো করেনি। এমন অবস্থা থেকে রেহাই পেতে মৎস্য চাষিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মৌসুমের শুরুতে ঘের প্রস্তুত করার সময় ঘেরের মাটি কেটে গভীরতা বৃদ্ধি করা জরুরি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close