নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৬ মে, ২০২৪

ট্রেনে সময়সূচি বিপর্যয়

গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিণে কাজীবাড়ি এলাকায় গত শুক্রবার একটি তেলবাহী ট্রেনের সঙ্গে টাঙ্গাইল থেকে ছেড়ে আসা টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার পর শিডিউল বিপর্যয়ে পড়ে রেলওয়ে। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের আওতায় বর্তমানে ৬টি উদ্ধারকারী ট্রেন রয়েছে। এর মধ্যে অনেক দিনের পুরোনো একটির মেরামতকাজ চলছে। মাত্র ৫টি ট্রেন দিয়ে উদ্ধারকাজ চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে রেলওয়ে। উদ্ধারকাজে বিলম্বের কারণে ট্রেন চলাচলের শিডিউল এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। গতকাল রবিবারও কমলাপুর থেকে বিলম্বে ট্রেন ছাড়তে দেখা গেছে। গতকাল দুপুর ১টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দেখা যায়, ধূমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ৬টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি এখনো স্টেশনে এসে পৌঁছায়নি।

এদিকে বুড়িমারী এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৮টায় স্টেশন ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি এখনো ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষায় আছে। রংপুর এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল সকাল ৯টা ১০ মিনিটে। ট্রেনটি ছাড়ার সম্ভাব্য সময় দেওয়া হয়েছে সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে। রাজশাহী কমিউটার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি এখনো ছেড়ে যায়নি। এছাড়া মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি ছেড়ে যায়নি। বেশ কিছু ট্রেন বিলম্বে ছাড়ার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। অনেকে দীর্ঘসময় স্টেশনে অপেক্ষা করে বিরক্ত হচ্ছেন। সুমী আক্তার নামের এক যাত্রী বলেন, ‘সেই সকালে এসে স্টেশনে বসে আছি, এখনো ট্রেন ছাড়েনি। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। ট্রেন কখন ছাড়বে তারও কোনো ঠিক নেই’।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের আওতায় বর্তমানে ৬টি উদ্ধারকারী ট্রেন আছে। এর মধ্যে অনেক দিনের পুরোনো একটির মেরামতকাজ চলছে। মাত্র পাঁচটি ট্রেন দিয়ে উদ্ধারকাজ করতে হিমশিম খাচ্ছে রেলওয়ে। উদ্ধারকাজে বিলম্বের কারণে ট্রেন চলাচলের স্বাভাবিক সূচিও এলোমেলো হয়ে পড়ে। নতুন নতুন রেললাইন, স্টেশন নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যত আগ্রহ, উদ্ধারকারী ট্রেন কেনার ব্যাপারে রেলওয়ের কর্মকর্তাদের তত আগ্রহ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

কর্মকর্তাদের মতে, উদ্ধারকাজ দ্রুত করতে হলে আরো অন্তত তিনটি উদ্ধারকারী ট্রেন প্রয়োজন। বিশেষ করে কক্সবাজার রেললাইন চালু হওয়ায় উদ্ধারকারী ট্রেনের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। পুরোনো ট্রেনগুলো দিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সময় বেশি লাগছে। আবার পৌঁছালেও লাইনচ্যুত বগি উদ্ধারে বেগ পেতে হয়। অনেক সময় ২ ঘণ্টার কাজ করতে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা লেগে যায়। ট্রেন পরিচালনার সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে দুটি অঞ্চলে বিভক্ত। একটি অঞ্চল যমুনা নদীর পূর্ব পাশে, যা পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে (ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট-ময়মনসিংহ বিভাগ) হিসেবে পরিচিত। আর যমুনা নদীর পশ্চিম পাশ নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে গঠিত (রাজশাহী-রংপুর-খুলনা বিভাগ)।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের আওতায় ছয়টি উদ্ধারকারী ট্রেন আছে। এগুলোর অবস্থান ঢাকা, চট্টগ্রাম, আখাউড়া, লাকসাম, ময়মনসিংহের কেওয়াটখালী ও কুলাউড়ায়। এর মধ্যে চট্টগ্রামে থাকা উদ্ধারকারী ট্রেনটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় আছে। মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করার চেষ্টা চলছে। এর পরিবর্তে কুলাউড়ার ট্রেনটি চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে এনে রাখা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের উদ্ধারকারী ট্রেনটি ৫০ বছরের বেশি পুরোনো। এ ট্রেনটির সক্ষমতা ২০ টনের। পুরোনো হওয়ায় ১০ থেকে ১২ টনের বেশি ভার উত্তোলন করতে পারে না। আবার এ ট্রেনের গতি ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার। এটি মেরামত করা হচ্ছে।

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পূর্বাঞ্চলে রেলপথের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৫০৩ কিলোমিটার। প্রতিদিন গড়ে ৫৪টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। মেইল, এক্সপ্রেস ও কমিউটার ট্রেন আছে ৭০টি। পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করে প্রতিদিন গড়ে ৮টি। গত ১ ডিসেম্বর থেকে ৩ মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে অন্তত ৩৫টি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ৭টি করে দুর্ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার গাজীপুরের জয়দেবপুরে দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, দুর্ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। গাজীপুরের দুর্ঘটনার কারণে উত্তরাঞ্চলের কিছু ট্রেন বিলম্বে ছাড়ছে। তবে শুধু রংপুর এক্সপ্রেসের শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। আশা করছি সোমবার থেকে সব ঠিক হয়ে যাবে।

উল্লেখ, গাজীপুরের জয়দেবপুর স্টেশনের আউটার সিগন্যালের কাছে কাজীবাড়ি এলাকায় গত শুক্রবার একটি তেলবাহী ট্রেন ও একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন আহত হয়। এ সময় উভয় ট্রেনের ২ ইঞ্জিন এবং ১০টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-রাজশাহী রেল রুটের ট্রেন চলাচল ২ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার আবু হানিফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শুক্রবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিণে কাজী বাড়ি নামক স্থানে একটি তেলবাহী ট্রেনের সঙ্গে টাঙ্গাইল থেকে ছেড়ে আসা টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ট্রেনের লোকো মাস্টার বা চালকসহ চারজন আহত হয়। সিগন্যাল ম্যানের ভুলের কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close