জাহিদুল হাসান, জবি

  ০৬ মে, ২০২৪

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

রক্তরাঙা কৃষ্ণচূড়ায় সেজেছে ক্যাম্পাস

প্রকৃতিতে এখন গ্রীষ্মকাল। টানা তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। তবে মন জুড়াতে এ সময় ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া। উত্তপ্ত গ্রীষ্মে ডানা মেলা রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া নীরবে সৌন্দর্য বিলাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করলেই দেখা মিলছে ফুলভর্তি কৃষ্ণচূড়াগাছের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বর থেকে শুরু বিজ্ঞান অনুষদের সামনে রক্তিম লাল হয়ে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এর ফলে জবি ক্যাম্পাস এখন কৃষ্ণচূড়ার রঙে রঙিন এক ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে।

কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে। ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে। যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণচূড়া শুধু দক্ষিণ ফ্লোরিডা, দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্লোরিডা, টেক্সাসের রিও গ্রান্ড উপত্যকায় পাওয়া যায়।

কৃষ্ণচূড়া এ দেশে এসে পরিচিত হয়েছে নতুন নামে। অনেকেই মনে করেন, রাধা ও কৃষ্ণের নাম মিলিয়ে এই ফুলের নাম হয়েছে কৃষ্ণচূড়া। এর সবচেয়ে বড় খ্যাতি হচ্ছে মোহনীয় রক্তিম আভা। সবুজের বুক চিরে বের হয়ে আসা লাল ফুল এতটাই মোহনীয় যে, পথচারীরাও থমকে দাঁড়াতে বাধ্য হন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শান্ত চত্বরের পাশেই রফিক ভবনের সামনের কৃষ্ণচূড়াগাছগুলোয় প্রচুর ফুল ফুটেছে। সেইসঙ্গে বিজ্ঞান অনুষদ এবং কলা অনুষদের চারপাশে লালচে ছোঁয়া। কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুলের ভিড়ে গাছের সবুজ পাতারা যেন হারিয়ে গেছে। নানা ভঙ্গিমায় শিক্ষার্থীরা কৃষ্ণচূড়াগাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, বসে আড্ডা দিচ্ছেন। আবার কিছু কিছু শিক্ষার্থী গাছের নিচে পড়ে থাকা ফুলের পাপড়িও কুড়াচ্ছেন।

প্রকৃতিকে রক্তিমতায় মাতিয়ে রাখা এই বৃক্ষের উচ্চতা তেমন একটা বেশি হয় না। সর্বোচ্চ ১২ মিটার পর্যন্ত ওপরে উঠলেও তার শাখা-প্রশাখা বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত থাকে। শোভা বর্ধনকারী কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষটি দেশের গ্রামবাংলার পাশাপাশি এখনো তার নড়বড়ে অস্তিত্ব নিয়ে কোনোক্রমে টিকে আছে শহরের পথে-প্রান্তরে। গ্রীষ্ম জুড়ে প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখলেও অন্য সময়ে এ বৃক্ষের উপস্থিতি খুব একটা চোখে পড়ে না। অনেকটা আড়ালেই থেকে যায় বাকিটা সময়।

কৃষ্ণচূড়া ফুল নিয়ে জবি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বায়েজিদ হোসাইন বলেন, কৃষ্ণচূড়ার লাল, হলুদ ফুল এবং উজ্জ্বল সবুজ পাতা- এ যেন এক অন্যরকম দৃষ্টিনন্দন। এই ফুলের উজ্জ্বল লাল রং শিক্ষার্থীদের মনে আনন্দ ও উদ্দীপনা এবং ক্যাম্পাসকে দেয় এক নতুন সাজ। ক্যাম্পাস জুড়ে কৃষ্ণচূড়া যে রং ছড়িয়েছে, তা চোখে না দেখলে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

কৃষ্ণচূড়ার অনিন্দ্য সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে রসায়ন বিভাগের অমৃত রায় বলেন, কৃষ্ণচূড়ার রঙে রাঙানো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপধারা শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ পুরান ঢাকার মানুষের কাছে মনোরম পরিবেশের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। গ্রীষ্মের প্রখর রোদে লাল বর্ণের কৃষ্ণচূড়া যেন তার রাজত্ব মেলে ধরেছে জবির প্রান্তরে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বর, বিজ্ঞান অনুষদ, কলা অনুষদ এমনকি প্রশাসনিক ভবনের ধার ঘেঁষে কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো যেন ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যের অনন্য বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ও এর সৌন্দর্য বর্ণনায় অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রকৃতিতে গ্রীষ্মের আগমনের সঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে জনজীবন। এই দুর্বিষহ গরমের দিনে জবি ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো ক্যাম্পাসে ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোয় ছড়িয়ে দিয়েছে প্রাণের সঞ্চার। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষদ ও চত্বরগুলোয় কৃষ্ণচূড়ার সরব উপস্থিতিতে ক্যাম্পাস যেন পরিণত হয়েছে এক টুকরো কৃষ্ণচূড়ার স্বর্গরাজ্যে। কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম সৌন্দর্যে মুগ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আল মাহমুদ বলেন, ঈদের ছুটির পরপরই আবার তীব্র তাপপ্রবাহে দুই সপ্তাহের ছুটিতে যায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এবার দীর্ঘ ছুটি শেষে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে যেন এক অপরুপ সাজে সেজেছে কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো, শান্ত চত্বর থেকে শুরু করে বিজ্ঞান অনুষদ পর্যন্ত থোকায় থোকায় কৃষ্ণচূড়া মনমাতানো রং আর সৌরভ দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের ভিড়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেই দূর থেকে চোখে পড়ছে এই সবুজের বুকে লাল কৃষ্ণচূড়া পুষ্পরাজি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close