নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০২ এপ্রিল, ২০২৪

গরু-মুরগির চাহিদা বেশি ইচ্ছামতো দুধ-ডিম

প্রথম রোজা থেকে রাজধানীর ২৫টি স্থানে পিকআপ কুলভ্যানে এবং ৫টি স্থায়ী বাজারে বিক্রি হচ্ছে দুধ, ডিম, চার ধরনের মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস এবং ড্রেসড ব্রয়লার মুরগির মাংস। বাজারের চেয়ে কম মূল্যে এসব পণ্য বিক্রি করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে রমজান মাসে ভোক্তাদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে এসব ভোগ্যপণ্য তুলনামূলক কম দামে বিক্রির উদ্যোগ নেয় সরকার। শুরু থেকেই এই কার্যক্রমে সাধারণ মানুষের লক্ষণীয় উপস্থিতি চোখে পড়েছে। প্রতিদিনই শতাধিক মানুষ সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে এসব পণ্য কিনে নিচ্ছেন। গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগির চাহিদা বেশি। ক্রেতারা দুধ ও ডিম নিচ্ছেন ইচ্ছামতো।

শুরু থেকে দুধ, ডিম, চার ধরনের মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস এবং ড্রেসড ব্রয়লার মুরগির মাংস বিক্রি করা হচ্ছিল। তবে গতকাল সোমবার খামারবাড়ি মোড়ে সকাল থেকে অবস্থান করে দেখা যায়, মাংসের ভ্যান থাকলেও মাছ বিক্রির কোনো ট্রাক নেই। আশপাশের স্থানীয় দোকানিদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ৪৫ দিন ধরে তারা মাছ বিক্রির ট্রাক দেখতে পাচ্ছেন না।

এদিকে সকাল থেকেই দুধ, ডিম, গরুর মাংস, খাসির মাংস এবং ব্রয়লার মুরগির মাংসের পিকআপ কুলভ্যানের সামনে মানুষের দীর্ঘ লাইন। এ সময় বেশিরভাগ ভাগ ক্রেতাকে দেখা যায় গরু ও মুরগির মাংস নিতে। এছাড়া ডিম ও দুধেও রয়েছে মানুষের আগ্রহ। এদিকে তুলনামূলকভাবে খাসির মাংসে মানুষের আগ্রহ ছিল কম।

গতকাল সোমবার বিক্রির জন্য গরুর মাংস ১৮০ কেজি, খাসির মাংস ২০ কেজি, মুরগির মাংস ১২০ কেজি, দুধ ৪০০ লিটার ও ডিম ৪ হাজার পিস আনা হয় বলে জানান কর্মরত ক্যাশিয়ার মোকাদ্দাস ইসলাম। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিক্রি শুরু করলে দুপুর ১টায় গরু ও মুরগির মাংস শেষ হয়ে যায়। দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ডিম, দুধ ও খাসির মাংস ছিল। মাংস সব ক্রেতার কাছে নির্ধারিত এক কেজি করে বিক্রি করা হলেও ডিম ও দুধ দেওয়া হচ্ছিল যে যতটুকু চায় সে অনুযায়ী। সকাল সাড়ে ১০টায় লাইনে দাঁড়িয়ে ১২টার কাছাকাছি সময়ে ১ কেজি করে গরু ও খাসির মাংস আর ১ ডজন ডিম কিনতে পেরে ষাটোর্ধ্ব নূর হোসেন বলেন, সরকার কম দামে মাংস, ডিম, দুধ দিচ্ছে। এটায় আমাদের অনেক উপকার হচ্ছে। কিন্তু রোজা রেখে এই রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়াতে খুব কষ্ট হয়। কোনো ছায়াঘেরা জায়গায় লাইনে দাঁড়াতে পারলে সমস্যা হতো না। সুলভ মূল্যের এসব পণ্য কিনতে আসা আরেক ক্রেতা তারেক বলেন, এখন তো একজন স্লিপ দিচ্ছে, এটা যদি দুজন করত তাহলে আমাদের কাজ আরো দ্রুত হতো। আবার তারাও দ্রুত কাজ শেষ করতে পারত। রোদের মধ্যে কষ্ট কম হতো। মো. শাহজাহানের বাসা শংকরে, মেয়েকে নিয়ে ফার্মগেটে কোচিং করে যাওয়ার পথে খামারবাড়ি মোড় থেকে সুলভ মূল্যের পণ্য কিনে নেন প্রায় সময়। তিনি বলেন, আজ এক লিটার দুধ আর এক কেজি মুরগির মাংস নিয়েছি। এর আগে এক দিন গরুর মাংস নিয়েছিলাম কম দামে। এই পণ্যগুলো দেওয়া খুবই ভালো উদ্যোগ। বাজারে এর একটা প্রভাব পড়েছে। মানুষ কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও উপকৃত হচ্ছে। সুলভ মূল্যের পণ্য কিনতে আসা হাসিব বলেন, সকাল সাড়ে ৯টায় লাইনে এসে দাঁড়িয়েছি। তাদের আসার কথা সকাল ১০টায় কিন্তু তারা আসে সাড়ে ১০টার দিকে।

খামারবাড়ির বিদ্যুৎ অফিসে চাকরি করেন রেনু বালা। তার সহকর্মীর কাছে থেকে কম দামে পণ্যের কথা শুনে তিনিও আজ প্রথমবারের মতো লাইনে এসে দাঁড়ান সকাল সাড়ে ১০টায়। ১ কেজি মুরগির মাংস, ১ লিটার দুধ ও ২ ডজন ডিম নিতে পারেন তিনি। দুপুর ১২টার সময় কম দামে এসব পণ্য নেওয়ায় তিনি খুশি। তবে তার ভাষ্য, অনেক সময় লস হয়ে গেছে। অফিস মিস দিয়ে চলে এসেছি দেরি হয়ে গেছে। সবাই যখন কয়েক ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে নির্দিষ্ট পণ্য কিনে নিচ্ছিলেন তখন কৃষি অধিদপ্তরে চাকরি করা মো. শরিফুল ইসলাম এসে আধা ঘণ্টার মধ্যেই ১০ লিটার দুধ আর ৪ ডজন ডিম কিনে নিয়ে যান। এত পরিমাণ আপনি কীভাবে নিলেন জানতে চাইলে তিনি এক কথায় বলেন, আমাকে দিছে আমি নিছি। একই সময় আরেক মহিলা ক্রেতাকে একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ২০ লিটার দুধ নিতে দেখা যায়। কীভাবে এত দুধ কিনলেন জানতে চাইলেই তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং দ্রুত একটি রিকশায় পণ্য বোঝাই বস্তা উঠিয়ে চলে যান। এই ব্যাপারে কর্মরত ক্যাশিয়ার মোকাদ্দাস ইসলামকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমরা যখন এই কার্যক্রম শুরু করেছিলাম তখন নিয়ম ছিল যেকোনো মাংস ১ কেজি করে নিতে পারবে আর ১ ডজন ডিম ও ২ লিটার দুধ নিতে পারবে। কিন্তু এখন আমাদের দুধ ও ডিম পর্যাপ্ত থাকায় আমরা এটা বেশি পরিমাণে দিতে পারি। কিন্তু মাংস আমরা ১ কেজির বেশি কাউকে দেই না। তিনি আরো বলেন, আমাদের মাংস শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু দুধ ও ডিম এখনো রয়ে গেছে। এগুলো তো পচনশীল, রাখা যায় না বেশি দিন, তাই বেশি বেশি বিক্রি করে শেষ করে দেই। সবারই অভিযোগ- রোদের মধ্যে দাঁড়াতে হয়, ছায়ায় কেন ট্রাক দাঁড়া করানো হয় না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছায়াঘেরা কোনো জায়গা নেই এখানে। আর যেখানে ছায়া আছে সেখানে গাড়ির চলাচল বেশি, সেখানে দাঁড়ানো সম্ভব না। এই কর্মকর্তার কাছে মাছের ট্রাকের তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাছ ১৫ রোজা পর্যন্ত বিক্রির কথা ছিল তাই এখন বিক্রি বন্ধ আছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close