কক্সবাজার প্রতিনিধি

  ০১ এপ্রিল, ২০২৪

অপহৃত ছোয়াদকে উদ্ধার, হোতাসহ গ্রেপ্তার ১৭

ছোয়াদ নামের শিশুকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের মতলব নিয়েই প্রবাসীর বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ নেয় রোহিঙ্গা নারী উম্মে সালমা। এরপর কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে অপহরণ করা হয় ৬ বছরের শিশু ছোয়াদ বিন আবদুল্লাহকে। ২২ দিনের মাথায় গত শনিবার কুমিল্লার লালমাই এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। গতকাল রবিবার শিশুটি ফিরেছে তার মায়ের কাছে। একই ঘটনায় গত ২২ দিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৭ জনকে। এদের মধ্যে অপহরণকারী দলের হোতা আনোয়ার সাদেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল রবিবার টেকনাফ থানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অপহরণের বর্ণনা দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) মোহাম্মদ রাসেল ও টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি।

অপহৃত শিশু ছোয়াদ বিন আবদুাহ টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের সৌদি প্রবাসী মোহাম্মদ আবদুল্লাহর ছেলে। সে পূর্ব পানখালী এলাকার আবু হুরাইরা (রা.) মাদরাসার প্রথম শ্রেণির ছাত্র। সংবাদ সম্মেলনে শিশুর মা নুরজাহান বেগম উপস্থিত ছিলেন।

এ অপহরণের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৭ জন হলেন টেকনাফের মোচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আনোয়ার সাদেক, ছেলে নাগু ডাকাত, লায়লা বেগম, উম্মে সালমা, মোহাম্মদ হাশেম, খাতিজাতুল খোবরা, আয়েশা বেগম, হোসনে আরা, মো. রনি, নাসির আলম, সালামত উল্লাহ প্রকাশ সোনাইয়া, জহির আহমেদ, হাসমুল করিম তোহা, মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ, ফরিদুল আলম খান, মো. আমির হোসেন ও তৌহিদুল ইসলাম তোহা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল জানান, আনোয়ার সাদেক এই অপহরণ চক্রের প্রধান। তার পরিকল্পনায় উম্মে সালমা টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের সৌদি প্রবাসী মোহাম্মদ আবদুল্লাহর বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নিয়েছিল। যেখানে কিছু দিন কাজ করার পর ছেলে ছোয়াদ বিন আবদুল্লাহর সঙ্গে সখ্য তৈরি করে। এর কিছু দিন পর উম্মে সালমা চলে গিয়ে অপহরণের ষড়যন্ত্র করে। গত ৯ মার্চ অপহরণ করা হয় শিশু ছোয়াদ বিন আবদুল্লাহকে। ওইদিন দুপুরে ক্লাস শেষে মাদরাসা থেকে ফেরার পথে ছোয়াদকে দুর্ঘটনায় মায়ের মাথা ফেটে গেছে এবং হাসপাতালে মাকে দেখতে যাওয়ার কথা বলে ছোয়াদকে অটোরিকশায় তুলে অপহরণ করেন উম্মে সালমা। ওইদিন সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী শিশুর মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে এ ঘটনায় থানায় এজাহার দায়ের করেন।

পুলিশ ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রাখে। ১০ মার্চ সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে অটোরিকশাসহ চালক নাসির উদ্দিনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। অটোরিকশা চালকের স্বীকারোক্তি মতে গত ১২ মার্চ টেকনাফ উপজেলার মোচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের উম্মে সালমাসহ আরো ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এই পাঁচজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়েই অপহরণকারী পুরো চক্রটিকে শনাক্ত করা হয়ে ছিল বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ রাসেল। ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি জানান, এরপর থেকে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রাখে। অভিযানে এক-একজনকে গ্রেপ্তারের পর আরো তথ্য আসতে শুরু করে। এভাবে এদের আটক করা হয়।

ওসি জানান, টেকনাফ থেকে অপহরণের পর শিশুটিকে ঈদগা এলাকায় রাখা হয়। ওখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ার গহিন পাহাড়ে। যেখানে পুলিশ অভিযান টের পেয়ে শিশুটি নিয়ে যাওয়া হয় কুমিল্লার লালমাই এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। এর মধ্যে মুক্তিপণের ৪ লাখ টাকা প্রদানের কৌশলে গত শনিবার দুপুরে কুমিল্লার লালমাই এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় মুক্তিপণের ৪ লাখ টাকা ফেরত আনা ছাড়াও অপহরণে ব্যবহৃত সিএনজি ও ৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার রয়েছে। তিনি বলেন, আনোয়ার সাদেক, শাহীন, তোহা, নাগু ডাকাত, মধু, হোসনে আরা এবং তাদের পরিবারের সদ্যস্যরা অপহরণ চক্রের সক্রিয় সদস্য। এই অপহরণের ঘটনায় জড়িত অপহরণ চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আটক করতে অভিযান চলছে। গ্রেপ্তার আসামিদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ২২ দিন পর শিশুকে ফেরত পেয়ে অপহৃত শিশুর মা নুরজাহান বেগম সন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, অপহরণ যেকোনোভাবেই বন্ধ হওয়া জরুরি। তিনি পুলিশকে ধন্যবাদ জানান।

পুলিশের তথ্য, গত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১৭ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। অপহরণের পরিবারের তথ্য বলছে, অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫১ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়ানো হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close