নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৫ মে, ২০২৪

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

মাশরুম চাষে দিনবদল

প্রত্যেকে গড়ে প্রতিদিন ২৫ গ্রাম করে মাশরুম খেলেও বছরে প্রয়োজন ১৫ লাখ ৫১ হাজার ২৫০ টন

শুনতে অবাক লাগলেও বিশ্বে ভক্ষণযোগ্য পুষ্টিকর খাবার হিসেবে জনপ্রিয় ছত্রাক মাশরুম। বাংলাদেশে প্রচারবিমুখতা ও উপকারিতা তুলে ধরার অভাবে ঔষধিগুণসম্পন্ন এ সবজি চাষ ব্যাপকভাবে ছড়াতে পারেনি। মানুষ মুখরোচক খাবার হিসেবে মাশরুম গ্রহণ করে আসছেন। বর্তমানে মাশরুমের চাহিদা বেড়ছে। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে নিরাপদ সবজি মাশরুম চাষে ভাগ্য বদলের সুযোগ তৈরি করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

বাংলাদেশে মাশরুম উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাসকরণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তথ্য বলছে, মাশরুমে প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলের পরিমাণ খুব বেশি। অন্যদিকে চর্বির পরিমাণ খুব কম, নেই বললেই চলে। মাশরুমের প্রোটিন হলো অত্যন্ত উন্নত, সম্পূর্ণ এবং নির্দোষ। মানবদেহের অত্যাবশ্যকীয় ৯টি অ্যামাইনো অ্যাসিডের সবই মাশরুমে আছে। প্রাণিজ আমিষ; যেমন মাংস ও ডিমের আমিষ উন্নত এবং সম্পূর্ণ হলেও তার সঙ্গে সম্পৃক্ত চর্বি থাকায় দেহে কোলেস্টেরল সমস্যা দেখা দেয়। ফলে উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, মেদভুঁড়ি ইত্যাদি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুষ্টিগুণ বিবেচনায় খাদ্যাভ্যাসে মাশরুম যুক্ত করে প্রত্যেকে গড়ে প্রতিদিন ২৫ গ্রাম করে মাশরুম খেলেও বছরে ১৫ লাখ ৫১ হাজার ২৫০ টন মাশরুম প্রয়োজন হবে। আর ১০ শতাংশ মানুষও যদি মাশরুম খান, তাহলে প্রতিদিন ৪৫০ টন মাশরুম প্রয়োজন হবে। বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রমাণ হয়েছে, শুধু টিউমার, উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিক রোগী যদি নিয়মিত ৫০ গ্রাম করে মাশরুম খান, তাহলেও বিপুল পরিমাণ মাশরুম প্রয়োজন হবে।

পুষ্টিবিদদের তথ্যানুযায়ী, মাশরুমের প্রোটিন নির্দোষ। চর্বি ও কার্বোহাইড্রেটের নিম্ন উপস্থিতি এবং কোলেস্টেরল ভাঙার উপাদান লোভাস্টাটিন, অ্যান্টাডেনিন, ইরিটাডেনিন ও নায়াসিন থাকায় শরীরে কোলেস্টরল জমার ভয় থাকে না। এ কারণে প্রোটিনের অন্যসব উৎসের তুলনায় মাশরুমের প্রোটিন উৎকৃষ্ট ও নির্দোষ।

নিয়মিত খেলে মাশরুম ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে; ক্যানসার, জন্ডিস ইত্যাদি প্রতিরোধ করে; হৃদরোগ, টিউমার, যৌন অক্ষমতা, রক্তস্বল্পতা ও মেদভুঁড়ি ইত্যাদি প্রতিরোধ ও নিরাময় করে; হাড় ও দাঁত শক্ত করে এবং চুল পাকা ও চুলপড়া রোধ করে। ঢাকার সাভারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট ও ৩৪টি মাশরুম উপকেন্দ্র বা হর্টিকালচার সেন্টার এবং দেশের ৬৪টি জেলার ১৬০টি উপজেলা ও ১৫টি মেট্রোপলিটন থানায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২৭ সাল পর্যন্ত ‘মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে উদ্যোক্তা তৈরি; মাশরুমপল্লি স্থাপন; গবেষণা কার্যক্রম যেমন জার্মপ্লাজম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, প্রযুক্তি উদ্ভাবন; স্পন ও মাশরুম উৎপাদন প্রদর্শনী স্থাপন; ছাদ প্রদর্শনী স্থাপন প্রভৃতি। এছাড়া সাধারণের খাবার টেবিলে মাশরুম পৌঁছে দিতে প্রকল্পের প্রচার কার্যক্রম।

অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মাশরুম উৎপাদন বৃদ্ধির নিমিত্তে বিশ্বের জনপ্রিয় বিভিন্ন ধরনের মাশরুমের (যেমন বাটন, ইরিনজি, ব্ল্যাক, চেজনাট, বিপিও ইত্যাদি) এরই মধ্যে ৮টি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব জার্মপ্লাজমের বাংলাদেশে চাষ উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে এরই মধ্যে অনেকে চাষ শুরু করেছে; যেমন গাজীপুরে ভূঁইয়া মাশরুম ও রাঙামাটিতে সুমেধ চাকমা।

স্থানীয় জনগণের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে এবং মাশরুমের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে স্পন ও মাশরুম উৎপাদন প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় ১৮০ উদ্যোক্তা এবং এর আওতায় ৩০ জন করে দলভুক্ত চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। উদ্যোক্তার ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে- যাতে উদ্যোক্তাকে প্রতিনিয়ত সমর্থন দিতে পারেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close